প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে চলছে "ভোলা অনলাইন স্কুল"

।। সারাবেলা প্রতিনিধি, ভোলা ।।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে না পরে তা রোধে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনার এই সংকটকালে দ্বীপ জেলা ভোলার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম অব্যহত রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় আগ্রহী করে তুলতে গত ২৯ জুন জেলা শিক্ষা অফিস, ভোলা কর্তৃক পরিচালিত প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর জন্য ফেইসবুক লাইভ ভিত্তিক অনলাইন ক্লাশ “ভোলা অনলাইন স্কুল, জেলা শিক্ষা অফিস “।  

ভোলা জেলা শিক্ষা অফিসের সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ৫ /৬ টি ক্লাশ নিচ্ছেন শিক্ষকরা। প্রথমে ভোলা সদরের ২৮ জন শিক্ষক এবং পরবর্তীতে লালমোহনে ২৫ জন শিক্ষককে ১ দিনের অনলাইন ক্লাশ বিষয়ক কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য উপজেলার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। মূলত কম্পিউটার, স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে যাদের পূর্ব ধারণা আছে, তারা সহজেই অনলাইনে ক্লাশ নিতে পারছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রায় সব বিষয়ের ক্লাশ নেয়া হলেও পিইসি, জেএসসি/জেডিসি, নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজি, গনিত ও বিজ্ঞানের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে অনলাইন ক্লাশে উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাশেগুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

অনলাইনে ক্লাশ নেয়া প্রায় সব শিক্ষকই মনে করেন অনলাইনে ক্লাশ নেয়া তাদের চাকরি জীবনে এক নতুন অভিজ্ঞতা। অনেক শিক্ষাকই অনলাইন ক্লাশের মাধ্যমে নিজের পাঠদানকে বড় পরিসরে তুলে ধরার এক বিরাট সুযোগ মনে করছেন। এবিষয়ে মাসুমা খানম বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (বিএসসি) মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, করোনাকালে অনলাইনে ক্লাশের মাধ্যমে শিক্ষর্থীরা যেমন ঘরে বসে জেলার অভিজ্ঞ শিক্ষকদের ক্লাশ করার সুযোগ পাচ্ছ, তেমনি শিক্ষকরাও একটি বড় প্লাটফর্মে নিজেকে তুলে ধরতে পারছেন।

শিক্ষকরা বিনা পারিশ্রমিকে ভোলার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার উন্নয়নে স্বতঃস্ফূর্ত অনলাইনে ক্লাশ নিচ্ছেন। মহামারীর এই পরিস্থিতিতে জেলার শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পেরে তারা খুশি।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিস, ভোলা এর গবেষণা কর্মকর্তা জনাব মুহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ভোলার শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ববোধ থেকে স্বপ্রনোদিত হয়ে নিয়মিত অনলাইনে ক্লাশ নিচ্ছেন। সরকারের নির্দেশনা না থাকায় আমরা তাদের কোন সম্মানী দিতে পারছিনা। বরং ক্লাশ নিতে তাদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও ইন্টারনেটের ডাটা কিনতে অনেক টাকা খচর হচ্ছে। তিনি সকল শিক্ষককে অনুরোধে করেন, সবাই যেন “ভোলা অনলাইন স্কুল ” এর সাথে থেকে ভোলার শিক্ষার মান উন্নয়নে এগিয়ে আসেন।

দৌলতখান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (ইংরেজি) মোঃ হামিদ উল্লাহ্ পারভেজ বলেন, করোনার এই সময়ে আমাদের ক্লাশগুলোর দ্বারা শিক্ষার্থীরা উপকৃত হলে সেটাই আমাদের পরম পাওয়া। তবে অনলাইন ক্লাশের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষকের জন্য সম্মাননা স্মারক বা সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করলে আমাদের এই কষ্টের স্বীকৃতি মিলবে।

জেলার শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই “ভোলা অনলাইন স্কুল” এর অগ্রযাত্রাকে স্বাগতম জানিয়েছেন। “ভোলা অনলাইন স্কুল ” এর কার্যক্রমের সর্বোচ্চ সুফল পেতে তারা স্থানীয় ক্যবল টিভির মাধ্যমে ক্লাশেগুলো সম্প্রচার করা, জেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক প্রতিষ্ঠান প্রধানদের শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাশে অংশগ্রহণে উদ্ভুদ্ধ করত চিঠি ইস্যু করা, অভিজ্ঞ শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাশে সম্পৃক্ত করা, শিক্ষকদের অন্তরিকতার জন্য যথাযথ সম্মাননার ব্যবস্থা করা, নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীরা যাতে অনলাইনে ক্লাশেগুলো করে সে বিষয়ে অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন