চুরি করতে গিয়েই মা ও তিন সন্তানকে খুন করে পারভেজ

|| অনলাইন প্রতিনিধি, শ্রীপুর (গাজীপুর) ||

বাড়ির দেয়াল টপকে দোতলা বাড়ির ছাদে উঠেছিল ঘাতক পারভেজ । ব্লেড দিয়ে ছাদে থাকা কাপড় শুকানোর রশি কেটে নিয়ে তা গ্রিলে বেধে বাথরুমের জানালা দিয়ে দোতালায় নামে। নেমেই প্রথমে নূরা ও নওরিনের ঘরের খাটের নিচে পারভেজ লুকিয়ে পড়ে। নূরার কানে তখন ইয়ারফোন ও ছোট বোন হাওয়ারিন ঘুমিয়ে ছিল।

ঘন্টাখানেক পর খাটের নিচ থেকে বের হয়ে পারভেজ নিচ তলার রান্নাঘর থেকে বঁটি-দা নিয়ে উপরে এসে নূরার মা স্মৃতি ফাতেমার ঘরের ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় নূরা কে ওখানে বলে মাকে ডাক দেয়। দরজা খুলে পারভেজকে দেখে চিৎকার দেন ইন্দোনেশিয় নাগিরক নূরার মা স্মৃতি ফাতেমা। সঙ্গে সঙ্গে পারভেজ স্মৃতির মাথা ও শরীরে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে জ্ঞান হারিয়ে নিচে লুটিয়ে পড়েন স্মৃতি ফাতেমা। পরে পারভেজ একে একে স্মৃতির তিন ছেলে মেয়েকেও কুপিয়ে হত্যা করে।

এভাবেই শ্রীপুর জৈনাবাজার আবদার এলাকার মা ও তার তিন সন্তানকে গলা কেটে হত্যার বিবরণ দিয়েছে ঘাতক পারভেজ। গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই তাকে গ্রেফতারের পর আদালতে তুললে সে হত্যার এমন বিবরণ দিয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা । সোমবার দুপুরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় পারভেজ।

পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের বরাতে জানা গেছে, পারভেজ এর আগেও নীলিমা নামে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর গলা টিপে হত্যার মামলায় প্রায় একবছর জেলে ছিল। কিশোর বিবেচনায় সে আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসে।

হত্যার বিবরণ দিতে গিয়ে পারভেজ জানায়, বটি দিয়ে নূরার মা স্মৃতি ফাতেমাকে কোপানোর পর সে জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। স্মৃতির চিৎকারে নূরা মায়ের কাছে আসলে তাকেও এলোপাতারি কোপায় পারভেজ। ঘুম ভেঙে খাটে উঠে বসেছিল ছোট ছেলে ফাদিল। তাকেও জবাই করে খাটের নিচে রেখে দেয় পারভেজ। পরে হাওয়ারিন আসলে তাকেও কুপিয়ে রক্তাক্ত করে ঘরের মেঝেতে ফেল রাখে। স্মৃতি ফাতেমার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সে প্রথমে নূরাকে ধর্ষন করে পরে ছোট মেয়ে হাওয়ারিনকে ও ধর্ষণ করে।

পিবিআই গাজীপুর ইউনিটের ইনচার্জ নাসির আহম্মেদ শিকদার জানান, গত ২৩শে এপ্রিল মধ্য রাতে এ ঘটনা ঘটায় পারভেজ। দামি মোবাইল চুরি করার জন্যই স্মৃতির বাসার দোতালায় উঠেছিল সে। কিন্তু তাকে চিনে ফেলেছে এ ভয়ে পারভেজ সবাই কে খুন করে। খুনের পর স্মৃতি ফাতেমার সঙ্গে থাকা স্বর্ণের চেইন, দুটি কানের দুল একটি নাক ফুল ও হাওয়ারিন ও নূরার কাছ থেকে দুটি স্বর্ণের রিং ও কান ফুল খুলে নেয় সে।বাসার আলমারি খুলে আরো দুটি স্বর্ণের চেইন একটি লাল রঙের ডায়েরি, দুটি টাচ মোবাইল ফোন, ও আরো কিছু স্বর্ণালংকার তার পায়জামার পকেটে রেখে হাত মুখ ধুয়ে পেছনের গেট দিয়ে কেটে পরে পারভেজ।

এলাকাবাসির দেওয়া তথ্যে রোববার রাতে পারভেজের বাড়ি থেকে তাকে আটক করে পিবিআই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই পারভেজ স্বীকার করে এই হত্যার কথা। তার দেওয়া তথ্যে সোমবার সকালে তার বাড়ি থেকে মালপত্র উদ্ধার করা হয়।

গত বুধবার স্ত্রী ও তিন সন্তান খুনের পর কাজলের বাবা আবুল হোসেন বাদী হয়ে শ্রীপুর মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।

নিহত স্মৃতি ফাতেমা ইন্দোনেশীয় নাগরিক। মালয়েশিয়াকে কাজের সূত্রে রেজোয়ান হোসেন কাজলের সঙ্গে তার পরিচয় এরপর প্রেম থেকে বিয়ে। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার লংগাইর ইউনিয়নের গোলাবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে কাজল দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় চাকরি করেন। সে সময়ই স্মৃতি ফাতেমার সঙ্গে প্রেম হয় তার। তারপরে তাকে বিয়ে করে কাজল। তাদের দুই মেয়ে নূরা (১৫), নাওরিন হাওয়া (১২) ও এক ছেলে ফাদিল (৮)। বড় মেয়ে নূরা স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ছোট ছেলে ফাদিল জন্ম থেকেই বাকপ্রতিবন্ধী। প্রায় দুই যুগ আগে জৈনা বাজার এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করে কাজল। এখানেই স্ত্রী সন্তানদের রেখে আবার পাড়ি জমান প্রবাসে। স্ত্রী সন্তানদের এমন খুনের সময়েও কাজল রয়েছেন মালায়েশিয়ায়।#

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন