সিনহা খুনের মামলায় গ্রেফতার পুলিশের সাক্ষীদের অপহরণের অভিযোগে মামলা

সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারিশবুনিয়া এলাকা থেকে নুরুল আমিনসহ তিনজনকে বাড়ি থেকে অজ্ঞাত একদল লোক জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। স্বজনরা বিষয়টি পুলিশকে জানালে রাতেই থানায় জিডি নথিভুক্ত করা হয়।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার ||

মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে খুনে পুলিশের মামলার যে তিন সাক্ষীকে র্যাব গ্রেফতার করেছে তাদেরকে অপহরণ করা হয়েছে বলে থানায় মামলা করেছেন একজনের মা। টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজকে মঙ্গলবার বিকেলে কক্সবাজার আদালতে হাজির করে সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় র‌্যাব। তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে, যার শুনানি হবে বুধবার।

পুলিশ পরিদর্শক মো. আবুল ফয়সল জানিয়েছেন, বিকেলে গ্রেফতার দেখানো হলেও এরআগে সকালে নুরুল আমিনকে অপহরণের অভিযোগে টেকনাফ থানায় মামলা করেছেন নুরুল আমিনের মা। নুরুল আমিনসহ তিনজনকে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তারের বিষয়টি বিকালে তাদের আদালতে হাজির করার আগে পুলিশ ‘জানত না’ বলে জানিয়েছেন পরিদর্শক ফয়সল।

নুরুল আমিন মারিশবুনিয়া এলাকার নাজিম উদ্দিনের ছেলে। নুরুলসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার তিনজনই সিনহা রাশেদ খুনের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলার সাক্ষী বলে জানিয়েছেন পরিদর্শক আবুল ফয়সল। তিনি বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মারিশবুনিয়া এলাকা থেকে নুরুল আমিনসহ তিনজনকে বাড়ি থেকে অজ্ঞাত একদল লোক জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। স্বজনরা বিষয়টি পুলিশকে জানালে রাতেই থানায় জিডি নথিভুক্ত করা হয়।

পরে রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পুলিশ কর্মকর্তারা। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মঙ্গলবার সকালে নুরুল আমিনের মা খালেদা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।

সিনহা খুনে পুলিশের করা মামলার ৩ সাক্ষী গ্রেফতার করেছে র‌্যাব

কক্সবাজারে তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের উত্তরার বাসায় খোলা হয়েছে শোক বই।

মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান খুনে পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এই তিনজনই টেকনাফের বাসিন্দা। এরা হলেন, মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ। তারা তিনজনই টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা।

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আশিক বিল্লাহ মঙ্গলবার বলেন, “তারা এই ঘটনার মামলায় পুলিশের করা সাক্ষী ছিল। হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।” সোমবার রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ জানান।

মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে র‌্যাব ওই তিনজনকে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (টেকনাফ-৩) মো. হেলাল উদ্দিনের আদালতে হাজির করে সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় বলে জানান কক্সবাজার আদালত পুলিশের পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশ।

তিনি বলেন, মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বিচারক বুধবার রিমান্ড শুনানির দিন রেখেছেন।

দুই বছর আগে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া সিনহা রাশেদ ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য গত প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের দুই শিক্ষার্থী শাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।

গত ৩১শে জুলাই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা রাশেদ। ওই সময় তার গাড়িতে সিফাত ছিলেন।

সিনহা নিহতের ঘটনায় এবং গাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের অভিযোগে টেকনাফ থনায় দুটি মামলা করে পুলিশ, যাতে সিনহা এবং তার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আসামি করা হয়।

আর তারা যেখানে থেকে কাজ করছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে গ্রেপ্তার করার সময় মাদক পাওয়া যায় অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে রামু থানায় আরেকটি মামলা করা হয়।

পুলিশের করা এই তিন মামলার পর গত ৫ অগাস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতসহ নয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এই মামলায় আত্মসমর্পণ করে এখন কারাগারে আছেন ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য।

এদিকে আদালতের নির্দেশে চারটি মামলায়ই এখন তদন্ত করছে র‌্যাব। এরইমধ্যে পুলিশের তিন মামলায় গ্রেপ্তার সিফাত ও শিপ্রাকে জামিন দিয়েছে আদালত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন