|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক রাহাত খান আর নেই, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর ইস্কাটনে নিজের বাসায় মারা যান রাহাত খান। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে তিনি হার্টের সমস্যা ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। এছাড়া বার্ধক্যজনিত আরও কিছু কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই বিছানা নিয়েছিলেন তিনি। গেল দুই দিন ধরে কথাবার্তাও বন্ধ ছিল তার।
বহু বছর দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করা রাহাত খান সর্বশেষ দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখালেখিও করেছেন সমানতালে। নাগরিক মধ্যবিত্ত নিয়ে তার লেখনি আজও দাগ কেটে আছে পড়ুয়াদের মনে। ‘অমল ধবল চাকরি’, ‘ছায়াদম্পতি’, ‘শহর’, ‘হে শূন্যতা’, ‘হে অনন্তের পাখি’, ‘মধ্য মাঠের খোলোয়াড়’, ‘এক প্রিয়দর্শিনী’, ‘মন্ত্রিসভার পতন’, ‘দুই নারী’, ‘কোলাহল’ এর মত উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ তার হাত দিয়েই এসেছে।
সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে রাহাত খান একুশে পদক পান। তার আগে ১৯৭৩ সালে পান বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার।
রাহাত খানের জন্ম ১৯৪০ সালের ১৯শে ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার পূর্ব জাওয়ার গ্রামে। খান পরিবারের জন্ম নেওয়া রাহাত খানের সাংবাদিকতার শুরু ১৯৬৯ সালে দৈনিক সংবাদে। পরে যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। সেখানে সহকারী সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক বর্তমান। মৃত্যুর সময় তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের সম্পাদক ছিলেন।
“প্রথম জীবনে তিনি কিশোর-কিশোরীদের জন্য লিখেছেন ‘দিলুর গল্প’। সেই বইটি প্রকাশের পর তিনি তুমুল জনপ্রিয়তা পান। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমিতে যে সাহিত্য সম্মেলন হয়েছিল, আমার মনে পড়ে, তিনি সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। পরে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে সাংবাদিকতার পাশাপাশি ছোটগল্প ও উপন্যাসেও নিয়মিত হন।”
রাষ্ট্রপতির শোক
সাংবাদিক রাহাত খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বার্তায় বলেছেন, “সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখক হিসেবে রাহাত খান মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও সমাজ উন্নয়নে বিপুল অবদান রেখেছেন। তার মৃত্যু সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি।”
রাষ্ট্রপতি রাহাত খানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান ।
শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে সরকারপ্রধানের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, “রাহাত খান তার কর্মের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।”
প্রয়াত এই সাংবাদিকের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
রাহাত খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
আবিষ্কার প্রকাশনীর কর্ণধার ও প্রেসক্লাবের সদস্য দেলোয়ার হাসান জানান, শুক্রবার রাতে রাহাত খানের মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে জানাজার পর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।