এম. মতিন, চট্টগ্রাম থেকে:
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রামসমুদ্র বন্দরের জন্য ৬ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ করে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আজ সোমবার (১৮ মে) বিকেলে আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে। এরপরই চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর নিজস্ব সর্বোচ্চ সতর্কতা সংকেত ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়েছে। এই সতর্কতা জারির পর চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। সতর্কতার পদক্ষেপ হিসেবে বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানোর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। পণ্যবাহী জাহাজগুলো জেটি থেকে সমুদ্রে পাঠানো হচ্ছে।
বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘বিকেলে আবহাওয়া অফিস থেকে ৬ নম্বর সিগনাল জারির পর অ্যালার্ট-৩ জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরই জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানোর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। জেটি থেকে পালাক্রমে জাহাজ সাগরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারণ, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জেটিতে থাকা জাহাজে ব্যাপক আঘাত লাগে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে জাহাজ জেটি থেকে কিছুটা দূরে সাগরে পাঠানো হচ্ছে।’
তিনি জানান, ‘কুতুবদিয়া, সেন্টমার্টিন, কক্সবাজারসহ বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজ রয়েছে ১৬০টি। বন্দর জেটিতে অবস্থান করছে ১৫ টি জাগাজ। দুপুরে দুটি জাহাজকে গভীর সাগরে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব জাহাজকে সার্বক্ষণিক ইঞ্জিন সচল রাখার এবং গভীর সাগরে নিরাপদ অবস্থানে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।’
এদিকে ১৯৯২ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রণীত ঘূর্ণিঝড়-দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং ঘূর্ণিঝড়–পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা অনুযায়ী, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেত অনুযায়ী ৪ ধরনের সতর্কতা জারি করে বন্দর। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর প্রথম পর্যায়ের সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-১’ জারি করে। ৪ নম্বর সংকেতের জন্য বন্দর অ্যালার্ট-২ জারি এবং বিপদ সংকেত ৫, ৬ ও ৭ নম্বরের জন্য ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়। মহাবিপদ সংকেত ৮, ৯ ও ১০ হলে বন্দরেও সর্বোচ্চ সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-৪’ জারি করা হয়।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর বাংলাদেশের উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়া প্রবল সাইক্লোন ‘আম্ফান’র কারণে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে।
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে। আজ বিকেল ৩ নাগাদ প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১০৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিলো বলে জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মাজহারুল ইসলাম।
তিনি আরও জানান, এই ঘূর্ণিঝড়ের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ২১০ কিলোমিটার থাকবে। যেটি ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য মংলা এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরের জন্য ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার শেষ রাত নাগাদ ঘূর্ণিঝড় আম্ফান বাংলাদেশের খুলনা ও চট্টগ্রাম উপকূলের মাঝ দিয়ে অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।