|| সোলায়মান হোসেন, জামালপুর থেকে ||
করোনাদুর্যোগে কাজ না থাকা মানুষের খাদ্যসহায়তায় এবার জামালপুরের রিক্সা চালক হযরত আলী প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিলেন ১৩ হাজার টাকা। মঙ্গলবার বিকালে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোকলেছুর রহমানের কাছে এই টাকা দেন হযরত আলী। ৬৫ বছর বয়সী হযরত আলীর গ্রামের বাড়ি জামালপুর পৌরশহরের পাথালিয়া ছাতার মোড়ে।
রিক্সাচালক হযরত আলী তিনি ২০০৬ সাল থেকে ঢাকায় রাজারবাগের কুসুমবাগে ভাড়াবাসায় থাকতেন। স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ে তার। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলের একজন শ্রমিকের কাজ করেন। আরেক ছেলে স্থানীয় স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে।
করোনা সংক্রমণ এড়াতে লকডাউনে হযরত আলী নিজেও কর্মহীন হয়ে স্ত্রীকে নিয়ে মাস খানেক আগে ঢাকা থেকে জামালপুরে চলে আসেন। ঢাকায় রিক্সা চালিয়ে সংসার খরচ বাদে কিছু টাকা জমিয়ে একটি গরু কিনে এক ব্যক্তিকে গরুটি বর্গা দিয়েছিলেন। করোনাদুর্যোগে আয়-রোজগার না থাকায় সেই গরুটিও বিক্রি করে দিয়েছেন। গরু বিক্রির টাকা থেকে সে ১৩ হাজার টাকা করোনায় তার মতো কর্মহীন মানুষদের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করেন। মঙ্গলবার বিকালে তার টাকাগুলো গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোকলেছুর রহমান।
রিক্সাচালক হযরত আলী বলেন, আমি নিজেও একজন গরিব মানুষ। কিন্তু দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি ভালা দেখতাছি না। তাই করোনায় মানুষের যথেষ্ট অশান্তি অইতাছে। মেলা মানুষ অভাবে না খইয়া কষ্টে আছে। করোনায় মানুষ মারাও যাইতাছে। ওষুধ কিনবার পাইতাছে না। মানুষের এই সমস্ত সমস্যা দেইখ্যা আমার ভালা লাগতাছে না। তাই আমি টাকা দিয়া কি করমু। বাঁচমু না মরমু তারও কোনো গ্যারান্টি নাই। আমারে আল্লায় বাঁচাইয়া রাখলে কামাই কইরা খাইতে পামু। তাই আমি আমার কষ্টের টাকায় কেনা গরু বিক্রি কইরা সামান্য কিছু টাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিলাম।’
এ প্রসঙ্গে জামালপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, “রিক্সাচালক হযরত আলীর মতো একজন দরিদ্র মানুষ তার কষ্টের জমানো টাকা থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১৩ হাজার টাকা জমা দিলেন। এটা তার মহত্ব বলতে হবে। কারণ উনি চিন্তা করেছেন যে, ওনার চেয়ে বেশি দরিদ্র যারা, তাদের যদি উপকার হয়, সেই চিন্তা থেকেই উনি যেটা করলেন সেটা অবশ্যই একটি মহৎ কাজ।
তিনি আরও বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ওনার টাকাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। ওনার এই অবদানের কথা জেলা প্রশাসন সব সময় মনে রাখবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
হোসেন/সসা/নাআ/সেখা