রুপচাঁদার নামে মানুষখেকো পিরানহা বিক্রি!

।। সারাবেলা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ।।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মাছের বাজারগুলোতে আফ্রিকান ভয়ংকর প্রাজাতির মানুষখেকো পিরানহাকে রুপচাঁদা নাম দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু চক্র। ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে সরকার ও মৎস্য অধিদপ্তর আফ্রিকান মাগুর ও পিরানহা মাছের পোনা উৎপাদন, চাষ, বংশ বৃদ্ধিকরণ,বাজারে ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণভাবে  নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও অনেকেই মানছেনা সেই নিষেধাজ্ঞা।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন,  এটি  একটি ভংকর প্রাণী। বড় আকারের নিরীহ মাছ ভেবে দৃষ্টি এড়ালেই ফাঁসতে হবে। অসাবধানতা বসতো কেউ যদি  রূপচাঁদা ভেবে ভুল করে তাহলে সামাজের জীববৈচিত্রের উপর পড়বে এর প্রভাব ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফিশারিঘাট, ফ্রি পোর্ট, আন্দরকিল্লাসহ নগরীর অলিগলি পাড়া – মহল্লায় ভেনগাড়িতে নিয়ে কেজি প্রতি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়  অনায়াসে বিক্রি হচ্ছে এই রাক্ষুসে মাছ। সাগরের সুস্বাদু জাতীয় মাছের জায়গায় এই নিষিদ্ধ পিরানহাকে রুপচাঁদা হিসাবে চালিয়ে দিচ্ছে কিছু অতিমোনাফাভোগী ব্যবসায়ীরা। চাঁদা মাছের তুলনায় এই নিষিদ্ধ পিরানহার মূল্য তুলনামূলকভাবে অনেক কম বিধায় ব্যবসায়ীরা অল্প পুঁজিতে অধিক লাভের আশায় এই মাছ বিক্রিতে প্রাধান্য দিচ্ছে। নগরীর ভ্রাম্যমাণ ভাতের দোকান ও নগরের অধিকাংশ নিম্নমানের ভাতের দোকানগুলোতে স্বল্পদামে এই মাছগুলো চাঁদা মাছ হিসাবে বিক্রি করা হয়।

মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের জলজ পরিবেশের সঙ্গে পিরানহা সংগতিপূর্ণ নয়। এগুলো রাক্ষুসে স্বভাবের। অন্য মাছ ও জলজ প্রাণীদের খেয়ে ফেলে। দেশীয় প্রজাতির মাছ তথা জীববৈচিত্র্যের জন্য এগুলো হুমকিস্বরূপ। এ কারণে সরকার ও মৎস্য অধিদপ্তর আফ্রিকান মাগুর ও পিরানহা মাছের পোনা উৎপাদন, চাষ, বংশ বৃদ্ধিকরণ তথা বাজারে ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে।

জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিকর এই রাক্ষুসে মাছ আমদানি, বাজারজাত ও বিক্রি বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু তা সত্তেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসব মাছ বিক্রি করছে প্রকাশ্যে। বেশি লাভের আশায় তারা ওই মাছকে লালচাঁদা মাছ হিসাবেও মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে। এতে বোকা বনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ লোকজন।


নগরীর ফিশারিঘাটে মাছ কিনতে আসা সাজ্জাত হোসেন বলেন, এটি সমুদ্রের চান্দা মাছ। দুই কেজি কিনলাম ৩০০ টাকা দিয়ে। এটা চান্দা নয়, রাক্ষুসে পিরানহা মাছ বলতেই তিনি বলেন, কে বলছে আপনাকে, সবাইতো কিনছে। জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতা মো. সেলিম, এই মাছ বিক্রয় যে নিষিদ্ধ, তা তিনি জানতেন না। মানুষ কিনে তাই বিক্রি করি। শুধু ফিশারিঘাটে নয় চট্টগ্রামের অনেক বাজারে বিক্রি হয় এই মাছ।


এই মাছ কোথায় চাষ করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের কোথাও হয় কিনা আমি জানিনা । আমারা কুমিল্লাসশহর থেকে নিয়ে আসি। এছাড়া এই মাছ ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ভালুকা  অঞ্চলের ডোবা বা পুকুরে পিরানহার উৎপাদন ও চাষ করা হয়  বলে কয়েকজন বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে।


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় সভাপতি প্রফেসর ড. গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আসমত বলেন, মানুষের শরীর জন্য অতটা ক্ষতিকর না হলেও আফ্রিকান এই রাক্ষুসে মাছ আমাদের পরিবেশ ও জীব বৈচিত্রের জন্য বড় ধরনের হুমকি। আফ্রিাকান মাগুর মাছের মতো এই মাছটিও অন্য মাছগুলো খেয়ে ফেলে । এমনকি মানুষকে কামড় দিলে শারীরিকভাবে ক্ষতি হতে পারে ।


মৎস্য অধিদফতার থেকে এই মাছ বিক্রি, উৎপাদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফরহানা লাভলী বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় লিফলেট দিয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছে।গত ৩০ জুন বাকলিয়া কালামিয়া বাজার এলাকায় নিষিদ্ধ আফ্রিকান মাগুর জব্দ করে আমার এতিমখানায় পাঠিয়েছে। যারা নিষিদ্ধ মাছ বিক্রি করেন তাদের আমার চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছি প্রতিনিয়ত। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।


তবে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, মাত্র দুই- তিনি জন লোক নিয়ে আমরা কতটুকুই বা সামাল দিতে পারবো। যারা এই মাছ কিনেন তাদেরও সচেতন হতে হবে। তারা না কিনলে বিক্রেতারা বিক্রি করবে না-  যোগ করেন ফারহানা লাভলী।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন