|| সারাবেলা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ||
দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিএনপি নানা ষড়যন্ত্র করছে দাবি করে আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েই তারা ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে।
পাকিস্তানি গোয়েন্দা ও গোয়েন্দা সংস্থার সাথে বিএনপির দহরম-মহরমকে বহু পুরনো জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর সবশেষ প্রমাণ হচ্ছে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের বৈঠক, যা প্রচণ্ড নিন্দনীয়। তিনি জানান, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বিএনপিকে ৫ কোটি টাকা দেয়া হয়েছিল। এটি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান আদালতে জবানবন্দিতেই বলেছেন বলেও দাবি করেন তথ্যমন্ত্রী। সৌদি আরবের জেদ্দায় বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র গোপন বৈঠকে বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
গতকাল শুক্রবার ২৫শে সেপ্টেম্বর সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ‘মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার, দৈনিক আজাদী এবং গণতন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য শেষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, প্রকৃতপক্ষে যখন করোনা ভাইরাসে পৃথিবী স্তব্ধ, মানুষ শঙ্কিত ভবিষ্যৎ নিয়ে, মানুষজন প্রচণ্ডভাবে উদ্বিগ্ন সেই সময়ে বিএনপি জনগণের পাশে না দাঁড়িয়ে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের বৈঠক করে বেড়াচ্ছে। সেটির প্রকাশ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বৈঠক, যা প্রচণ্ড নিন্দনীয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি অতীতে ষড়যন্ত্রের পথ অবলম্বন করে যে এগুতে পারেনি তারা নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে সক্ষম। না হলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে মানুষ পর পর রায় দিয়ে তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাতো না। তাই আমি বিএনপিকে অনুরোধ জানাব, ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে মানুষের পাশে দাঁড়ান, এই ষড়যন্ত্র করে কোন লাভ হবে না।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমালোচনাকে সমাদৃত করার সংস্কৃতি লালন করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও আমাদের দল আওয়ামী লীগ মনে করে সমালোচনা পথ চলাকে শাণিত করে। সমালোচনা কাজকে পরিশুদ্ধ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে। সেজন্য সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের বিকাশের নীতি নিয়ে আমাদের সরকার কাজ করছে।
তিনি বলেন, আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন বাংলাদেশে সংবাদপত্রের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪ শ। এখন দেশে দৈনিক সংবাদপত্রের সংখ্যা সাড়ে ১২ শ। তখন অনলাইন পত্রিকা ছিল হাতে গোনা কয়েকটি। এখন কয়েক হাজার অনলাইন পত্রিকা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।
প্রাইভেট টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথম যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পান। ২০০৯ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি তখন প্রাইভেট টেলিভিশন ছিল দশটা। এখন ৩০ টি প্রাইভেট টেলিভিশন সম্প্রচারে আছে, ৪৫টি প্রাইভেট টেলিভিশনের জন্য লাইসেন্স দেয়া আছে। এর বাইরে চারটি সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল চালু আছে। সংবাদ মাধ্যমের এই যে এক্সপোনেনশিয়াল গ্রোথ সেটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের সংবাদপত্র যে ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে অনেক উন্নত দেশেও এমন স্বাধীনতা নাই। ইউকে’তে ১৬৭ বছরের পুরনো পত্রিকা ছিল ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। সেটি পৃথিবীর বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ছিল একসময়। সেই পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। একটি ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে মামলা হয়েছিল। মামলার পর তাদের ওপর বিরাট জরিমানা করেছে আদালত, সেই জরিমানা দিতে না পেরে কোম্পানি পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, একজন এমপি’র বিরুদ্ধে ভুল বা অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে বিবিসি’র পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। ইউকে এবং কন্টিনেন্টাল ইউরোপে হরহামেশা ভুল এবং অসত্য সংবাদ পরিবেশনের কারণে পত্রিকা এবং গণমাধ্যমকে জরিমানা দিতে হয়। আমাদের দেশে সেটি কখনো হয়নি। সংবাদপত্র এ সমস্ত কারণে বন্ধ হয়নি। সেজন্য বলছি অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে।
সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুরে মাত্র কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল, সবগুলো সরকার নিয়ন্ত্রিত। থাইল্যান্ডে সমস্ত টেলিভিশন চ্যানেলের ফিড সরকার নিয়ন্ত্রিত। সেখানে যদি সরকারের অপছন্দনীয় কোন কন্টেন্ট থাকে সেটা বাদ দেয়া হয়। আমাদের দেশে তা হয় না। কারণ আমরা মনে করি স্বাধীন মতপ্রকাশ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সেটি বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে গত ষাট বছর ধরে বাঙালি জাতীয়তাবোধকে ধারণ করে, স্বাধীনতার চেতনা এবং স্বাধীনতার পূর্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ধারণ করে পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে দৈনিক আজাদী পত্রিকা নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে। সেজন্য দৈনিক আজাদী পত্রিকা নিশ্চয়ই সমাজ এবং রাষ্ট্রের ধন্যবাদ পাওয়ার অধিকার রাখে। এজন্য দৈনিক আজাদী পত্রিকা পরিবারকে আমিও ধন্যবাদ জানাই।
আলহাজ মোহাম্মদ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের ৫৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্বাধীন সংবাদপত্র পাঠক সমিতির আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি এসএম জামাল উদ্দিন। সেমিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ, দৈনিক আজাদী সম্পাদক লায়ন এমএ মালেক, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম সিইনসি প্রমুখ।
স্বাধীনতার প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দৈনিক আজাদী পত্রিকা বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত পত্রিকাগুলোর মধ্যে একটি। ঢাকার অনেক পত্রিকার চেয়ে দৈনিক আজাদী পত্রিকার সার্কুলেশন অনেক বেশি। এই কৃতিত্ব প্রথমত ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক সাহেবের, তিনি দূরদৃষ্টি নিয়ে এই পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীতে যারা এই পত্রিকার হাল ধরেছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে এই পত্রিকাকে অত্যন্ত সফলতার সাথে পরিচালনা করে আসছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম যখন অন্য পত্রিকা ছাপেনি তখন দৈনিক আজাদী পত্রিকা ছেপেছে। সেজন্য দৈনিক আজাদী পত্রিকা পরিবার গর্ব করে বলে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা। আজাদী শুধু পত্রিকা নয়, একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে।