বন্যায় এখন পর্যন্ত মৃত ২৫১ আর্থিক ক্ষতি ৬ হাজার কোটি টাকা

চলতি মৌসুমে বন্যার শুরুটা ২৬শে জুন। এরপর ১০ই জুলাই দ্বিতীয় দফা, ১৯শে জুলাই তৃতীয় দফা এবং ১৮ই আগস্ট উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হয়।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

এ বছর বন্যা আর প্লাবনে সারাদেশ মারা গেছে ২৫১ জন। এদের বেশীর ভাগেরই প্রাণ গেছে পানিতে ডুবে। এরপরেই রয়েছে সাপের কামড়ে। আর অন্যদের মৃত্যু হয়েছে বন্যাজনিত নানা রোগশোকে। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে মৃতের সংখ্যা ৪২ জন। এদের মধ্যে দুজনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। বাকিরা সবাই শিশু এবং তাদের একজন প্রতিবন্ধী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে করা ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যাজনিত মৃত্যুর’ হালনাগাদ তথ্য বলছে, গেল ৩০শে জুন থেকে ২৭শে অগাস্ট পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় পানিতে ডুবে ২১০ জন, বজ্রপাতে ১৩ জন, সাপের দংশনে ২৫ জন, ডায়রিয়ায় ১ জন এবং আঘাতে ২ জনের মৃত্যু নথিভুক্ত করা গেছে।

এবছর দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে বন্যায় পড়েছে ৩৩টি জেলা। এসব জেলায় ৫৭,৩০১ জন মানুষ  ডায়রিয়া, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, শ্বাসনালীর প্রদাহসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে শুধু ডায়রিয়াতেই আক্রান্ত হয়েছে ২৫ হাজারেরও বেশী মানুষ।

এদিকে স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এই দুই অধিদপ্তরের মধ্যে মৃতের সংখ্যার তারতম্য প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক বলেন, “সংখ্যা নিয়ে ভুল বোঝাবিুঝি রয়েছে। বন্যার পানিতে মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের মাঠ পযায়ের কর্মকর্তারা যে তথ্য পাঠাচ্ছেন এটাই সঠিক। এখানে বন্যার পানিতে ডুবে বা ভেসে গিয়ে মৃত্যু হলে তাদের নাম-ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাঠাতে হয়। বন্যা আক্রান্ত এলাকার বাইরে বা ভ্রমণে গিয়ে নৌকা ডুবি বা অন্যভাবে দুর্ঘটনার তথ্য এখানে যুক্ত করা হয় না।”

এবারে বন্যায় আড়াইশ’র বেশী মানুষ মারা গেলেও সম্পদের ক্ষতিও কম হয়নি। সরকারি তথ্য বলছে,  এবার দেশে  বন্যা হয়েছে চার দফায়। এতে কৃষিসহ  অন্যান্যা খাতে ক্ষতির আর্থিক পরিমান ৫ হাজার ৯৭২ কোটি ৭৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৬ কোটি টাকা। ক্ষতির এই  পরিমাণ ১৯৯৮ সালের বন্যার চেয়ে কম বলে দাবি করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

একনজরে বন্যায় ক্ষতি

মৃত্যু: ৪২ জন

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ: ৪৩,১৪,৭৯৩ জন

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার: ১৩৪৩১২১টি

ক্ষতিগ্রস্ত ঘর: ৭৩৭৮২২টি

ক্ষতিগ্রস্ত বীজতলা: ২১১৬২৭ হেক্টর

ক্ষতিগ্রস্ত হ্যাচারি: ৮৫২১ হেক্টর

ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ লাইন: ৪৬৩ কিলোমিটার

ক্ষতিগ্রস্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ৩৩০৬টি

ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক: ৩৪৮০০ কিলোমিটার (সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯৯ কিলোমিটার)

ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ-কালভার্ট: ১৯৪৯ (সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৩৪টি)

ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ: ৫০৫ কিলোমিটার (সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৩৭ কিলোমিটার)

ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: ৮৩৪৫৭টি (সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ৫১টি)

ক্ষতিগ্রস্ত নলকূপ: ৭২১৮৮টি

ক্ষতিগ্রস্ত জলাধার: ৩৭৭০৯টি

১৯৯৮ সালে দেশের অর্ধেক এলাকা প্লাবিত হয় জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, এবার ৩০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বন্যা স্থায়ী হয়ে প্রায় দেড়মাস। তাতে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, শস্যখেত, বীজতলা, মৎস্য খামার, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সড়ক, ব্রিজ, বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতি অনুযায়ী পুনর্বাসন পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

চলতি মৌসুমে বন্যার শুরুটা ২৬শে জুন। এরপর ১০ই জুলাই দ্বিতীয় দফা, ১৯শে জুলাই তৃতীয় দফা এবং ১৮ই আগস্ট উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন