|| সারাবেলা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি ||
জেলার পাহাড়ি এলাকা মহালছড়িতে এক উপজাতীয় কিশোরীকে নিয়ে নানা ধরনের তথ্য ও আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন মিডিয়াসহ গোটা উপজেলা। ঝড় উঠেছে আলোচনা-সমালোচনার। মুলত মহালছড়িতে সেদিন কিশোরীকে নিয়ে কি ঘটেছিল বৈঠকের আগে ও পরে।
সংবাদ সারাবেলার খোঁজে মিলেছে যে তথ্য, সেই উপজাতীয় কিশোরীর সাথে বাঙালী যুবকের পরিচয় হয় ঘটনার ৩ মাস আগে থেকে। সম্পর্ক গড়িয়েছিল প্রেমে। কথা বলতে মেয়েটিকে একটি ফোন ও সিম কিনে দেয় ছেলেটি। ঘটনার দিন মেয়েটি ফোন করে ছেলেটিকে দেখা করতে বলে। ছেলেটিও রাজি হয়।
সেদিন ছিল সোমবার। মেয়েটির বাড়ি মাইসছড়ির পাইন্দংপাড়ার ভেতরে। মহালছড়ি তার বোনের শ্বশুরবাড়ী। সেখানে থেকে গার্লস স্কুলে পড়তো মেয়েটি। মেয়ের দেওয়া তথ্য আর বিচারককের দেওয়া তথ্যে ঘটনার ডালপালা মেলতে শুরু করে।
রাত তখন রাত ১১ টা থেকে সাড়ে এগারটা। ছেলেটির সাথে মেয়েটি দেখা করে আসার পথে পাশের একটি মন্দিরের কয়েকটি কুকুর মেয়েটিকে তাড়া করলে সে পড়ে গিয়ে আঘাত পায়। পরে কুকুরের ভয়ে পালিয়ে স্থানীয় এক শিক্ষকের বাসায় আশ্রয় নেয় সে।
সেখানে টিলাপাড়া এলাকাবাসী মেয়েটিকে আটক করে। পরে জানাজানি হলে থলিপাড়ার মারমা যুবকরা চলে আসে। মেয়েটির কাছে জানতে চাওয়া হয়, তুমি কিভাবে আসলে? উত্তরে সে বলে, নিজেই এখানে এসেছে প্রেমিক আলামিনের সাথে দেখা করতে।এরপর মারমা যুবকরা মেয়েটিকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যায়।
পরে টিলাপাড়ায় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। বিষয়টি মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীলকে জানানো হয় রাতেই।
জানার পর রতন শীল বিষয়টি মহালছড়ি থানার ওসিকে জানান।পরে এসআই নুরুল ইসলাম গিয়ে খোঁজ খবর নেন। অভিযোগ করতে বলেন থানায়। কিন্তু মেয়ের পরিবার এঘটনার জন্য মেয়েকেই দায়ী করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান। এবং কোন অভিযোগ নেই বলে জানান। পরে বিষয়টি বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা হবে বলে জানান গন্যমাণ্যরা।
পরের পর্যায়
স্থানীয় উপজাতীয় নেতারা থলিপাড়া ক্লাবে বসে বিস্তারিত শুনে ঐ কিশোরীর অভিভাবককে আইনের আশ্রয় নিতে বললে মেয়ের পরিবার “মেয়েটিকে বাড়ীতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেন। মেয়েটি জানায়, তার সঙ্গে বাঙালি যুবক আলামিনের সম্পর্কটা প্রেমের। তাদের মধ্যে অন্যরকম কোন সম্পর্ক নেই।
মেয়েটি মহালছড়ি থলিপাড়ায় থাকলে আবারো বাঙালি যুবক আলামিনের সঙ্গে দেখা হবে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃ্ত্তি হতে পারে এমন আশঙ্কায় তাকে নিজ এলাকার স্কুলে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেওয়া হয় বৈঠকে। পরে মহালছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীল মেয়েটির চিকিৎসা ও শিক্ষা সামগ্রি কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা দেন।
তবে স্থানীয়দের অনেকের অভিযোগ, মেয়েটি আগেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে মাইসছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সাজাই মারমা বলেন, মেয়ের সাথে ধর্ষণের যে বিষয় বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে সে ধরনের কিছু হয়নি। স্বার্থান্বেষিমহল বিষয়টি নিয়ে জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে বলে তিনি ক্ষোভ জানান।
মহালছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীল বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাকে জড়িয়ে যা বলা হচ্ছে তার কোন ভিত্তি নেই। নির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একটি পক্ষ বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি জড়িতদের খুঁজে বের করে বিচারের দাবী জানান।
মহালছড়ি থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর বলেন, বিষয়টি চেয়ারম্যান রতন শীল ও লোকের মাধ্যমে শুনে পুলিশ পাঠানো হয়। সে বিষয়ে মেয়ে পক্ষের কোন অভিযোগ ছিল না। বিচারও চায় না তারা। কারণ বিষয়টি প্রেমের। তারপরও পুলিশের পক্ষ থেকে বার বার আইনি সহায়তা করার কথা পুলিশ জানিয়েছে বলে জানান ওসি।
এ ঘটনার সকল তথ্য নিশ্চিত করেন বৈঠকে থাকা ২৫২ নম্বর থলিপাড়া মৌজার হেডম্যান কালাচান চৌধুরী, মহালছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীল, কান্তি মারমা, ও নেসু মারমা।
অন্যদিকে সে বিষয়টিকে রঙ লাগিয়ে স্বার্থান্বেষী একটি মহল আসন্ন ইউপি নির্বাচনের রাজনৈতিক খেলায় রূপ দেয় বলে অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান রতন শীল। কোন এক ব্যক্তি ফেইসবুকে ঘটনাটির মনমত বর্ণনা দিয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য যুক্ত করে তা ছড়িয়ে দেয়।
ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মিথ্যা তথ্য সম্বলিত লেখাটি বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ হিসেবে প্রচার করা হয়। এতে বিচারকদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে সংবাদ উপস্থাপিত হয়। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী বিচারকরা দু:খ প্রকাশ করে ঘটনার সাথে জড়িত স্বার্থান্বেষী সেই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।