ডা. ফেরদৌসকে নিজ কমিটির সদস্য দাবি করলেন বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক

|| এম. মতিন, চট্টগ্রাম থেকে ||

করোনাদূুর্যোগে উন্নত চিকিৎসাপরামর্শ নিয়ে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমেরিকা থেকে নিজের দেশে ছুটে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌস খন্দকার। করোনাভাইরাসের চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা করে এবং করোনার ভয়কে জয় করে আমেরিকায় ঘরে ঘরে গিয়ে করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেন ডা. ফেরদৌস।

তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্র ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দুঃসময়ে ১৯৯১-৯২ সালে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য।

বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি কর্ণেল রশিদের খালাতো ভাই ও আরেক খুনি খোন্দকার মোশতাক আহমেদের ভাগ্নে অভিধায় এই চিকিৎসককে নিয়ে যখন দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তোলপাড়, ঠিক তখনই এমন তথ্য জানালেন, বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন- বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী।

গতকাল রোববার ৭ই জুন রাত সাড়ে ১০টায় ডা ফয়সাল ইকবাল নিজের ফেসবুকে ৯১-৯২ সালের একটি ছবিও পোস্ট করেন। তাতে তিনি লেখেন- ‍“ছবিতে গোলাচিহ্নিত মানুষটি ফেরদৌস খন্দকার, যিনি ৯১ থেকে ৯২ সালে চমেক ছাত্রলীগের হেলাল-যোসেফ-ফয়সল কার্যকরি কমিটির সদস্য ছিলেন। তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র মেনে নেয়া যায় না।”

ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে ওঠা বির্তকের জবাবে ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, “নব্বইয়ের দশকে বিএনপি সরকারসময়ে যখন ছাত্রদল-শিবিরের আধিপত্য চলছে, ঠিক সে সময়ে ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের কমিটিতে ছিলেন ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার। রাজনীতিতে ছিল তার সক্রিয় ভূমিকা।’

তিনি আরও বলেন, “সে আমাদের সাথে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেছে। প্রত্যেটি মিছিলে- মিটিংয়ে সে ছিল। আমি যখন জেল থেকে বের হই সে আমাকে নিয়েও ক্যাম্পাসে মিছিল করে। তখন জামায়াত-বিএনপির আধিপত্যের কারণে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতি করা কঠিন ছিল। সে সময়ে ছিল তার সাহসী ভূমিকা।’

ডা. ফয়সল ইকবাল ১৯৯১-৯২ সালে চমেক ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরে চমেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর কমিটিতেই ৯১-৯২ সালে ফেরদৌস খন্দকার কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন।

দেশের মানুষকে করোনাসময়ে চিকিৎসা দেওয়ার ব্রত নিয়ে গেল বুধবার ৭ই জুন বিকেলে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিশেষ ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন ডা. ফেরদৌস খন্দকার।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকার ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠান। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে তার করোনা শনাক্তের অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়। এর ফলাফল পজিটিভ এসেছিল। এখন করোনা না থাকলেও যেহেতু তিনি বিদেশ থেকে এসেছেন তাই তাকে ব্র্যাক সেন্টারে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।

দেশে ফিরে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার পর নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন ডা. ফেরদৌস। তাতে তিনি লেখেন, “প্রিয় বাংলাদেশ। দেশে এসেছিলাম নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে করোনা নিয়ে সবার পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে। তার জন্যে জীবনের ঝুঁকি নিতেও আমি পিছপা হইনি। যখন ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে আমি দেশে এসেছি, তখন একদল লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, আমি নাকি খুনি খন্দকার মোশতাকের ভাতিজা কিংবা খুনি কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই। অথচ পুরো বিষয়টি কাল্পনিক। আমার বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে।

তিনি লেখেন, “কুমিল্লায় বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষের বাড়ি। কুমিল্লা বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য জেলা। কুমিল্লায় বাড়ি হলেই কেউ খুনি মোশতাকের ভাতিজা কিংবা কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই হয়ে যায় না। আমি স্পষ্ট করে বলছি, এই দুই খুনির সাথে আমার পারিবারিক কিংবা আদর্শিক কোনো সম্পর্ক নেই। বরং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে আমি, তাদেরকে চরম ঘৃণা করি। ফলে যারা এই খারাপ কথাগুলো ছড়াচ্ছেন, বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার; ভালো কাজে বাধা দেয়া। এটা অন্যায়। আমি তীব্র প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানাচ্ছি। সেই সাথে প্রমাণের জন্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছি। যদি মনে করেন আমার সেবা আপনাদের দরকার, তাহলে পাশে থাকুন।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন