ধর্ষণবিরোধিতায় পুলিশের লাঠি

সারাদেশে একের পর এক ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিচার এবং এসব ঘটনায় দায়িত্বহীন বক্তব্য দেওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখী কালো পতাকা মিছিলে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে এগোতে থাকলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। এতেই শুরু হয় দু’পক্ষের হাতাহাতি। এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতাকে লাঠিপেটা করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের লাঠিতে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রফ্রন্টের নয় জন নেতা কর্মী আহত হয়।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ||

সারাদেশে একের পর এক ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিচার এবং এসব ঘটনায় দায়িত্বহীন বক্তব্য দেওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখী কালো পতাকা মিছিলে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে এগোতে থাকলে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। এতেই শুরু হয় দু’পক্ষের হাতাহাতি। এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতাকে লাঠিপেটা করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের লাঠিতে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রফ্রন্টের নয় জন নেতা কর্মী আহত হয়।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের নেতৃত্বে জমায়েত হয়ে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এতে প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী, লেখক, কবি, শিল্পী, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও নারী অধিকারকর্মীরাও যোগ দেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বেলা সোয়া ১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা শাহবাগ মোড় থেকে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা ঘুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যেতে চাইলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে মিছিলকারীদের হাতাহাতি হয়। এতে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করলে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রফ্রন্টের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন। পরবর্তীতে মিছিলকারীরা সেখানেই অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা ধর্ষক ও নিপীড়কদের শাস্তির পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের পদত্যাগের দাবি জানান। প্রায় আধঘণ্টা সেখানে অবস্থান শেষে তারা আবার শাহবাগ হয়ে টিএসসি এলাকায় ফিরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানো হয়।

অবস্থান সমাবেশে ঢাকা মহানগর ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সাধারন সম্পাদক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন পৃথিবীর সবদেশেই ধর্ষণ হয়। তাঁর এই বক্তব্যে দায়িত্বহীনতার পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর মুখে একথা মানায় না। এ লজ্জা বর্তমান সরকারের। অতএব তাঁর পদত্যাগ করা উচিৎ।’’

পুলিশের লাঠিপেটায় আহতরা হলেন-ছাত্র ইউনিয়নের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আসমানি আশা, ঢাকা মহানগরের শিক্ষা-গবেষণা সম্পাদক সাদাৎ মাহমুদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক তাহমিদ তাজওয়ার ও সদস্য মাহমুদা দীপা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সহ-সভাপতি শাওন বিশ্বাস, মোহাম্মাদপুৃর থানা সাংগঠনিক সম্পাদক ইরফান ও সাজ্জাদ হোসেন শুভ, মোহাম্মাদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ আহ্বায়ক ইমন এবং কর্মী ইলা সহ অন্যরা। আহতদের মধ্যে আসমানি আশা, মাহমুদা দীপা, সাজ্জাদ হোসেন শুভ, আরেফিন ইমন ও রাসেল রহমান ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন।

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনীক রায় বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে, নেতাকর্মীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীরা আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গেছেন। পুলিশ ধর্ষকদের গ্রেপ্তার না করে উল্টো আন্দোলনকারীদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। এর প্রতিবাদে আমরা সন্ধ্যায় শাহবাগে মশাল মিছিল এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করব।”

এদিকে পুলিশ আগ বাড়িয়ে কোনো হামলা করেনি দাবি করে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “রাস্তায় বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমাদের পুলিশ শাহবাগ সাকুরা পয়েন্টে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিল। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেডের তালা ভেঙে পুলিশের উপর চড়াও হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। সেক্ষেত্রে পুলিশ আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছে।”

ভোলায় মানববন্ধন

আমাদের ভোলা প্রতিনিধি জানান, ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও বিচারকাজ দ্রুত করার দাবিতে ভোলায় মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে ভোলা প্রেসক্লাব চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাদের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশ নেন ভোলা জেলা সচেতন নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইয়ারুল আলম লিটন। এ সময় বক্তব্য রাখেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিরাজুম মুনিরা, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইরফান হৃদয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুরে আনজুম, ভোলা কলেজের মেহেদী আরেফিন, বিএম কলেজের তাহসিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমতিয়াজ আহমেদ প্রমূখ।

মানববন্ধন থেকে বক্তারা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা, ধর্ষণের বিচার দ্রুত করতে পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন ও ১০০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করাসহ ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন।

ফেনীতে বিক্ষোভ
ফেনী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও সারাদেশে ধর্ষণে জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ফেনী জেলা ছাত্রদল। মঙ্গলবার সকালে ফেনী প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের সমবায় মার্কেটের সামনে পৌঁছে মিছিলটি শেষ হয়।

মিছিলে নেতৃত্ব দেন ফেনী জেলা ছাত্রদল সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন। মিছিলের সামনে ছিলেন সহ-সভাপতি আবুল খায়ের লিটন, ইউনুস রুবেল,ইমরান খান ফরায়েজি মান্না, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, সাইফুল ইসলাম জিকু, কপিল পাটোয়ারী, হারুনুর রশিদ সামীম,তাজুল ইসলাম পাভেল, রাজন মজুমদার, সহ -সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল আলিম বাবু, প্রচার সম্পাদক করিমুল হক সুমন, দপ্তর সম্পাদক-আরিফুল ইসলাম সুমন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রিয়াদ মজুমদারসহ বিভিন্ন উপজেলার নেতৃবৃন্দ।

মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সালাউদ্দিন মামুন ও মোরশেদ আলম মিলন বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন না থাকায় আজকে প্রকাশ্যে ধর্ষণ করেছে নরপিশাচরা। সত্যিকারার্থে বিশেষ একটি গোষ্ঠী ছাড়া দেশে আজ কারোই নিরাপত্তা নেই। আজ সারাদেশে নারী ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনার উৎসব চলছে। আমরা অবিলম্বে দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করছি।

প্রতিবাদমুখর জামালপুর

আমাদের প্রতিনিধি জানান, সারা দেশে নারী- শিশু ধর্ষণ এবং নির্যাতনের প্রতিবাদে জামালপুরে মানববন্ধন করেছে জেলার সব পর্যায়ের সংস্কৃতি কর্মীরা। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় শহরের দয়াময়ী মোড় চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন উদীচির সংস্কৃতিকর্মী মুক্তিযোদ্ধা আলী ইমাম দুলাল, মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম, নারী নেত্রী শামীমা খান। মানববন্ধনে দেশে লাগাতার রী ও শিশু ধর্ষণ নির্যাতন চলতে থাকায় সংস্কৃতিকর্মীরা উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, সরকারের এই ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে আরো কঠোর হতে হবে। ধর্ষণকারীদের বিচারে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে যাবার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় মানববন্ধন থেকে।

টাঙ্গাইলে সরব শিক্ষার্থীরা

আমাদের প্রতিনিধি জানান, সিলেট ও নোয়াখালীসহ দেশজুড়ে অব্যাহত নারী ও শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদে টাঙ্গাইলে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন ফেস্টুন ও প্লাকার্ড নিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন।

এদিকে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনার চত্বরে এসে শেষ হয়। এই মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

গাইবান্ধায় মানববন্ধন

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, দেশব্যাপী নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার উত্তাল হয়ে ওঠে গাইবান্ধা। জেলা শহরের পৌর শহীদ মিনার চত্তরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গাইবান্ধা জেলা শাখার প্রতিবাদী অবস্থান ও ডিবি রোডে বিভিন্ন সংগঠনের মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। এসব কর্মসূচীতে গাইবান্ধার রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেন। পৌর শহীদ মিনার চত্তরে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জেলা শাখার প্রতিবাদী অবস্থানে সংগঠনের জেলা সভাপতি আলমগীর কবির বাদলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কবি ছড়াকার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সাবু, নাট্যজন ফারুক শিয়র চিনু, গাইবান্ধা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাকসুদার রহমান শাহান, গণফোরাম জেলা সভাপতি ময়নুল ইসলাম রাজা, জেলা জাসদ সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জনি, জাতীয় যুব জোট জেলা সভাপতি সুজন প্রসাদ, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. আসিফ সরকার,খন্দকার শামীম আহমেদ, শাহ আলম বাবলু প্রমুখ।

প্রতিবাদী অবস্থানে বক্তারা বলেন, ধর্ষণকারীর কোন পারিবারিক-সামাজিক রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না। ধর্ষণকারীর একটাই পরিচয় সে হায়েনা এবং জঘন্য অপরাধী। ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের মত ন্যাক্কারজনক অপরাধের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। এছাড়া ধর্ষণের প্রতিবাদে গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডে গণ উন্নয়ন কেন্দ্র, মহিলা পরিষদ, জলবায়ু পরিষদ, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটিসহ অন্যান্য সংগঠনের উদ্যোগে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে এক প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়। দেশের বিভিন্নস্থানে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে সাঘাটার বোনারপাড়াতেও মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন