|| মোহাম্মদ বশির, নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) থেকে ||
নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার তল্লার সর্দার পাড়া বড় মসজিদ বায়তুস সালাহেতে এসি বিস্ফোরনে নিহত একজন মসজিদের মুয়াজ্জিম কাম ওয়াক্তিয়া নামাজের ইমাম হাফেজ মাওলানা দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া। শুধু তিনিই নন, বিস্ফোরনে মারা গেছেন তার ১৭ বছরের ছেলে জোনায়েদ হোসেনও। যিনি বাবার কাছে থেকেই পড়াশুনা করতেন। অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসাও চলছিল তার।
সাতচল্লিশ বছর বয়সী মাওলানা দেলোয়ার হোসেন শুক্রবার এশার নামাজের আগে স্ত্রী ফাহমিদা আক্তারকে ফোন করে জানান, “আমার এখানে ভালো লাগছে না। ২/১দিনের মধ্যে অসুস্থ জোনায়েদ হোসেনকে নিয়ে চাকরি ছেড়ে একেবারে বাড়ি চলে আসবো।”
ইমাম হাফেজ মাওলানা দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া ছেলেসহ সেই বাড়ি ফিরলেন তবে লাশ হয়ে চিরদিনের জন্য। নিহত হাফেজ মাওলানা দেলোয়ার হোসেন নাঙ্গলকোটের ঢালুয়া ইউনিয়নের বদরপুর মধ্যপাড়ার মৃত হাফেজ মাওলানা শফিকুর রহমানের ছেলে। বাবা-ছেলের এমন মৃত্যুতে গোটা গ্রামে চলছে শোকের মাতম।
হাফেজ দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়ার বড় ছেলে জোনায়েদ হোসেন নিউ খানপুর হাসপাতাল রোড কাওমি মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণীতে এবং ছোট ছেলে হাফেজ জাকারিয়া একই এলাকার জামেয়া হাজী সাইদুদ্দিন হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। দেলোয়ার হোসেন দুই ছেলেকে নিয়ে ওই এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছিলেন। নিহত হাফেজ দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া কালির বাজার আমলাপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে লেখাপড়া শেষ করে বাইতুস সালাহ মসজিদে বিগত প্রায় ২৫ বছর থেকে ইমামতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাফেজ দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার তিন মেয়ে সুমাইয়া আক্তার, সুরাইয়া আক্তার ও ছোট মেয়ে ফাইজা আক্তারকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। ফাহমিদা আক্তার প্রায় সময়ই সন্তানদের নিয়ে স্বামীর কর্মস্থলে থাকতেন। দেলোয়ার হোসেনের গ্রামের বাড়িতে ভিটে-মাটি ছাড়া কিছুই নেই।
দেলোয়ার হোসেন শ্যালক জোবায়ের হোসেন শনিবার দুপুর ২টায় সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, দুলাভাই ও ভাগ্নের লাশ নিতে তিনি ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে রয়েছেন। লাশ নেওয়ার পর নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার তল্লা জামে মসজিদ এলাকায় প্রথম নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। পরে শনিবার সন্ধ্যায় নাগাদ নাঙ্গলকোটের ঢালুয়ার বদরপুরে দ্বিতীয় নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হবে।
হাফেজ দেলোয়ার হোসেন ও তার ছেলে জোনায়েদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানান ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল হাছান ভূঁইয়া বাছির। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতারও কথা জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার লামইয়া সাইফুল বলেন, দেলোয়ার হোসেন ও তার ছেলের লাশ গ্রামের বাড়িতে আসলে তাদের দাফনসহ পরিবারের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা এবং আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।