।। সারাবেলা প্রতিবেদন ।।
রাত ভর দুই হাতে বুক চাপড়ে মর্সিয়া, মাতম আর ক্রন্দন চলেছে। কারবালার প্রান্তরে বেদনাবিধুর আত্মদান স্মরণ করে উঠেছে হায় হোসেন হায় হোসেন রব। মুসলিম শিয়া সম্প্রদায়ের আবালবৃদ্ধবণিতা অংশ নিয়েছে এই মাতমে। চলেছে জেয়ারত। তবে অন্যবারের চাইতে আলাদাছিলো এবারের আশুরা। মুখে মাস্ক আর হোসেনি দালানে ঢোকার আগে স্যানিটাইজড হওয়াতো ছিলোই। আর গত ৫ বছরের মতোই কঠিন নিরাপত্তা বেষ্টনি।
হোসেনি দালান এলাকায় মাস্ক বিক্রেতাদের রমরমা উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এক ঘন্টায় ৬ জন মাস্ক বিক্রেতা ১১০০ মাস্ক বিক্রি করেছেন।
সকালে হোসেনি দালানে ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া এসে পৌছায় সকাল ১০টায়। প্রতিবার মিছিল রাজধানী প্রদক্ষিণ করলেও এবারে হোসেনি দালান প্রাঙ্গণে সমবেত হয়ে চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে হায় হোসেন, হায় হোসেন মাতম তুলে মিছিলের মতো ঘুরছেন শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা।
রোববার (৩০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় পবিত্র আশুরার তাজিয়া। এ অনুষ্ঠান চলবে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত। তবে দিনভর মিছিলের পাশাপাশি অন্যান্য রীতিও পালিত হবে।
সরজমিনে হোসেনি দালান এলাকায় দেখা যায়, সকাল ৯টার পর থেকে সীমিত পরিসরে পবিত্র আশুরা উদযাপনে আয়োজিত অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করে শিয়া সম্প্রদায়ের ইমামভক্তরা। সকাল ১০টার আগেই ভক্তদের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে উঠে ঐতিহ্যবাহী হোসেনি দালান ইমামবাড়া প্রাঙ্গণ। লাল-কালো আর সবুজের সমারোহে নানা অক্ষর খচিত নিশান হাতে ছুটে আসেন তারা।
এরপর সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়, মূল আচার অনুষ্ঠান শোক বা তাজিয়া। এতে ১০-২০ জন দলবদ্ধ হয়ে চক্রাকারে বুক চাপড়িয়ে হায় হোসেন, হায় হোসেন ধ্বনিতে শোকের দিনটিকে স্মরণ করছেন। মিছিলে অংশ নেয় সুসজ্জিত জোড়া দুলদুল ঘোড়া। আবার কেউ কেউ মর্সিয়া খান পরম্পরা বজায় রেখে পড়ছিলেন কষ্টজাগানো সুরে যুদ্ধ দিনের কষ্টগাঁথা।
শতসহস্র জন কারবালার যুদ্ধে নিহত হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)-এর সমাধির প্রতিকৃতিতে আগরবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করছিলেন ফুল দিয়ে। আর কেউ কেউ শিয়া সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠির কবর জিয়ারত করেন।
২০১৫ এর পর থেকে বরাবরের মতো পুলিশ-ৠাব-বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট-দমকল বাহিনী দুই স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরী করে রেখেছে। আর্চওয়ে গেট পেরিয়ে ঢুকতে হয়েছে সবাইকে। হয়েছে আলাদা তলালাশী। চকবজার থানা এবং ৠাব ১০ এই নিরাপত্তার দাত্বি পালন করছে। পুলিশের ৮০ এবং ৠাবের ২৫ সদস্য নিরাপত্তা বেষ্টনী ঘিরে আছেন।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মওদুত আহমেদ বলেন, আমরা নিরাপত্তায় কোনো ত্রুটি রাখিনি। এটি বজায় থাকবে আয়োজন শেষ না হওয়া পর্যন্ত।