মারুফকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন এসআই হেলাল

আত্মহত্যাকে ঘিরে নানান রহস্য ইতিমধ্যেই দানা বাঁধতে শুরু করেছে। কেন এই আত্মহত্যা সেই তদন্তে নেমেছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা পুলিশের একটি টীম।

।। সারাবেলা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম।।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বাদামতলী মোড় এলাকায় মা-বোনকে পুলিশের নির্যাতনের অপমানে কিশোর মারুফ আত্মহত্যার আসল রহস্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। 

তার আত্মহত্যাকে ঘিরে নানান রহস্য ইতিমধ্যেই দানা বাঁধতে শুরু করেছে। কেন এই আত্মহত্যা সেই তদন্তে নেমেছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা পুলিশের একটি টীম।

আত্মহত্যার আসল কারণ জানতে চুলচেরা তদন্তে নেমেই উঠে এসেছে কিশোর সালমান ইসলাম মারুফকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন এসআই হেলাল উদ্দিন। আর এ ঘটনায় তার মা ও বোনকে লাঞ্ছনার পর সে আত্মহত্যা করে। 

আলোচিত মারুফ আত্মহত্যার ঘটনায় ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হেলাল খানকে সাময়িক বরখাস্ত ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশকে শোকজ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ মারুফের আত্মহত্যায় অবশেষে ক্লোজড পুলিশ পরিদর্শক হেলাল খান

কর্মকর্তাদের না জানিয়ে অভিযানে গিয়ে কিশোর সালমান ইসলাম মারুফকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে চেয়েছিলেন এসআই হেলাল খান। এ ঘটনায় মা ও বোনকে লাঞ্ছনার পর আত্মহত্যা করেন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বড় মসজিদ গলির এই কিশোর।

পুলিশের তদন্তেই এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে এসআই হেলালকে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়। এরপর ডবলমুরিং থানার এসআই হেলালকে বরখাস্ত ও ওসি সদীপকে শোকজ করা হয়েছে।

সোমবার সিএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির প্রধান নগর গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি (পশ্চিম) মোহাম্মদ মনজুর মোর্শেদ।

১৮ পৃষ্ঠার ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার পূর্বাপর তুলে ধরা হয়। মারুফের পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় সংশ্লিষ্ট ১৭ জন এবং ১৫ জন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

তদন্ত কমিটির প্রধান মনজুর মোর্শেদ বলেন, ‘সেদিন এসআই হেলাল ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাননি। থানায় এ সংক্রান্ত কোনো জিডি এন্ট্রি নেই। অভিযানে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা যেতে হলে এ সংক্রান্তে থানায় জিডি করতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘সিনিয়র কর্মকর্তাদের না জানিয়ে অভিযানে গিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন এসআই হেলাল। মারুফ ও তার মা-বোনকে মারধর করে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। যার ফলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসআই হেলালকে বরখাস্ত করার সুপারিশের পাশাপাশি এ ঘটনায় থানার ওসির তদারকির ‘ঘাটতি ছিল’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।’

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এক্ষেত্রে শৃঙ্খলা পূর্ণ আচরণ নিশ্চিত করতে পারেননি ওসি। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তাই ওসি সদীপ কুমার দাশকে শোকজ করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাকে জবাব দিতে হবে। এছাড়া এসআই হেলালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করেছে তদন্ত কমিটি।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডবলমুরিং থানার বাদামতলী মোড় এলাকায় এসআই হেলাল তার দুই সোর্সকে সাথে নিয়ে কিশোর মারুফকে ধরতে গেলে মারুফ তাদের চিনতে না পেরে এসআই হেলালের সাথে বির্তকে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় তার মা-বোন এসে পুলিশের কাছ থেকে মারুফকে ছাড়িয়ে নিতে হাতাহাতি শুরু করেন। এক পর্যায়ে এসআই হেলালের হাত থেকে মারুফ পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ ও সোর্স মিলে মারুফের মা-বোনের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আটক করে নিয়ে যায়। এ খবর শুনে ওই রাতেই চাচার ঘরে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে কিশোর মারুফ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন