‘সীমিত’ নয় পুরোদমেই চলছে চট্টগ্রামের পোশাক কারখানা

|| অনলাইন প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ||

চট্টগ্রামের কোন তৈরি পোশাক কারখানাতেই মানা হচ্ছে না সরকারের দেওয়া ‘সীমিত পরিসর’ শব্দটি । করোনাঝুঁকি আর শঙ্কার মধ্যেই পুরোদমে চলছে এখানকার তিনটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা-ইপিজেডসহ অন্য কারখানাগুলো। এমন পূর্ন গতিতে শ্রমিক সমাবেশ ঘটিয়ে কারখানা চালু করায় আগামী ৭ থেকে ১৪ দিন পরে করোনা সংক্রমণ চোখে পড়বে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রামের সাগরিকা শিল্প এলাকায় বিএসএ গ্রুপের ৩টি পোশাক কারখানায় মোট ৬ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বৃহস্পতিবার ৯০ শতাংশের বেশি শ্রমিক উপস্থিত ছিল এই তিনটি কারখানায় । স্বাভাবিক সময়েও এই কারখানাগুলোতে প্রায় ৭ থেকে ৮ শতাংশ শ্রমিক অনুপস্থিত থাকে।

কারখানার আশপাশের শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও বিএসএ গার্মেন্টসের মতো অনেক কারখানা রীতিমতো নিজস্ব পরিবহন দিয়ে কর্মীদের কারখানায় নিয়ে আসছে। শ্রমঘন এই শিল্পে চাইলেও সামাজিক দূরত্ব মেনে উৎপাদন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কিনা সেটা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। আবার এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

শ্রমিক উপস্থিতি বেশি প্রসঙ্গে বিএসএ গ্রুপের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই গ্রুপের অধিকাংশ শ্রমিক হালিশহর, সিটিগেইট, আকবরশাহ এলাকার। তাই শ্রমিকদের আসতে সমস্যা হয় না। এ ছাড়া বেশকিছু শ্রমিক আসে গোসাইলডাঙ্গা থেকে। তাদের বাস দিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকার নির্দেশিত সুরক্ষা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিল্প পুলিশের তথ্য মতে, ২৯শে এপ্রিল বুধবার চট্টগ্রাম জেলায় ১২২৯টি শিল্প কারখানার মধ্যে চালু ছিল ৬০৫ টি। এরমধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা ৩৬৬টি। বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানা ১৪৮টি। এ ছাড়া বিকেএমইএ সদস্য ৪৮টি ও বিটিএমইএ’র ১০টি কারখানা চালু ছিল। আর দুই ইপিজেডে সবমিলিয়ে চালু ছিল ১৪২টি কারখানা।
এরআগে গেল মঙ্গলবার ২৮শে এপ্রিল চট্টগ্রামে চালু ছিল ৩৩৮টি কারখানা। অর্থাৎ প্রতিদিনই খুলছে নতুন নতুন কারখানা। বিশেষ অনুমতি নিয়ে জরুরি শিপমেন্টের জন্য ‘সীমিত পরিসর’ এ খোলার কথা বলা হলেও বেশীর ভাগ কারখানাতেই পুরোদমে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই সুযোগে যারা ইতোমধ্যে দীর্ঘমেয়াদে লে-অফ ঘোষণা করেছে তারাও শ্রমিকদের এনে ‘সীমিত’ পরিসরে উৎপাদন শুরু করেছে।

চট্টগ্রাম ইপিজেড সূত্র জানায়, এই ইপিজেডে বুধবারও ২৯শে এপ্রিল ১০১টি কারখানা খোলা ছিল। এইসব কারখানায় প্রায় ৫১ হাজার শ্রমিক বৃহস্পতিবার কাজ করেছে। যদিও শিল্প পুলিশের হিসাবে সিইপিজেডে চালু কারখানা ১৩৯ টি।

গত ২৬শে এপ্রিল সিইপিজেড গেইটে বিকালে ছুটির সময় বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের বাড়ি ফেরার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সমালোচনার মুখে পরদিন থেকে ইপিজেডে প্রবেশ ও ছুটির সময় কারখানাভেদে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সিইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক খুরশিদ আলম বলেন, ‘কারখানাগুলোকে গ্রুপ ভাগ করে অফিস শুরু ও ছুটির সময় আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে চাপ অনেকটাই কমে গেছে। এ ছাড়া কারখানায় প্রবেশের সময় হাতধোয়া, মাস্ক পরা ও থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে জ্বর মাপা ও কারখানার ভেতরে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করার জন্য কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।’

সিইপিজেডকে স্টিলমিল বাজার থেকে শুরু করে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত এলাকায় থাকেন এমন শ্রমিকদের নিয়ে উৎপাদন কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কয়েকটি কারখানা গ্রামের বাড়ি থেকে শ্রমিকদের আনার জন্য চাপ দিয়েছে শোনার পর তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

যদিও নির্দিষ্ট করে দেওয়া এলাকার বাইরে থেকেও প্রচুর শ্রমিক ইপিজেডে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমই ‘র পরিচালক মোহাম্মদ আতিক বলেন, ‘চট্টগ্রামের কারখানাগুলোতে ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ শ্রমিক কাজ করছে। শহরের কারখানায় শ্রমিক উপস্থিতি বেশী হওয়ার কারণ এই শ্রমিকদের বেশিরভাগই কারখানার আশেপাশেই বাস করে। এ ছাড়া ছুটির মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে খুব বেশি শ্রমিক গ্রামের বাড়িতে যায়নি। এরপরেও বিজিএমইএ’র ৪ পরিচালকের নেতৃত্বে ৪টি কমিটি করা হয়েছে মনিটরিংয়ের জন্য।’

এদিকে পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের এমন উপস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়বে বলে বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট আব্দুর রব মাসুম তার ফেইসবুক লাইভে গত ৩ দিনের চট্টগ্রামে কভিড-১৯ এর সংক্রমণের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘গত সোমবার চট্টগ্রামে ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় ১১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামের নমুনা ছিল ৩৫ টি। এই ৩৫ টি নমুনায় চট্টগ্রাম জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ জন। মঙ্গলবার ৬ জন এবং বুধবার ৫ জন। শনাক্তের হার প্রায় ২৫ শতাংশ। যদি নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বেশি হতো নিশ্চিতভাবে আরো বেশি সংখ্যক রোগী পাওয়া যেতো।’ গার্মেন্টস খোলার কারণে আগামী ৭ থেকে ১৪ দিন পরে চট্টগ্রামে সংক্রমণ বাড়বে বলে জানান তিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন