|| সারাবেলা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ||
বিশেষজ্ঞদের মতামতকে ভুল প্রমাণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনাই প্রমাণ করেছেন সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারলে করোনা ভাইরাসের মতো দুর্যোগ মোকাবেলা সম্ভব। সোমবার ৩রা আগস্ট চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশের বিরোধী দল ঘরের মধ্যে বসে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে টেলিভিশনে উঁকি দিয়ে দিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন। আমরা একদিনও বসে ছিলাম না, জনগণের পাশে থাকতে গিয়ে আমাদের দলের অনেক নেতা, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, অনেকে মারাও গেছেন। আমরা জানি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলে কি হতে পারে, সেটি মাথায় রেখেই কাজ করেছি। সংকট মোকাবেলায় জনগণের পাশে থাকতে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে এমন শিক্ষাই দিয়েছেন।”
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিইউজে’র সাধারন সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম। এসময় সিইউজে নেতারা তথ্যমন্ত্রীকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি দেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা মাথায় রেখে নানা ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। যারা বেতন পাচ্ছেন না, যারা চাকরিচ্যুত কিংবা দীর্ঘদিন ধরে বেকার এই তিন ক্যাটাগরির সাংবাদিকদের মধ্যে যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য এককালীন সহায়তা দেওয়ার জন্য তিনি আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা প্রথম ধাপে সারাদেশে দেড় হাজার সাংবাদিকদের এককালীন ১০ হাজার টাকা করে অনুদানের চেক দিয়েছি। এটি এই দেড় হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, পরবর্তী পর্যায়ে আরো চেক দেওয়া হবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা জেনে নিশ্চিত খুশি হবেন, আমাদের আশপাশের দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কাতেও সাংবাদিকদের এধরনের সহায়তা করা হচ্ছেনা। সেখানে সহায়তা করা হচ্ছে শুধু যারা করোনায় মারা যাচ্ছেন তাদেরকে। আমরাও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের কারণে কেউ যদি মারা যায় তাহলে তাদেরকেও এককালীন তিন লাখ টাকা করে অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে এই অর্থসহায়তা দেওয়া হয়েছে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, করোনা ভাইরাসের মধ্যে প্রথম মাসে সবকিছু বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে অনেককিছু খুললেও এখনো অনেক কিছু খোলেনি। কিন্তু সাংবাদিকদের কাজকর্ম কখনো বন্ধ ছিলনা। সাংবাদিকরা এই করোনা ভাইরাসের মধ্যে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। সংবাদ সংগ্রহ করেছেন, সংবাদ পরিবেশন করেছেন, যে কারণে পত্রিকা বের হচ্ছে, টেলিভিশনে সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। সাংবাদিক ভাই-বোনেরা যদি এভাবে ঝুঁকি নিয়ে কাজ না করতো তাহলে পত্রিকায় ও টেলিভিশনের সংবাদ পরিবেশন করা সম্ভব হতো না। এর জন্য বহু সাংবাদিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ভাই-বোন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন।
তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমি তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে শুরু থেকেই সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ার মালিকপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ জানিয়েছিলাম, যাতে সাংবাদিক ভাই-বোনদের বেতন ভাতা ঠিকমতো দেয়া হয়। করোনা ভাইরাসের কারণে এমন কোন সেক্টর নাই যাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি, সমগ্র বিশ্বেই এটি হচ্ছে। তাই আমি বারংবার অনুরোধ জানিয়েছিলাম, এই করোনাভাইরাসের মধ্যে আমরা কষ্টটা যেন ভাগ করে নিই। এই দুর্যোগ কিন্তু সব সময় থাকবেনা, তাই দুর্যোগের সময় আমাদের অসুবিধা হলেও আমি সমস্ত গণমাধ্যমের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাবো সাংবাদিকদের বেতন ভাতা যতোটুকু সম্ভব সঠিক ভাবে যেন পরিশোধ করা হয়।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দেশের তুলনায় সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। যদি তাই না হতো তাহলে আমাদের দেশে মৃত্যুর হার এত কম হতো না। মৃত্যুর হার উন্নত দেশগুলোর চেয়ে তো কম বটেই এমনকি আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ভারত পাকিস্তানের চেয়েও কম।
পান থেকে চুন খষলেই হৈ হৈ রৈ রৈ করা সঠিক নয় জানিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রথম দিকে চট্টগ্রামে অনেক অসুবিধা ছিল, আইসিইউ বেড থেকে শুরু করে নরমাল বেডের সমস্যা ছিল। আজকে আইসিইউ বেড খালি আছে, নরমাল বেডও খালি। প্রথমদিকের পত্র-পত্রিকায় যে সংবাদগুলো এসেছে সেগুলো আমার চোখে পড়েছে। চট্টগ্রামে রোগী ৫’শ বেড আছে ৪’শ এধরণের খবর পরিবেশিত হয়েছে। অথচ করোনা আক্রান্ত শতকরা ৮০ ভাগের বেশি হাসপাতালে যেতে হয় না।
তিনি বলেন, সংবাদপত্র এবং গণমাধ্যম হচ্ছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সংবাদপত্র শিল্পকে সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য, সমাজের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়ার জন্য, দায়িত্বশীলদের ভূমিকা যাতে আরো সঠিক ভাবে পালন করতে পারে সেই ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। সুতরাং যখন কাজের ত্রুটি হয় সেটি অবশ্যই গণমাধ্যম উঠে আসবে। যখন কাজ ভাল হয় তখন সেটিও গণমাধ্যমে উঠে আসা প্রয়োজন। আজকে যে ভালো পরিস্থিতিতে আমরা আসতে পেরেছি সেটিও গণমাধ্যমে উঠে আসা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
পরে চট্টগ্রাম বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে করোনা ভাইরাসসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন তথ্যমন্ত্রী। এসময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বিসহ চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।