|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ||
শোক সামলাতে পারছে না লেবাননের বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত রাসেল আলীর পরিবার। ২৩ বছর বয়সের রাসেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কাইমপুর ইউনিয়নের জাজিসারের জনৈক মুরশিদ আলীর ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিন ভাই আর তিন বোনের মধ্যে রাসেলই সবার ছোট। বড় ভাই সাদেক আলীও লেবাননে চাকরি করেন। ঢাকায় সরকারি চাকরি করেন মেজ ভাই লিয়াকত আলী। বাবা মুরশিদ আলীও লেবাননে কাজ করেছেন প্রায় ২৪ বছর। তিন বছর আগে তিনি দেশে আসেন। তার আগেই ছোট ছেলে রাসেলকে নিয়ে গেছেন লেবাননে। ভাগনে রেজাউল সিকদার, জামাতা গোলাম রসুল এবং ছোট ভাই জসিম উদ্দিনও মুরশিদ আলীর মাধ্যমেই লেবাননে গিয়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন।
বৈরুত বিস্ফোরেণ ছেলে রাসেল ও ভাগনেকে হারিয়েছেন মুরশিদ আলী। আহতাবস্থায় হাসপাতালে রয়েছেন বড় ছেলে ও মেয়ের জামাতা। এমন বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে নির্বাক হয়ে গেছেন মুরশিদ আলী। কথা বলতে পারছিলেন না শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছেন আর নিরবে চোখের জল ফেলছেন।
কসবার জাজিসার গ্রামের তিন শ’র বেশী মানুষ ভাগ্য ফেরাতে লেবাননে গেছেন। যে কারণে জাজিসারকে অনেকেই চেনেন লেবানন গ্রাম হিসেবে। বৃহস্পতিবার ৬ই আগষ্ট বিকেলে নিহত রাসেল আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে হৃদয়বিদারক দৃশ্য। সবাই শুধু কাঁদছেন। মা পারুল আক্তার কোনোভাবেই ছোট ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
ছবি তুলতে গেলে মা পারুল আক্তার বলে ওঠেন, ‘কার ছবি তুলবেন? ছবি তুললে তো আমার ছেলে আর ফিরে আসবে না। আমার ছেলেকে শেষবারের মতো দেখার ব্যবস্থা করে দেন।”
- দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন
- নিজ ছাত্রকে বলাৎকারের পর গলা টিপে খুন করলো মাদ্রাসার ‘বড় হুজুর’
- মৃত্যুদিনে জাতীয় কবি নজরুলকে স্মরণ করলেন দেশের মানুষ
- ইভ্যালিতে যমুনা গ্রুপের বিনিয়োগসিদ্ধান্ত নিরীক্ষার পর
- কাবুলে আইএসের বোমায় নিহতের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৯০ জন
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, লেবাননের বৈরুতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ৪ বাংলাদেশিসহ মারা যান ১৩৫ জন। প্রায় হাজার পাঁচেক আহত মানুষ আর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে শোকবিপর্যস্ত গোটা লেবাবন।
বিস্ফোরণের পর থেকেই রাসেল আলী, রেজাউল সিকদার, সাদেক আলী, গোলাম রসুল ও জসিম উদ্দিন কেউ কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। জসিম উদ্দিন বেড়াতে গিয়েছিলেন অন্য এলাকার এক বন্ধুর কাছে। সেখান থেকে ফিরে হাসপাতালে হাসপাতালে খুঁজেছেন স্বজনদের। গত বুধবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়ে শনাক্ত করেন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর গ্রামের বাসিন্দা ভাগিনা রেজাউল সিকদারের মৃতদেহ। আরেক হাসপাতালে পেয়েছেন ভাতিজা রাসেল আলীকে মৃত অবস্থায়। সেখানে আহত অবস্থায় পেয়েছেন ভাতিজা সাদেক আলী ও ভাতিজি জামাতা গোলাম রসুলকে। তিনি বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছেন মরদেহ দুটি রাখা হয়েছে হাসপাতালের হিমঘরে। অন্যরা আহত হলেও বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন।
নিহত রাসেলের মেজ ভাই লিয়াকত আলী বলেন, জসিম চাচা খুঁজতে খুঁজতে হাসপাতালে গিয়ে আমার ছোট ভাই ও ফুফাতো ভাইয়ের লাশ মরদেহ পেয়েছেন। তাদের মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করতে সরকারসংশ্লিস্টদের প্রতি অনুরোধ জানান লিয়াকত আলী।
জাজিসার গ্রামের বাসিন্দা ও লেবাননে থাকা আরেক প্রবাসীর বাবা কবির হোসেন বলেন, লেবাননে জাজিসার গ্রামের চার-পাঁচ’শ লোক থাকেন। বিস্ফোরণ এলাকাতেই একই পরিবারের লোকজন থাকতেন। মুরশিদ আলীর পরিবারের দুজন মারা গেছেন, অন্য দুজন আহত হয়েছেন। তবে গ্রামের অন্য কেউ মারা না গেলেও গ্রামের প্রবাসী পরিবারগুলো এখনো জানতে পারছেন না তাদের স্বজনরা কে কেমন আছেন।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ উল আলম বলেন, লেবাননে বিস্ফোরণে নিহত রাসেল আলীর মরদেহ দেশে আনার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে। নিহতের বাড়িতে গিয়ে তাদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।