নামাজে যাওয়ার আগে জুবায়ের বলেছিল মা কার্টুনটা আরেকটু দেখে নেই

জুবায়ের টিভিতে কার্টুন দেখছিল। মা বললো বাবা নামাজ পড়তে যাও। শিশু জুবায়ের না যাওয়ার বায়না করতে থাকে।মাকে বলে,আম্মু আরেকটু দেখে নেই কার্টুনটা !

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ ||

পোশাক শ্রমিক জুলহাস ও স্ত্রী রাহিমার ৭ বছরের ছেলে জুবায়ের টিভিতে কার্টুন দেখছিল। মা বললো বাবা নামাজ পড়তে যাও। শিশু জুবায়ের না যাওয়ার বায়না করতে থাকে। মাকে বলে, আম্মু আরেকটু দেখে নেই কার্টুনটা !

কিন্তু মা ছেলেকে বুঝিয়ে তার বাবার সাথে মসজিদে যাওয়ার জন্য তৈরি করে। বাবা-ছেলে একসাথে এশার নামাজ পড়তে যায় নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে। জুবায়ের মনে মনে চিন্তা করছে বাড়ি গিয়ে আবার টিভিতে কার্টুন দেখবে। কিন্তু কে জানতো এই যাওয়াই জুবায়েরের জীবনে না ফেরার হয়ে উঠবে।

মসজিদে নামাজে দাঁড়িয়ে যখন সূরা ফাতিহা শেষ করলো। ঠিক তখনই সবশেষ।

নারায়ণগঞ্জের তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণে প্রথম নিহত শিশু জুবায়েরের বাবা বেঁচে গেছেন। তারও লড়াইটা চলছে মৃত্যুর সঙ্গে। জুবায়েরের লাশ দাফন করতে শনিবার বিকেলে গ্রামের বাড়ি বরিশালে নিয়ে গেছেন তার মা রাহিমা।

এদিকে জুবায়েরের বাবা জুলহাস মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ইন্সটিটিউটের কর্তব্যরত চিকিৎসক। 

জুবায়েরের বাবা-মা দুজনেই পোশাক শ্রমিক। রাহিমা কাজ করতেন মডেল গার্মেন্ট ও জুলহাস কাজ করতেন খাজা গার্মেন্টে। অভাবের সংসার সামলাতে দুজনই দিন-রাত পরিশ্রম করতেন একটু ভালভাবে চলবার জন্য।

নিহত জুবায়েরদের বাড়ির মালিক আক্তারুজ্জামান সংবাদ সারাবেলাকে জানান, জুবায়েরকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন জুলহাস মিয়া।ইচ্ছে  ছিল ছেলেকে ধার্মিক বানাবেন তাই বাসায় থাকলে ছেলেকে নিয়ে মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। নি বলেন, খুব কষ্ট করে জীবন-যাপন করতো জুবায়েরদের পরিবার। দুজনে কাজ করে হিমশিম খেতে হতো তাদের। করোনায় বাড়ি ভাড়া ২০০ টাকা কমিয়ে ৩০০০ হাজার টাকা নিচ্ছিলাম।

পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া জুমেলা জানান, জুবায়ের গ্রামের বাড়ি বরিশালে দাদীর কাছে থাকতো। গ্রাম থেকে জুবায়েরের দাদি ফোন দিয়ে বলে, জুবায়ের স্কুলে পড়তে চায়। এরপর কোরবানীর ঈদের পর তার বাবা জুবায়েরকে নিয়ে আসে। এরপর বাড়ির কাছে সবুজবাগ মডেল কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করলেও করোনার কারণে ক্লাশ ও স্কুলে যাওয়া হয়নি শিশু জুবায়েরের ।

শুক্রবার ৪ঠা সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজের সময় বিস্ফোরণের এই ঘটনা ঘটে। এতে ৫০ জনেরও বেশি মুসুল্লি দগ্ধ হন। প্রত্যেক্ষদর্শীরা জানান , নামাজ চলার সময়ে হঠাৎ করেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে । মুহূর্তেই মসজিদের ভেতরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এক ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। মসজিদের ভেতরের কয়েকটি স্থানে প্রচুর পানি জমে ছিল। এসব পানিতে রক্ত মিশে লাল হয়ে যায় পানি। আশপাশের লোকজন ছুটাছুটি করে রাস্তায় জমে থাকা পানিতে ঝাঁপিয়ে পরে।

খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে উপস্থিত হন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন৷ পরে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম ও জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন।

এদিকে বিস্ফোরণের কারণ উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লে. কর্ণেল জিল্লুর রহমান বলেন, মসজিদের মেঝের নিচ থেকে তিতাস গ্যাসের একটি লাইন গিয়েছে৷ সেখান থেকে গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিস্ফোরণের সঠিক কারণ জানতে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন বলে জানান তিনি।

এই ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করে রিপোর্ট দিবে কার দোষী। বিকেলে বিদ্যুত ও জ্বালানী প্রতিমন্ত্রি নসরুল হামিদ বিপু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার সময়ে বলেন, তিতাস কিংবা বিদ্যুৎ বিভাগের কারও কোন গাফলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন