চৌদ্দগ্রামে নিহত শিপনের মা-বাবা সবাই মাদক ব্যবসায় জড়িত

|| অনলাইন প্রতিনিধি, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) ||

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পূর্ব বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত শিপন ও পরিবারের সকলেই মাদক ব্যবসা এবং পাচারের সঙ্গে জড়িত। শিপন নিহত হওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার সংবাদ সারাবেলার এই প্রতিবেদকের কাছে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরেই কনকাপৈত ইউনিয়নের বসকরা গ্রামের আমির হোসেন, স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ও ছেলে আমজাদ হোসেন শিপন মাদকপাচার ও ব্যবসা করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় মাদক ও দাঙ্গা হাঙ্গামার বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এনিয়ে এলাকার যুবকদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এছাড়া মাস দেড়েক আগে স্থানীয় আবুল বশর তার বাড়ির পাশের খালি জায়গায় নতুন দোকান দিতে গেলে পাশের দোকানমালিক রতন ও লিটন তাতে বাধা দেয়। অভিযোগ উঠেছে আমির হোসেন ও আমজাদ হোসেন শিপন রতনের দোকানে মাদক রেখে বেচাকেনা করতো। নতুন দোকান হলে তাদের মাদক ব্যবসায় সমস্যা হবে এবং ক্রেতা কমে যাবে এই আশঙ্কায় রতনের ইন্ধনে আমির হোসেন ও আমজাদ হোসেন শিপন আবুল বশর এবং তার পরিবারের ওপর হামলা চালায়। হামলায় মারাত্মক আহত হন আবুল বশর। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আবুল বশরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বেশ কয়েকদিনের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন আবুল বশর।

এছাড়া হামলাকারিরা আবুল বশরের নতুন দোকানটিও ভাংচুর করে। এ ঘটনায় বশরের স্ত্রী রেশমা বেগম বাদি হয়ে আমির হোসেন ও তার ছেলে আমজাদ হোসেন শিপনসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করে। পুলিশ অভিযুক্ত আমির হোসেনের আত্মীয় তারেককে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। বর্তমানে সে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে। মামলা উঠিয়ে না নেয়ায় আমির হোসেন ও আমজাদ হোসেন শিপন আবুল বশরের পরিবারকে বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গেল রোববার বিকেলে আবুল বশরের ছেলে সাকিবের ওপর হামলা চালায় আমির হোসেন ও তার ছেলে আমজাদ হোসেন শিপনসহ অন্যরা।

সাকিবের ওপর হামলার খবরে আবুল বশর ও তার পরিবারের সদস্যরা আমির হোসেন ও আমজাদ হোসেন শিপনদের তাড়া করে। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয় পক্ষের ১১ জন আহত হয়। এদের মধ্যে মারাত্মক আহত শিপনকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে।

উভয় পক্ষের আহতদের উদ্ধার শেষে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়। শিপন মারা যাওয়ায় তার মা মনোয়ারা বেগম বাদি হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আটজনকে গ্রেফতার শেষে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার সোহেল মজুমদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমির হোসেন ও তার ছেলে আমজাদ হোসেন শিপন মাদক ব্যবসা করে আসছে। দেড় মাসের আগের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে হামলার ঘটনায় আমির হোসেনের ছেলে শিপন মারা যায়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, ‘হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শিপন নামের এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনাটি তদন্ত চলছে’।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন