|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
নকল মাস্ক সরবরাহ মামলায় গ্রেফতার হলেন আওয়ামী লীগের সহযোগি সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শারমিন জাহান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের করা মামলায় তাকে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নকল মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে বৃহস্পাতিবার রাতে শাহবাগ থানায় মামলা করেন বিএসএমএমইউর প্রক্টর অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ। পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান জানিয়েছেন, শারমিনকে ইতোমধ্যেই শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়েছে। তবে রাজধানীর কোত্থেকে শারমিনকে গ্রেফতার করা হয়ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে এখন কিছু বলব না।”
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত শারমিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল গেল ২৭শে জুন ১১ হাজার মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পায়।
মামলার অভিযোগের উদ্ধৃতি দিয়ে শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, এই কার্যাদেশের বিপরীতে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল ৩০শে জুন প্রথম দফায় ১৩০০, ২রা জুলাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ৪৬০ ও ১০০০ এবং চতুর্থ দফায় ৭০০ মাস্ক সরবরাহ করে। তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় পণ্য ‘সামগ্রিক গুণগতমানের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পাওয়া যায়নি’ বলে অভিযোগ করা হয়।
এছাড়াও কোনো কোনো ফেইস মাস্কের বন্ধনী ছিঁড়ে গেছে, কোনো মাস্কের ছাপানো ইংরেজিতে লেখা ‘ত্রুটিপূর্ণ’ পাওয়া গেছে। এ ধরনের ত্রুটিতে কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে, মাস্ক নিম্নমানের ছিল। এর ফলে কোভিড-১৯ সম্মুখযোদ্ধাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারত বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে ১৮ই জুলাই শারমিন জাহানকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয় বিএসএমএমইউ। গেল ২০শে জুলাই দু:খ প্রকাশ করে দেওয়া শারমিনের লিখিত জবাবকে আসামির দোষ স্বীকারের শামিল বলে এজাহারে উল্লেখ করেন মামলার বাদি প্রক্টর অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ।
এজাহার আমলে নিয়ে শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে মামলাটি দণ্ডবিধির ৪২০ ও ৪০৬ ধারায় দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শারমিন জাহান গ্রেফতারের আগে বলেছিলেন, তারা নকল মাস্ক সরবরাহ করেননি। এগুলো সরাসরি চীন থেকে আমদানি করেছে তার প্রতিষ্ঠান। তিনি এও বলেন, এগুলোতো আমরা তৈরি করিনি। আমরা শুধু সাপ্লাই দিচ্ছি। প্রডাক্ট খারাপ হলে, বিএসএমএমইউ প্রথমবারই আমাদের বলতে পারত। আমরা সেটা যাচাই করে দেখতে পারতাম।”
উল্লেখ্য, শারমিন জাহান ২০০২ সালে ছাত্রলীগের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখার সভাপতি ছিলেন। ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে কোনো পদ না পেলেও দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
২০১৬ সালের ৩০শে জুন স্কলারশিপ নিয়ে চীনের উহানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। গত ২৩শে জানুয়ারি থেকে উহানে লকডাউন শুরু হলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার শিক্ষা ছুটির মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যে চীনে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের মার্চে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামে সরবরাহকারী হিসেবে নিজের ব্যবসা শুরু করেন।