রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যে ভরাট হচ্ছে টেকনাফের খাল বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

কক্সবাজারের টেকনাফে বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিষাক্ত ও দূষিত বর্জ্যে ভরে যাচ্ছে উপজেলার খালগুলো। এসব বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। খালের পানি দূষিত হওয়ায় তা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে উঠছে চাষাবাদের জন্য।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, টেকনাফ (কক্সবাজার) ||

কক্সবাজারের টেকনাফে বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিষাক্ত ও দূষিত বর্জ্যে ভরে যাচ্ছে উপজেলার খালগুলো। এসব বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। খালের পানি দূষিত হওয়ায় তা ব্যবহার অযোগ্য হয়ে উঠছে চাষাবাদের জন্য। নষ্টে হচ্ছে পরিবেশ-প্রতিবেশ। স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে স্থানীয়দের। উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে টেকসই প্রকল্পের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক খালগুলো রক্ষার আহবান জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মানুষ।

আর টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সাইফ বলছেন, বিষয়টি আসলেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুনির্দিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ দিলে তিনি এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

পরিসংখ্যাণ বলছে, এই উপজেলায় রয়েছে ৮টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এসব শিবিরে বাস করছে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। এসব ক্যাম্পের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে জাদিমোরা উমরখাল, বৃটিশ পাড়া খাল, মোছনী খাল, ছ্যুরিখাল, লেদা খাল, আলীখালী খাল, ঊনছিপ্রাং খাল, চাকমারকূল পালংখালী খাল ও বাহারছড়া শামলাপুর মনখালী খাল।

রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত বর্জ্য ছাড়াও শিবিরগুলোতে সেবা-পরিষেবা দিচ্ছে এমন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নানা প্রকার বর্জ্য এসে পড়ছে এসব খালে। বর্জ্যের কারণে ইতোমধ্যেই অনেক খালের গতিপথ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় পুকুর-ডোবার মতো হয়ে যাওয়া খালে অনেক রোহিঙ্গা শিশু গোসল করে আক্রান্ত হচ্ছে নানানো অসুখে।

এসব খাল দিয়ে পানি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পানি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ায় ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার সেচনির্ভর প্রায় ৫শ হেক্টর জমির চাষাবাদ। বদ্ধ এসব জন্ম নিচ্ছে নানানো জীবানু। বাতাসে ছড়াচ্ছে উৎকট গন্ধ। যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে স্থানীয় জনসাধারণকে।

রোহিঙ্গাদের যত্রতত্র ফেলা বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খালগুলোর দু’পাশ। ভরাট হচ্ছে খালের তলদেশও। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই আর বর্ষায় প্লাবিত হচ্ছে উপজেলার নিম্নাঞ্চল। স্থানীয়রা বলছেন, এখনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আসছে বর্ষাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও এর আশপাশের নিচু এলাকা তলিয়ে যাবে।

তাদের দাবি, দ্রুত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাল রক্ষা করতে হবে। ক্যাম্পের জন্য নেওয়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়াতে হবে নজরদারি। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ফেলা বর্জ্যে দূষিত এবং ভরাট হয়ে যাওয়া খান পুনর্খননের দাবীও করছেন তারা।

রইক্ষ্যংয়ের কৃষক নুরুল আলম বেশ ক্ষোভ নিয়েই বলেন, রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়ত খালের মধ্যে বর্জ্য ফেলছে। ফলে খালের পানি যেমন দূষিত হচ্ছে, তেমনি খালও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। খালে রোহিঙ্গার বর্জ্য ফেলা বন্ধের দাবী জানিয়ে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে খান খনন কর্মসূচী বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেন কৃষক নুরুল আলম।

আলীখালীর ছৈয়দ আহমদ সর্দার জানান, খালের পানি দিয়ে শুস্ক মৌসুমে কৃষকরা চাষাবাদ করত। রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে তাদের নিক্ষিপ্ত বর্জ্যে খালের পানি দূষিত হওয়ায় এখন চাষাবাদ করা যাচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ভবসিন্ধু রায় বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে টেকনাফে প্রায় ৫শ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আনা যাচ্ছে না। ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহ এক সময় কৃষি এবং কৃষকের দখলে ছিল। রোহিঙ্গাদের নিক্ষিপ্ত বর্জ্যে খালের পানি বিষাক্ত হয়ে যাওয়ায় সেচ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে।

পরিবেশ রক্ষায় এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শেখ নাজমুল হুদা। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জ এবং রোহিঙ্গাদের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের আন্তরিক সহযোগিতার ওপরেও গুরুত্ব দেন তিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন