গীতা রানী ও ছেলে অরুণের করোনাজয়ের গল্প

|| অনলাইন প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ ||

করোনাকে হারিয়ে দিলেন সত্তর বছরের এক মা। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদি খান উপজেলার আবির পাড়ায় এই মায়ের বাড়ি। টানা ১৭ দিন করোনার সঙ্গে লড়াই করে যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন এই মা। মা শুধু একাই নন, করোনাআক্রান্ত ছেলেকে সুস্থ করে একসঙ্গে বাড়ি ফিরেছেন আইসোলেশন ইউনিট থেকে।

সোমবার ২৭শে এপ্রিল সকালে সিরাজদি খান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আইসোলেশন সেন্টার থেকে করোনাআক্রান্ত মা ও ছেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফেরেন। তবে, করোনা জয় করা বৃদ্ধা গীতা রানীকে গত শনিবার ইআইডিসিআর থেকে সুস্থ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও থেকে যান ছেলের জন্য। ছেলে অরুণ কুমার পাল আজ ছাড়া পেলে তাকে নিয়েই বাড়ি ফেরেন গীতা রানী।

করোনা থেকে সুস্থ হওয়া প্রসঙ্গে গীতা রানী পাল বলেন, ‘দৃঢ় মনোবল, আত্মবিশ্বাস আর চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলায় দ্রুত সুস্থ হয়েছেন তিনি ও তার ছেলে। এরআগে গত ১০ই এপ্রিল থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে ছিলেন তারা। আক্রান্ত ওই বৃদ্ধার সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হন ছেলে অরুণ ও আরেক ছেলের বউ।

গীতা রানী ও তার ছেলে অরুণের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে জানা যায়, চলতি মাসের ৩ তারিখ জ্বর-সর্দি নিয়ে স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে যান গীতা রানী। পরবর্তী ৭ই এপ্রিল তারিথে স্থানীয়দের পরামর্শে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে তার নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় আইইডিসিআরে। ১০ই এপ্রিল ঢাকা থেকে ফোনে জানানো হয়, তার রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। পরদিন থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আইসোলেশন সেন্টারে ছিলেন তারা।

করোনাজয়ী ছেলে অরুণ পাল জানান, প্রথমে তার মাকেএকা আইসোলেশনে নেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সে তার মায়ের সাথে হাসপাতালে চলে আসেন। ১৩ই এপ্রিল অরুন এবং তার মা ও পরিবারের আরো ৬ জনের থুতু নিয়ে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। পর দিন জানতে অরুণ পারেন সে ও তার এক ভাবী আক্রান্ত হয়েছেন।
ভাবী হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে চিকিৎসা নেন। আমরা মা-ছেলে হাসপাতালে থাকি। সেখানে মা মনোবল হারান নি। আমিও মাকে সব সময় সাহস দিয়েছি। দু’বেলা গরম পানির ভাপ নিয়েছি। খাওয়া থেকে সব কাজে গরম পানির ব্যবহার করেছি। প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি জাতীয় ফলমূল খাওয়ানো হয়। এতে করে সহজেই মা এবং আমি সুস্থ হয়ে উঠি।

গীতা রানী ও তার ছেলে মনে করেন, দৃঢ় মনোবল, আত্মবিশ্বাস ও চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চললে যে কোন রোগী করোনাভাইরাস থেকে দ্রুত সেরে উঠতে পারে।

সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.বদিউজ্জামান বলেন, ৭০ বছরের ওই নারীর পাশাপাশি তার ছেলে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। পরপর দুটি রিপোর্ট তাদের নেগেটিভ এসেছে। তাই তাদের আজ সোমবার ছাড়পত্র দিয়ে আইসোলেশন ইউনিট থেকে বাড়ি ফিরে যেতে দেওয়া হয়। এছাড়া গীতা রানীর এক পুত্রবধুরও করোনা শনাক্ত হয়। তিনি বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে তিনি ভালো আছেন। আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তার একটি রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। আগামী ২৯শে এপ্রিল তার নমুনা সংগ্রহ করে আবার আইইডিসিআরএ পাঠানো হবে ।

এই চিকিৎসক আরো বলেন, আমরা তাদের চিকিৎসায় ওষুধের পাশাপাশি ভিটামিন সি, গরম পানির ভাপ, গরম পানির গড়গড়া ও ফলমূল খাবারের ব্যাপারে বিশেষ জোর দেই। তারাও তা মেনে চলে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় মা-ছেলে দুজনেই সাহসী ও দৃঢ় মনোবলের মানুষ। তাই তারা দ্রুত সেরে উঠেছেন।

মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবংআইইডিসিআরের নির্দেশনামত গীতা রানী ও তার ছেলে অরুণ এখন পুরোপুরি সুস্থ এবং করোনামুক্ত।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত জেলা থেকে ৬৩৪ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ৪৮২টির ফলাফল পাওয়া গেছে। এতে মৃত ৬জনসহ ৭৫ জনের ফলাফল পজেটিভ পাওয়া যায়। এরমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুইজন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন