|| সারাবেলা প্রতিনিধি, ফেনী ||
ফেনীতে পৌঁছানোর পর হামলার শিকার হয়েছে ধর্ষণবিরুদ্ধ লংমার্চ। এতে ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়সহ ৮-৯ জন আহত হয়েছের। আহতদের মধ্যে বিজয়, শাহাদাত, শাওন অভির নাম জানা গেছে। লংমার্চ শনিবার দুপুরে শহরের খাজুরিয়াতে পৌঁছলে তাতে হামলা করে একদল যুবক।
লংমার্চে অংশ নেওয়া সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আল কাদরি জয় জানান, বেলা পৌনে ১২টার দিকে তারা শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশ করে মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়ক দিয়ে পাগলা মিয়া সড়কে তাদের জন্য রাখা বাসের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় খাজুরিয়াতে বেশ কয়েকজন যুবক তাদের ওপর লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। এতে ৮-৯ জন আহত হয়েছেন। আহতদেও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ফেনী শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ফেনীতে সমাবেশের পরিচালক পংকজ দেবনাথ সূর্য জানান, ‘এ হামলা ন্যাক্কারজনক। আমাদের কর্মীদের হামলা করে দমিয়ে দিতে চায় সন্ত্রাসীরা।’
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/10/Long-March-700x371.jpg?resize=700%2C371&ssl=1)
লংমার্চে থাকা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন জানিয়েছেন, “সকাল ১০টার দিকে আমরা ফেনীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ শুরু করি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়। তারপর আমরা যখন বেগমগঞ্জের উদ্দেশে বাসে উঠতে যাই, তখন একদল যুবক, যারা, ছাত্রলীগ-যুবলীগের, তারা আমাদের উপরে অতর্কিতে হামলা করে। তাদের সঙ্গে পুলিশও যোগ দেয় হামলায়।”
এর আগেও ট্রাংক রোডে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিও হয়েছে লং মার্চে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের। এসময় পুলিশ লং মার্চের তিন কর্মীকে মারধর করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কর্মীদেও প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ সরে যায়। শনিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের ট্রাংক রোডের দোয়েল চত্বরে পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতির এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই সময় পাশেই শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ চলছিল। বাইরে ট্রাংক রোডের দোয়েল চত্বরে আগে থেকে ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর ছবি সম্বলিত বড় বাঁধানো ফেস্টুন বসানো ছিল। শনিবার সমাবেশ চলাকালে কে বা কারা ফেস্টুনের ওপর লাল রঙ দিয়ে ‘ধর্ষকদের পাহারাদার’ কথাটি লিখে দেয়।
ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, লং মার্চ সহ্য করতে না পেরে ট্রাংক রোডে সমাবেশ শেষে তারা হামলা চালিয়ে মারধর ও ৬টি গাড়ী ভাংচুর করে। এতে অন্তত ২শ নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে তার দাবী।
লংমার্চে হামলা প্রসঙ্গে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল জানান, লং মার্চকারীরা বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর ছবিতে ‘ধর্ষকদের পাহারাদার’ লেখায় সাধারণ মানুষ প্রতিহত করেছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ষনের শাস্তি মৃত্যুদন্ড আইন করলেও একটি চক্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করেছে।
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/10/long_march_3-700x368.jpg?resize=700%2C368&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/10/long_march_3-700x368.jpg?resize=700%2C368&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/10/long_march_3-700x368.jpg?resize=700%2C368&ssl=1)
বামপন্থী সংগঠনগুলোর ছাত্র-কর্মীদের জোট ধর্ষণ ও নির্যাতনবিরোধী লংমার্চের অংশ হিসেবে ফেনী শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের ফেনী জেলা সংগঠক সালমা আক্তার কলি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ফেনী শহর শাখার সাধারণ সম্পাদক পংকজ নাথ সূর্যের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র ফেনী জেলার সংগঠক জোবেদা আক্তার কচি, উদীচী ফেনী সংসদের সহ-সভাপতি মৌসুমি সোম, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মেহেদি হাসান নোবেল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়, কেন্দ্রীয় যুব ইউনিয়নের সহ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, নারী মুক্তি কেন্দ্রের নেত্রী নাইমা খান মনিকা প্রমূখ। পরে সোয়া ১২টার দিকে লংমার্চ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেয়।
ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী গণজাগরণ তৈরির লক্ষ্যে শুক্রবার শাহবাগ থেকে নোয়াখালীর পথে এই লংমার্চ শুরু করে ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’। বাম ছাত্র সংগঠনগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও নারী সংগঠন এতে যোগ দিয়েছে।
শনিবার বিকালে নোয়াখালী শহরে সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শেষ হবে, যে জেলায় বিবস্ত্র করে এক নারীকে নির্যাতনের পর সারাদেশে নিন্দার ঝড় বইছে।