পাচারচক্রের হাত থেকে উদ্ধার বনরুই,সাফারি পার্কে অবমুক্ত

বিশ্বে আট প্রজাতির বনরুই থাকলেও বর্তমানে চায়না বনরুই ছাড়া অন্য প্রজাতিগুলোর দেখা মিলছে না। এর কারণ, বনরুই হয়ে গেছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণি।

সারাবেলা প্রতিনিধি, শ্রীপুর(গাজীপুর)

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বিরল ও অতিবিপন্ন প্রজাতির একটি চায়না বনরুই(Pangolin)অবমুক্ত করা হয়েছে।

পুলিশের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাজধানীর গোড়ান এলাকা  থেকে বনরুইটি উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া বনরুইটি পুরুষ বলে নিশ্চিত করেছেন ইউনিটের পরিদর্শক অসিম মল্লিক।

এর আগেও সাফারি পার্কে দুটি পুরুষ ও একটি নারী বনরুই অবমুক্ত করা হয়। এ নিয়ে পার্কে মোট চারটি বনরুই অবমুক্ত করা হলো, যার তিনটি পুরুষ ও একটি নারী।

একমাত্র আঁশযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণি বনরুই। সারা শরীরে মাছের মতো আঁশের ফাঁকে ফাঁকে থাকে শক্ত লোম। স্বভাবে বেশ অদ্ভুত। কুঁজো হয়ে দুলতে দুলতে চলে বনরুই, লম্বা লেজ গাছের ডালে জড়িয়ে ঝুলেও থাকতে পারে।

বিপদ বুঝলে সামনের দুই পায়ের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে লেজ দিয়ে পুরো দেহ ঢেকে বলের মতো আকার ধারণ করে বনরুই।

সারাদিন গর্তে ঘুমিয়ে কাটানোর পর রাতে খাবারের খোঁজে বের হয়ে মাটি শুঁকতে থাকে বনরুই। পিঁপড়ার বাসা বা উঁইপোকা  খেয়ে বেচেঁ থাকে এরা। শীতকাল এদের প্রজনন মৌসুম। সাধারণত একবারে একটি বা দুইটি বাচ্চা দেয় বনরুই।

বিশ্বে আট প্রজাতির বনরুই থাকলেও বর্তমানে চায়না বনরুই ছাড়া অন্য প্রজাতিগুলোর দেখা মিলছে না। এর কারণ, বনরুই হয়ে গেছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণি।

গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে চট্টগ্রাম, সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন বনে চায়না বনরুইয়ের দেখা মেলে।  অবাধ শিকার, পাচার ও বাস্তুপরিবেশ নষ্টের কারণে বর্তমানে এ প্রাণীপ্রজাতি ‘অতিবিপন্ন’ হিসেবে শ্রেণীভূক্ত বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার(আইইউসিএন)।

জানা যায়, পার্বত্য অঞ্চলে অনেকে বনরুই শিকারে জড়িত। সেখান থেকে বিশেষত আলীকদম ও থানচি হয়ে বনরুই পাচার হয় মিয়ানমারে। তবে শুধু পার্বত্য এলাকা নয়, সারাদেশ থেকেই বনরুই পাচার হয়ে আসছে। বিভিন্ন সময় তা ধরা পড়লেও পাচারের তুলনায় নগন্য। মাংসের উচ্চমূল্যের (বর্তমানে এক কেজি ৫০০ ডলার) কারণে চোরাকারবারীদের পছন্দের প্রাণি বনরুই।

বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসিম মল্লিক জানান, গোপন খবর পেয়ে গোড়ান এলাকার একটি পরিত্যক্ত গ্যারেজ থেকে দড়িবাঁধা অবস্থায় বনরুইটি উদ্ধার করা হয়। পাচারের জন্য এটি গ্যারেজে রাখা হয়েছিল বলে ধারনা করা হচ্ছে। ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১ ‘ অনুযায়ী বনরুই শিকার, পাচার, ক্রয়-বিক্রয় ও লালন-পালন দণ্ডনীয় অপরাধ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. তবিবুর রহমান জানান, ঢাকা থেকে বনরুইটি উদ্ধার করে সাফারি পার্কে গভীর অরন্যে অবমক্ত করা হয়। এ নিয়ে তিনটি পুরুষ ও একটি নারীসহ চারটি বনরুই রয়েছে। উপযুক্ত পরিবেশে বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে অতি বিপন্ন বনরুই আবারো সংখ্যায় বাড়তে পারে- এমনি আশা ব্যক্ত করেন এ কর্মকর্তা। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন