১৪ বছর ধরে তালাবদ্ধ এক্সরে মেশিন

দেশের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল গুলোতে রোগ নির্ণয়ে এক্স-রে মেশিন সচল থাকলেও স্বল্প খরচে হাড়ভাঙা সহ নানা শারিরীক পরীক্ষার জরুরী এই যন্ত্রটিই দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর যাবৎ অন্ধকারে তালাবদ্ধ হয়ে আছে মীরসরাইয়ে উপজেলা মস্তান নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি , মীরসরাই (চট্টগ্রাম) ||

দেশের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল গুলোতে রোগ নির্ণয়ে এক্স-রে মেশিন সচল থাকলেও স্বল্প খরচে হাড়ভাঙা সহ নানা শারিরীক পরীক্ষার জরুরী এই যন্ত্রটিই দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর যাবৎ অন্ধকারে তালাবদ্ধ হয়ে আছে মীরসরাইয়ে উপজেলা মস্তান নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ১৯৬২ সাল থেকে যাত্রা শুরু হয়েছে মস্তান নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এই হাসপাতালের এক্স-রে যন্ত্র অচল হয়ে পড়ে আছে প্রায় ১৪ বছর যাবৎ। ডেন্টাল থাকলেও না থাকার মতো। ৩৬টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও কাগজে-কলমে কর্মরত আছেন ২৮ জন। এর মধ্যে শিশু ও মেডিসিন কনসালটেন্ট ছাড়া ৮টি কনসালটেন্ট পথ খালি রয়েছে।

এতক্ষণ যে চিত্রের বর্ণনা দিচ্ছিলাম, তা মীরসরাই উপজেলা মস্তান নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান চিত্র। রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া তো দূরের কথা, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই যেনো এক জটিল রোগী। প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকলেও হাসপাতাল থেকে ঔষধ না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাগজে কলমে থাকলে ও আছে ৪৮ টি। অবকাঠামোর অভাবে ২টি কেবিন বন্ধ রয়েছে অনেক দিন। তবে হাসপাতালের এ বেহাল দশায় চিকিৎসা সেবার পরিবর্তে রোগীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন ভবন ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে, চাদে উঠার সিঁড়ি নেই, পুরুষ ওয়ার্ডে মেঝেতে চাদ ঘামিয়ে পানি পড়ছে, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদ ৫টি থাকলে ৪টি শূণ্য থাকার কারণে হাসপাতালের চারিপাশ ময়লা আর্বজনায় মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। ৫৮ বছরের পুরাতন উপজেলার মস্তাননগর হাসপাতালটি যেন বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছে।

অপর দিকে যক্ষা রোগীদের জন্য বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যৌথ উদ্যোগে বিদেশ থেকে আনা প্রায় কোটি টাকা দামের জিনেক্স পাট মেশিন ভবন সংকটের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন ভবনে ছোট কক্ষে বসানো হয়েছে। হাসপাতালের এ বেহাল দশায় রোগীদের অতি প্রয়োজনীয় এক্স-রে ও অন্যান্য সাধারণ পরীক্ষাগুলো অধিক মূল্যে করাতে হচ্ছে।

উপজেলার বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতে। আর দীর্ঘদিন ধরে ১জন ল্যাব টেকনিশিয়ানের দিয়ে চলছে পরিক্ষা নিরীক্ষা। গাইনী কনসালট্যান্ট ও এনেসথেসিয়া ডাক্তার নেই।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকেই এ হাসপাতালে একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মিনহাজ উদ্দিন হাসপাতালে না থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুরে চট্টগ্রাম শহরে থাকেন, তার পাশাপাশি গাইনী ডাক্তার জেসমিন আক্তার সাধারণত অফিস সময়ে মধ্যে রোগী দেখে থাকেন, তাও প্রতিদিন নয়। যেখানে ২৪ ঘন্টা গাইনী ডাক্তার থাকার কথা। ডাক্তার সংকটের কারণে সেখানে হতদরিদ্র মানুষ ব্যয় বহুল বেসরকারী হাসাপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়।

অন্যদিকে উপজেলায় ৭টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের (এফডব্লিউসি) প্রতিটিতে একজন করে মোট ১৫জন চিকিৎসা কর্মকর্তার (এমও) পদ থাকলেও বর্তমানে ২টি পদই শূন্য। তবে সাব-সেন্টারের ভবন গুলো নড়বড়ে অবস্থথা এবং কক্ষের ভিতরে চাদের পানি পড়ে।

সাহেরখালী ইউনিয়ন থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মর্জিনা আক্তার (৩৭) জানান, এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের এক্স-রে ও অন্যান্য অনেক পরীক্ষা করাতে হয় বাইরে বিভিন্ন বেসরকারী ল্যাব থেকে। এক্স-রে সুবিধা না থাকায় দুর্ঘটনায় আহত রোগীদেরও এক্স-রে রিপোর্ট এর জন্য বাইরে নিয়ে যেতে হয়। এছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, চিকিৎসক সহ বিভিন্ন দফতরের কর্মচারী স্বল্পতার বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু‘ এখনও কোনো সমাধান মেলেনি।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বী বলেন, মীরসরাই উপজেলা মস্তান নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটের বিষয়টি আমি নিজে পরিদর্শন করে আসছি। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় হাসপাতালে পর্যায়ক্রমে এক্সে মেশিন দেওয়া হবে। গাইনী ও এনে¯’ছিয়া ডাক্তার সংকট হলেও নরমাল ডেলিভারী ব্যাপারে আমরা সার্বিক সহযোগীতা করছে। হাসপাতালে যাবতীয় সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন