|| অনলাইন প্রতিনিধি, টেকনাফ (কক্সবাজার) ||
টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্যা আনোয়ারা বেগম। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছেন। করোনাদুর্যোগেও থেমে নেই তার অনিয়ম দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি।

গরীবের জন্য রাষ্ট্রের দেওয়া ১০ টাকা দামের (ওএমএস) এর চাল আত্মসাৎ, বিতরণ তালিকা করতে অনিয়ম-দুর্নীতি, টাকার বিনিময়ে স্বজন পরিচিতদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া এমনকি এনজিওদের দেওয়া নগদ অর্থ সহায়তাও হাপিস করার মত অভিযোগ উঠেছে আনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে। জনপ্রতিনিধির এমন অভিযোগের প্রতিকার ও দুর্যোগের এই সময়ে সুষ্ঠুভাবে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার দাবিতে গত ২৮ এপ্রিল টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আলাদা লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকা নারী ও পুরুষসহ বেশ কয়েকজন । সেইসঙ্গে দুদক বা নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে অভিযোগ-অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি করেছেন তারা।
করোনাদুর্যোগে গত ২৬শে মার্চ থেকে দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি চলছে। কাজ নেই শ্রমজীবী মানুষের। এর মধ্যে বাজারে বেড়েছে মোটা চালের দাম। এরই মধ্যে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আনোয়ারা বেগম তার ওয়ার্ডে ১০ টাকা দামের ওএমএস এর চাল বিক্রির তালিকা নিয়ে অনিয়ম করেই যাচ্ছেন। এর মধ্যে উত্তর শিলখালী ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২২০ জনের মধ্যে ৭৬ জনের চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে। উপজেলা থেকে তালিকাভুক্ত হয়ে আসা ১০ টাকা দামের চাল পাওয়ার মূল তালিকায় ৭৬ জনের নামের পাশে ক্রস দেওয়া হয়েছে। যার কারণে চালের ডিলারে চাল কিনতে গিয়ে ফিরে এসেছেন। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও সরব হয়েছে।



তালিকায় নামের পাশে ক্রস দেওয়াদের মধ্যে আব্দুর রহমান, ইসহাক আহমদ, রুজিনা আক্তার, নুরজান বেগমসহ অনেকই জানান, তাদের নাম তালিকায় থাকা সত্বেও চাল কিনতে পারেনি। তারা গরীব অসহায় মানুষ খুবই কষ্টে দিন পার করছেন। নুরজাহান বেগম বলেন, ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নারী মেম্বার আনোয়ারা বেগম তার আত্মীয় স্বজন এবং পছন্দের ব্যক্তিদের থেকে টাকার বিনিময়ে রাষ্ট্রিয় এবং এনজিও সহায়তা দিচ্ছেন। তালিকায় নাম দেয়ার কথা বলে টাকা নেওয়া, উপকারভোগীদের কাছ থেকে ৫ কেজি করে চাল নিয়ে বাইরে বিক্রি করার অভিযোগও রয়েছে আনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে। শুধু খাদ্যসহায়তা নয় ছয় করাই নয়, বয়স্কভাতার উপকার ভোগী থেকেও কমিশন নেন তিনি।
গত ২১শে এপ্রিল বাহার ছড়ায় ব্রাকের দেওয়া নগদ টাকা বিতরনের তালিকাতেও নিজের ছেলে, শাশুরি, দেবর, বেয়াইসহ নিজের অনেক স্বচ্ছল আত্মীয়কে অন্তুর্ভূক্ত করায় এলাকার হত আসল উপকারভোগিরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
উত্তর শীলখালী ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পা হারানো পঙ্গু আবদুল হাকিম। ৬৫ বছর বয়সী হাকিমের নামে বয়স্ক ভাতা আসে ৬ হাজার টাকা। তার অভিযোগ প্রতি বারই তিনি পাচ্ছেন মাত্র ২ হাজার টাকা। একই অভিযোগ আলী আহম্মদের। ভিজিডি চাল ও সরকারী বিভিন্ন অনুদান দেওয়া নামে তার কাছ থেকেও ২৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। আনোয়ারা বেগমের স্বামী সাবেক বিএনপি নেতা সামশুল আলম বাঘ সামশুর মাধ্যমে এসব টাকা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা।
একই ওয়ার্ডের আলী আকবর জানালেন, তাকে চলতি মাসে ১০ টাকা কেজি দরে (ওএমএসএর) দেওয়ার জন্য তার মায়ের নাম ৬৭৬ নম্বরে তালিকাভুক্ত করেন। কিন্ত পরে তালিকা থেকে নামটি কেটে চাল আত্মসাৎ করেছেন। শুধু আকবরই নন, তার মতো আরো অন্তত ৭৬ জনের নাম ক্রস চিহ্ন দিয়ে ১০ টাকা দামের চাল আত্মসাত করেছেন আনোয়ারা বেগম।
শামলাপুর নয়াপাড়ার আমেনা খাতুন বলেন, ভিজিডির চাল ও সরকারী অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার নামে তার কাছ থেকেও ২ হাজার টাকা নেন আনোয়ারা বেগম। বৃদ্ধ আয়েশা খাতুন জানালেন, ভিজিডির চাল ও সরকারী বিভিন্ন অনুদান ও অন্যান্য সুবিধা দেয়ার আশ্বাসে আনোয়ারা বেগম তার কাছ থেকেও সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছেন।
বাহারছড়া ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. সোনালী এ প্রসঙ্গে বলেন, উপজেলা থেকে আসা তালিকায় উত্তর শিলখালী ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ২২০ জন মানুষ ১০ টাকা দামের চাল পাওয়ার কথা। সেখানে ৭৬ জনের নামের পাশে ক্রস দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এদিকে এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চেয়ে আনোয়ারা বেগমের ০১৮৫৫-১৬৯৫৯৩ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তার স্বামী পরিচয়ে জনৈক শামসুল আলম জানান, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। জমি বিরোধের জেরে আজিজ নামের এক ব্যক্তির ইশারায় ইউএনও স্যারের কাছে আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।



তবে অভিযোগের পাওয়ার পর টেকনাফ ইউএনওর নির্দেশ একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কর্মকর্তা সানা উল্লাহর নেতৃত্বে একটি টিম ৩০শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকালে এলাকায় গিয়ে অভিযোগকারী ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বিষয়টি নিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ১০ দামে চাল ক্রয়ের জন্য বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তা অনুমোদন করে ইউনিয়নে পাঠানো হয়েছে। ইউএনও অফিস থেকে কারো নামে ক্রস দেয়া হয়নি। এছাড়াও ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের তদন্ত চলছে। কারা তালিকায় ক্রস দিয়ে অনিয়ম করছে তাদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, কক্সবাজার জেলার সকল উপজেলায় চলমান খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় অসহায় দুঃস্থ কার্ডধারীদের কাছে প্রতি কেজি ১০ টাকা দরে চাল বিক্রি কার্যক্রম জেলা প্রশাসকের পক্ষে সকল ইউএনও দেখভাল করেন।#