|| অনলাইন প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ||
চট্টগ্রাম বন্দরের বয়স হলো ১৩৩ বছর। শনিবার ছিল বন্দরের যাত্রা শুরুর দিন। প্রতি বছর দিনটি জমকালো আয়োজনে পালন করা হলেও এবারে করোনা দুর্যোগে বাতিল করা হয়নি কোন আয়োজন। এক প্রকার নিরবেই চলে গেল দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দরের যাত্রা শুরুর দিনটি। তবে করোনার এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দেশের প্রায় সব কিছু বন্ধ থাকলেও রাতদিন কাজ চলছে এই বন্দরে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পন্য সরবরাহের শৃংখলা ঠিক রাখতে কাজ থেমে নেই বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকদের।
তবে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বন্দরের যাত্রা শুরুর এই দিনটি এখন পালন না করা গেলেও করোনা পরবর্তি সুবিধাজনক সময়ে মুজিববর্ষের বিশেষ আঙ্গিকে বন্দর দিবস উদযাপন করা হবে। জাতীয় স্বার্থে বন্দর সার্বক্ষণিক সচল রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কন্টেইনারজট কমানোয় সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ, ভূ-প্রাকৃতিক ও কৌশলগত সুবিধাজনক পোতাশ্রয় এ অঞ্চলের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো। ১৮৮৭ সালে ব্রিটিশ শাসনসময়ে পোর্ট কমিশনার্স অ্যাক্ট প্রণয়ন, ১৮৮৮ সালের ২৫শে এপ্রিল থেকে কার্যকর করার মধ্যদিয়েই চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার সূচনা।

আধুনিক শিপিং বিশ্বে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কন্টেইনার সমুদ্রবন্দর। দেশের ৯২ শতাংশ আমদানি-রফতানি তথা বৈদেশিক বাণিজ্য সামাল দিচ্ছে এই বন্দর। প্রতি বছর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর ও অন্যান্য শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে প্রায় পৌণে এক লাখ কোটি টাকার রাজস্ব যোগান দিচ্ছে এই বন্দর। রাজস্বের অর্থে বন্দরের নিজস্ব উন্নয়ন ছাড়াও পায়রা বন্দর এবং মহেশখালীর মাতারবাড়ী-ধলঘাট গভীর সমুদ্রবন্দর মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
স্বাধীনতা পরবর্তিতে ১৯৭৬ সালে একটি সাধারণ জাহাজে মাত্র ছয়টি কন্টেইনার দিয়ে যাত্রা শুরু করে গেল বছর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। একণ প্রায় ৩১ লাখ ইউনিট আমদানি-রফতানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষমতা প্রমাণ করেছে রাষ্ট্রের এই সংস্থাটি। জায়গা করে নিয়েছে ‘লয়েডস লিস্ট’-এর ২০১৯ সালের বিশ্বসেরা কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে দক্ষ ১০০টি সমুদ্রবন্দরের কাতারে।
এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বন্দর ৬ ধাপ এগিয়ে উন্নীত হয়েছে বিশ্ব বন্দরসমূহের মধ্যে ৬৪তম অবস্থানে। এছাড়া এসময়ের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বন্দরের আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণ ও নিউমুরিং ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের এ অর্জন বর্তমান সরকারের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন। জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দর পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
করোনা সঙ্কটে সর্বশেষ জট পরিস্থিতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, বর্তমানে সবক’টি ইয়ার্ডে ৪৭ হাজার ৪৩৯ ইউনিট কন্টেইনার রয়েছে। স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ ইউনিট। যা গত ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা কমেছে। এ সময়ে ২ হাজার ৯৮৮ কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। আমদানি ওঠানামা হয়েছে ৫৫৮৪ কন্টেইনার। ৮টি জাহাজ জেটিতে আমদানি কন্টেইনার খালাস করছে। বহির্নোঙরে জটে পড়ে অপেক্ষা করছে আরও ৩২ জাহাজ। জেটিতে সাধারণ পণ্যবাহী ৭টি জাহাজে খালাস কাজ চলছে। ১৯টি আইসিডিতে (অফডক) আসদানি পণ্য যাচ্ছে। বন্দরজটও কমে আসছে দ্রুত।



চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বন্দরকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সর্বাত্মক সহায়তার জন্য বন্দরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, বার্থ অপারেটর, টার্মিনাল অপারেটর, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, বিকডা, শিপিং এজেন্ট, শ্রমিক, বন্দর ব্যবহারকারী ও স্টেকহোল্ডারদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এক শুভেচ্ছা বার্তায় রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকরা দেশের সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখার স্বার্থে রাতদিন কাজ করে চলেছেন। আমদানি করা মালামাল ডেলিভারি সীমিত হওয়ার কারণে বন্দরে সাময়িক কন্টেইনার জট ও জাহাজ জট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আমদানি কন্টেইনার অফডকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত বন্দরকে আবার সচল করেছে।
তিনি বলেন, আমদানিকারকরা দ্রুততম সময়ে তাদের পণ্য খালাসের মাধ্যমে বন্দরকে করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতেও সচল রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেন। এর ফলে বর্হিবিশ্বে দেশের ও চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি বাড়বে।