|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
নারায়ণগঞ্জের মসজিদে এসি বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনাকে অত্যন্ত দু:খজনক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যথাযথ অনুমোদন না নিয়ে, নকশা না মেনে যেখানে সেখানে ইমারত গড়লে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকার পরও মসজিদে মসজিদে অপরিকল্পিতভাবে এয়ারকন্ডিশনার বসানো হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বেই।
রোববার জাতীয় সংসদে আনা এ সংক্রান্ত এক শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বলেন, “নারায়ণগঞ্জে যে ঘটনাটি ঘটেছে, মসজিদে যে বিস্ফোরণটা ঘটল, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা ইতিমধ্যে… তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা যেখানে গেছেন, নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এবং এই ঘটনাটা কেন ঘটল, কীভাবে ঘটল, সেটার ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে। আমি মনে সেটা অবশ্যই বের হবে।”
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/09/Hasina.jpg?w=1200&ssl=1)
সরকার প্রধান বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক যে নামাজ পড়া অবস্থায় মসজিদে এই ধরনের একটা বিস্ফোরণ হল। যেখানে ওইটুকু একটা জায়গায় ছয়টা এসি লাগানো… আবার শোনা যাচ্ছে ওখানে গ্যাসের লাইনের উপরেই নাকি এই মসজিদটা নির্মাণ…। সাধারণত যেখানে গ্যাসের পাইপলাইন থাকে সেখানে কিন্তু কোনো নির্মাণ কাজ হয় না। আমি জানি না… এটার পারমিশন দিয়েছে কিনা। কারণ এই ধরনের পারমিশন তো দিতে পারে না, দেওয়া উচিত না। কারণ এটা সব সময়ই খুব… মানে একটা আশঙ্কাজনক (অবস্থায়) থাকে। তো সেটাই এখন তদন্ত করে দেখা হবে যে কীভাবে…।”
সংসদের আলোচনায় শেখ হাসিনা বলেন, “মসজিদে এখন সবাই দান করে। আজকাল তো সকলের পয়সাও আছে। এয়ারকন্ডিশনার দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে বিদ্যুত সরবরাহটা বা বিদ্যুৎ লাইন কতটা নিতে পারবে সেই ক্যাপাসিটি ছিল কিনা… সার্কিট ব্রেকার ছিল কিনা বা এইসব বিষয়গুলো কিন্তু দেখতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে কিছু করতে গেলে দুর্ঘটনা অবশ্যই ঘটতে পারে।”
মসজিদে বিস্ফোরণের ওই ঘটনা কেন ঘটেছে, তা খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সারা বাংলাদেশেই মসজিদগুলোতে যারা অপরিকল্পিতভাবে ইচ্ছেমত… মানে এয়ারকন্ডিশনার লাগাচ্ছেন, বা যেখানে সেখানে একটা মসজিদ গড়ে তুলছেন, সে জায়গাটা আদৌ একটা স্থাপনা করবার মত কিনা, বা যথযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেওয়া বা সেভাবে নকশাগুলো করা হয়েছে কিনা- সে বিষয়গুলো কিন্তু দেখা একান্ত প্রয়োজন। নইলে এ ধরনের দুর্ঘটনা যে কোনো সময় ঘটতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কাজেই… এই ধরনের একটা ঘটে গেছে এইটা সত্যিই খুব দুঃখজনক এবং যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের আত্মার মাগফেরাত আমি কামনা করি।”
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয় এবং মৃতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়।
সরকারপ্রধান বলেন, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ডা. সামন্ত লালের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। রোগীর অবস্থা সম্পর্কেও তিনি নিয়মিত খোঁজ রাখছেন। অনেকজন এ পর্যন্ত মারা গেছেন এবং বাকি যারা… তাদের বেশিরভাগের পোড়ার অবস্থা এত খারাপ, তারপরও চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদের সব ধরনের চিকিৎসার আমরা ব্যবস্থা করেছি। এখন আল্লাহ যদি এদের জীবনটা দিয়ে যান।”
শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় ছয়টি এসি একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়। দমকল কর্মীদের ৫টি ইউনিট আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সে সময় মসজিদে থাকা পঞ্চাশের বেশী মানুষের সবাই কমবেশি দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে যে ৩৭ জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিল, তাদের ২৪ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ওই মসজিদের নিচ দিয়ে তিতাসের যে গ্যাসের পাইপ গেছে, সেখানে ‘লিকেজ থেকে’ গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে তারা। ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, সিটি করপোরেশন আলাদা পাঁচটি কমিটি গঠন করেছে।
ফায়ার ব্রিগেডের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেছেন, ওই মসজিদের নিচতলায় দেড় টনের ছয়টি এসি ছিল। সবগুলো একসাথে বিস্ফোরিত হয়েছে। এসিতে ব্যবহৃত ফ্রেয়ন গ্যাসের অস্থিত্ব তারা মসজিদের ভেতরে বাতাসে পেয়েছেন।