|| সারাবেলা প্রতিনিধি, শ্রীপুর(গাজীপুর)||
গাজীপুরের শ্রীপুরে উপজেলা হেডকোয়াটার অগ্ৰণী ব্যাংক শাখার ৪০ জন গ্রাহকের টাকা নিজস্ব হিসাব নম্বরে জমা না দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার নয়ছয় করেছে এমন অভিযোগে তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্নসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় শাখা ব্যবস্থাপকে প্রত্যাহার করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। পরে নতুন ব্যবস্থাপক এ শাখায় যোগদান করেন। স্বাক্ষর জাল আর জমার টাকা ( জমা রশিদ নষ্ট করে) নিদির্ষ্ট হিসাবে জমা না করে এ সব টাকা সরানো হয়েছে।
গত জুলাই মাসে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। বর্তমানে এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের গঠিত তদন্ত দল তদন্ত করছেন। এরি মধ্যে নিদির্ষ্ট প্রমানের ভিত্তিতে কিছু গ্রাহক টাকা ফেরত পেয়েছেন। এ খবর বাইরে প্রকাশ পেলে অনেক গ্রাহকরা অগ্রণী ব্যাংক শাখায় ভীর করছেন নিজেদের হিসাবের(একাউন্টের) তথ্য জানতে। অনেক গ্রাহকই নিজের হিসাব নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন।
গ্রাহকদের বিপুল পরিমান টাকা নয়ছয় করা হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন। তবে কত টাকার গড়মিল করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তদন্তের পর টাকার সঠিক হিসাব নিশ্চত হওয়া যাবে বলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান।
প্রত্যাহার করা হয়েছে সাবেক ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম। আর বরখাস্ত করা হয়েছে প্রধান হিসাবরক্ষক (ক্যাশ ইনচার্জ) নজরুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক অফিসার দেলোয়ার হোসেন ও বদরুল হাসান।
ভুক্তভোগী কয়েকজন গ্রাহক জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে তাদের বিভিন্ন ধরনের একাউন্টে যথা নিয়মে টাকা জমা দিলেও সেগুলো ব্যাংকের নিজস্ব ( গ্রাহকের) হিসাব নম্বরে জমা না করে ওই কর্মকর্তারা আত্মসাৎ করেন। কয়েক গ্রাহকের হিসাব মিলিয়ে জমা ও উত্তোলনের গড়মিল ধরা পড়লে বিষয়টি নজরে আসে। পরে এ সব বিষয়ে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কার্যালয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ দেন। এ সব অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্তে ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সাময়িক শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাদের কাছে টাকা জমা দেওয়ার রশিদ রয়েছে তারা আগে টাকাগুলো ফেরত পাবেন বলে ব্যাংকের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের জানিয়েছেন।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক আব্দুল হালিম বুধবার জনান, আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এই দুর্নীতির বিষয়গুলো আমিই ধরেছি। তিনজন কর্মকর্তা এসব কাজে জড়িত। বর্তমানে তদন্ত চলছে। পুরো বিষয়টিই আমাদের আভ্যন্তরীণ। এ বিষয়ে আর কিছু বলা যাচ্ছে না।
ভুক্তভোগী গ্রাহক হাবিবুর রহমান জানান, তাঁর একাউন্টে ২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকার হিসাব গড়মিল পেয়েছেন। পরে তিনি এ বিষয়ে ব্যাংকে যোগাযোগ করলে তাঁকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। আরো ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ফেরত দিবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন এরি মধ্যে এক ( বরখাস্তকৃত) কর্মকর্তা ফোনে টাকা ফেরত দিবেন এ কথা জানিয়েছেন। আগামী কাল আরো কিছু টাকা ফেরত দিবেন বলা হয়েছে।
ব্যাংকের সামনে ভীর করা একাধিক গ্রাহক জানান,গ্রাহকদের স্বাক্ষর জাল করে ও জমার রশিদ নষ্ট করে অনেক গ্রাহকের হিসাবের টাকা আত্নসাৎ করা হয়েছে এমন খবরে অনেকে ব্যাংকে ভীর করছে নিজেদের হিসাবের সঠিক তথ্য জানতে। তারা জানান, পুরাতন হিসাবগুলোই টার্গেট করে এ আত্নসাদের পরিকল্পনা করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। আমরা আমাদের অর্জিত টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত রেখে নিরাপদে থাকতে চাই। যারা এ অপরাধ করেছে তাদের প্রকৃত শাস্তি প্রদান করা হোক।
ব্যাংকটির বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা ( হিসাবরক্ষক) বদরুল হাসান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ছিল তা মিট করে ফেলেছি। টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছি গ্রাহকদের । আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
শ্রীপুর অগ্রণী ব্যাংক শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন , বিষয়টি নিয়ে আমাদের হেড অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। অনেক একাউন্টের টাকা ইতিমধ্যে রিকভারি হয়েছে। এ বিষয়ে কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। তদন্ত কার্যক্রম ও রিকভারি শেষ হতে আরও সময় লাগবে।