ঝুলে আছে ফারুক-রশিদদের কামানের গোলায় নিহত ১৩ জনের বিচার

২০০৬ সালের ১ নভেম্বর এ মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে প্রায় ১৪ বছর আগে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। তবে এতদিনেও মামলার বিচার শেষ করতে পারেনি।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দিন ভোরবেলা খুনিদের কামানের একটি গোলা এসে পড়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডে। এতে খুন হন ঐ এলাকার শিশু ও নারীসহ অন্তত ১৩ জন। আহত হন চল্লিশ জনের মত।

সেসময়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি রব মামলা না নিলেও আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ সালে জনৈক মোহাম্মদ আলী বাদি হয়ে দায়ের করেন একটি হত্যা মামলা। যে মামলার সুরাহা হয়নি এখনো। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মাকছুদা পারভীনের আদালতে মামলাটি এখন সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে আদালতে সাক্ষী না আসায় অনেকটা থমকে আছে মামলাটির বিচারকাজ। তবে রাষ্ট্রপক্ষের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন মামলাটি মুজিববর্ষেই মধ্যে তারা বিচার শেষ করতে পারবেন।

২০০৬ সালের ১ নভেম্বর এ মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে প্রায় ১৪ বছর আগে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। তবে এতদিনেও মামলার বিচার শেষ করতে পারেনি।

চলতি বছরের গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য থাকলেই ওই দিন কোনো সাক্ষী আদালতে না আসায় ১৩ই এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ঠিক করেন। কিন্তু এরই মাঝে মহামারি করোনার কারণে আদালতের সাধারণ ছুটি চলায় আর কোনো কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়নি। সাধারণ ছুটি শেষে আগামী ২১শে সেপ্টেম্বর মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটরই সাইফুল ইসলাম হেলাল জানান, মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ করতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে সব সময়ই যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। পুলিশ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে পারছে না। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে সমনের পর অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়নাও জারি করা হয়েছে। তারপরও তারা হাজির হচ্ছেন না। সাক্ষীদের হাজিরের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল স্থানে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর পরেই মামলার গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না। এজন্য মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে না।

তিনি আরও জানান, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে কয়েকমাস আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এখন আবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আরও কিছু পাবলিক সাক্ষী বাকি রয়েছে। মুজিব বর্ষের গুরুত্ব দিয়ে এ বছরের মধ্যে মামলাটির বিচার শেষ হয়ে যায় সেজন্য চেষ্টা করে যাবো।

মামলার বাদী মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী জানান, মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডের ৮ নম্বর বাড়িটি আমার ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিন সকাল সাড়ে ৫টায় বাসার ওপর কামানের গোলা এসে পড়ে। ওই সময় বাসার ভাড়াটিয়া ও গ্রামের লোকজন অবস্থান করছিল। কামানের গোলায় আমার দূরের সম্পর্কের আত্মীয় রিজিয়া বেগমসহ ১৩ জন সেখানে মারা যান এবং প্রায় ৪০ জন আহত হন। আহতদের তাক্ষণিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, মামলা করতে গেলে তৎকালীন মোহাম্মদপুর থানার ওসি রব দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির অযুহাতে মামলা না নিয়ে ফিরিয়ে দেন। আর কামানের গোলায় নিহতদের লাশ কবর দিতে বলেন। একপর্যায়ে ১৫ই আগস্ট যা কিছু হয়েছে এ ব্যাপারে কোনো মামলা করা যাবে না এ সংক্রান্ত আইন পাস হয়। ফলে চেষ্টা করেও ওই সময় আর মামলা করা সম্ভব হয়নি।

এরপর ১৯৯৬ সালে স্বশরীরে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে কামানের গোলায় ১৩ জনকে হত্যার মামলাটি করি। গুরুত্বপূর্ণ এ মামলাটি দীর্ঘ দিনেও শেষ না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে তাদেরও শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের সময় সেনা সদস্যরা কামানের গোলা ছুঁড়লে তা গিয়ে মোহাম্মদপুরের শেরশাহ সুরী রোডর ৮ ও ৯ এবং ১৯৬ ও ১৯৭ নম্বর বাড়ির (টিনশেড বস্তি) ওপর পড়ে। ছোড়া কামানের গোলার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। মুহূর্তের মধ্যেই ধুলায় মিশে যায় ওই বস্তিটি। ওই ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ১৩ জন মারা যায়। প্রায় ৪০ জন আহতের মধ্যে কয়েকজন পুরুষ সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়।

১৯৯৬ সালের ২৯শে নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় ওই ঘটনায় ৮ নম্বর বাড়ির মালিক মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আদালতে ২০০১ সালের এপ্রিলে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর ২০০৬ সালের ১লা নভেম্বর এ মামলায় ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন