প্রশাসনের দায়সারা তদারকিতেই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম

প্রশাসন দায়সারা গোছের দু’একটি অভিযান পরিচালনা করেই ক্ষান্ত এবং সরকারকে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। প্রকৃত অর্থে এই ধারাবাহিকতাবিহীন খন্ডকালীন অভিযান বাজারে কোন প্রভাব ফেলার পরিবর্তে বাজারকে আরও উসকে দিচ্ছে।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

করোনাকালে রাজধানীসহ সারাদেশে নিত্যপন্যের বাড়তি দামে দিশেহারা মানুষে। কোন পন্যের দামেরই লাগাম টানা যাচ্ছে না। আর এজন্য সরকার ও প্রশাসনের দায়সারা তদারকিকেই দায়ী করছে ভোক্তা অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)- চট্টগ্রাম নেতারা বলছেন, প্রশাসনের দায়সারা তদারকির কারনে ব্যবসায়ীরা বারবার বিনা কারনে খাদ্য-পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জনগনের পকেট কাটছে। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি ও চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য-পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহের কথা বলা হলেও বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, স্বর্ণজাতের চাল বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা। যা এক মাস আগে ছিলো ৪৪-৪৫ টাকা। পাইজাম চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫৪ টাকা। যা এক মাস আগে ছিলো ৪৪-৫১ টাকা। মিনিকেট ও নাজিরশাইল মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৫৪-৬৪ টাকা। যা এক মাস আগে ছিলো ৫০-৬০ টাকা। একটু ভালো মানের নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৬২ টাকা।

মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি প্যাকেটজাত আটায় ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৩৩-৩৮। প্যাকেটজাত ময়দায় কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৪৪-৪৮ টাকা কেজি। বোতলজাত প্রতিলিটার সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। যা এক মাস আগে ছিলো ১০৫ টাকা। খোলা সয়াবিন লিটারে ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৮২-৮৬ টাকা। লিটারে ৫ টাকা বেড়ে পাম অয়েল (খোলা) বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৩ টাকা।

পেঁয়াজ (আমদানি) বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা। যা এক মাস আগে ছিলো ২৫-৩০ টাকা। চিনি বিক্রি হয়েছে ৫৮ টাকা। যা এক মাস আগে ছিলো ৫৫ টাকা। আলু বিক্রি হয়েছে ৩৪-৩৬ টাকা। যা এক মাস আগে ছিলো ৩০-৩৪ টাকা। হলুদ মাসের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৭০-২২০ টাকা। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে দেশি আদা বিক্রি হয়েছে ১২০-১৫০ টাকা। মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি জিরা সর্বোচ্চ ৪০ টাকা বেড়ে মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৩৪০-৪১০ টাকা।

প্রতি কেজি মুগডাল ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১১০-১৩০ টাকা। আর মসুরের ডালের দাম কমলেও এখনও চড়া মূল্যে ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দারুচিনি ২০ টাকা বেড়ে মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৩৮০-৪৮০ টাকা। এলাচ কেজি ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৫০০ টাকা।

ফার্মের ডিম প্রতি হালি বিক্রি হয়েছে ৩৫-৩৭ টাকা। যা এক মাস আগে ছিলো ৩৪-৩৫ টাকা। মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৪৫০-৫০০ টাকা। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা। আর কেজিতে মাসের ব্যবধানে ১০০ টাকা বেড়ে খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা। আর যে কোন সবজি ও তরকারি ৮০ থেকে ১০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ওএমএস ও টিসিবির মাধ্যমে খাদ্যপণ্য বিক্রির পরিসর বাড়ানো এবং প্রশাসনের সমন্বিত বাজার তদারকি জোরালোর করার দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম।

২৮শে আগস্ট ২০২০ গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান উপরোক্ত দাবি জানান।

বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন ইতিপূর্বে চাল, ডাল, পেয়াঁজসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হলে বানিজ্য মন্ত্রনালয়, জেলা প্রশাসন ঐ সেক্টরের ব্যবসায়ী, ভোক্তা ও সরকারের সংস্লিষ্ঠ দপ্তরকে নিয়ে পরামর্শ সভা আযোজন করে করনীয় নির্ধারন করতেন। এখন সে ধারা চলমান নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণ এখন পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের হাতে।

প্রশাসন দায়সারা গোছের দু’একটি অভিযান পরিচালনা করেই ক্ষান্ত এবং সরকারকে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। প্রকৃত অর্থে এই ধারাবাহিকতাবিহীন খন্ডকালীন অভিযান বাজারে কোন প্রভাব ফেলার পরিবর্তে বাজারকে আরও উসকে দিচ্ছে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, চালের দাম বাড়লে খাদ্য বিভাগ খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস), ট্রাক সেল, টিসিবি ডিলার ও ট্রাক সেলের মাধ্যমে খাদ্য-ভোগ্যপণ্যের বিক্রি জোরদার করে থাকেন। কিন্তু বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই সে কর্মকান্ড অনেকটাই স্থবির।

ফলে সাধারন ও শ্রমজীবি মানুষ একদিকে কর্মহীন, আয়রোজগার হারিয়ে দিশেহারা। আর ব্যবসায়ীরা খাদ্য-পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাড়তি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

আবার গণপরিবহন, করোনারোধে জীবানুনাশক সুরক্ষা সামগ্রী, চিকিৎসা সেবা, টেস্ট ও ওষুধের বাড়তি দামে জনগনের এমনিতে জীবনজীবিকা নির্বাহে নাবিশ্বাস। সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য-ভোগ্যপণ্যের বাড়তি মূল্য এখন “মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা” হিসাবে দেখা দিয়েছে। জনভোগান্তি কমাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রশাসনের নির্লিপ্ততা জনমনে ক্ষোভ বাড়াচ্ছে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিগত এক মাস ধরে খুচরা বাজারে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল (সয়াবিন ও পাম অয়েল), পেঁয়াজ, আলু, আটা, ময়দা, চিনি, ডিম, আদা, জিরা, হলুদ, এলাচ, দারুচিনি, মুরগির মাংস (দেশি ও ব্রয়লার), খাসির মাংস ও শিশুখাদ্যের মধ্যে গুঁড়োদুধের দাম বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর পাশাপাশি সব ধরনের শাকসবজির দামও চড়া। বাড়তি দামে পণ্য কিনতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভোক্তারা।

অথচ ব্যবসায়ীরা বারবার বলছেন, সারা দেশে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ আছে। আর প্রশাসন বলছে, চালের দাম নিয়ে কারসাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে কোনো পণ্যের দাম নিয়ে অনিয়ম করলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। কিন্তু বাস্তবে এসব বক্তব্যের পক্ষে কোন সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন