দক্ষিণাঞ্চলের পান এখন মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে

।| অনলাইন প্রতিনিধি, সদর (বরিশাল) ||

দক্ষিণাঞ্চলের পান এখন পাকিস্তান ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বাজার দখল করতে চলেছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মতে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে পানের বরজ রয়েছে। যার মধ্যে বরিশালেই সিংহভাগ প্রায়

সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর। তবে এসব বরজে ঠিক কত টাকার পান উৎপাদন হচ্ছে, তার সরকারী কোন হিসেব না থাকলেও স্থানীয় চাষী ও ব্যবসায়ীদের মতে অংকটা ১শ কোটি টাকারও বেশী।

অনাদিকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পানের আবাদ হলেও এখনো তা খুব একটা আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধা লাভ করেনি। তবে অনাদিকাল থেকে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে পানের আবাদ অব্যাহত রেখেছে বারৈ পরিবারগুলো। সম্প্রিতিক কালে লাভের পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায় সব ধর্ম ও শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে পান আবাদ প্রবনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট পান নিয়ে গবেষনা অব্যাহত রাখলেও তাদের গবেষনা কর্ম মাঠ পর্যায়ে খুব একটা পৌছায়নি। উচ্চ ফলণশীল পানের জাত উদ্ভাবনে কাজ করছে ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীগন।

তবে দক্ষিণাঞ্চলে এখনো সনাতন পদ্ধতিতেই আবাদ হলেও পান বরজের মূল যে উপকরন বাঁশের খুটি ও চেরা’র স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে বন গবেষনা ইনস্টিটিউট এর উদ্ধাবিত একটি পদ্ধতি ইতোমধ্যে যথেষ্ঠ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বরিশালের উজিরপুর, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, বাবুগঞ্জ ও বানরীপাড়া এলাকায় এ পদ্ধতিতে একটি বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল দিয়ে পান বরজের বাঁশের খুটি ও চেরা এক সপ্তাহ শোধন করলে তার স্থায়িত্ব দ্বিগুন বৃদ্ধি পায়। ফলে পান চাষীদের উৎপাদন ব্যায় যথেষ্ঠ হ্রাস পাচ্ছে। বরিশালের শুধু উজিরপুর ও সন্নিহিত এলাকার গ্রামজুড়ে এখন সহশ্রাধীক পান বরজ। এসব এলাকার বরজগুলোতে চোখে পড়ে সবুজের সমারহ। লতার সাথে এ যেন টাকার গাছ দাড়িয়ে রয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে ভাল দামের কারনে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ পান চাষের দিকে ঝুঁকেছেন।

এক সময় যে সব অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি পতিত থাকত বা বছরে একটি সবজি বা শীতকালীন ফসল হত, এখন সে জমিতে গড়ে উঠেছে বড় বড় পানের বরজ। লাভজনক ও অর্থকরী ফসল হওয়ায় উজিরপুরের ৯ টি ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে ক্রমে পান বরজের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। জলবায়ুগত কারনে বরিশালের পান বেশ সুস্বাদু হওয়ায় দেশ বিদেশে এর চাহিদাও যথেষ্ঠ। বিগত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তনে বরিশালে পান রপ্তানি হচ্ছিল। এখন তা মধ্যপ্রাচ্যের বাজারেও ঢুকছে। আর বরিশালের পান সংগ্রহে গৌরনদীর টরকি বন্দরে গড়ে উঠেছ আধুনিক পাইকারী পান বাজার। বরিশালের ফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা এ মার্কেটটি দুপর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত থাকে কোলাহল মূখর। রপ্তানিকারকগন এ পাইকারি মাকের্টের মাধ্যমে পান কিনে আকাশপথে বিশেষ ব্যবস্থায় বিদেশে রপ্তানী করছে। পান চাষ করে বরিশালেরই অন্তত একলাখ মানুষের ভাগ্য বদল হয়েছে।

সারা বছর জুড়ে পানের বরজে কাজ থাকার স্থানীয় কর্মহীনদের সুবিধা সবচেয়ে বেশী। পাশাপাশি বিক্রীও চলে ১২ মাস। এমনকি পন বরজে পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন অনেক নারীও। পান চাষিরা জানিয়েছেন,পান চাষে তারা বেশী লাভবান হচ্ছেন। বরজে গাছ লাগানোর চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই পান বিক্রীর উপযোগী হয়। সপ্তাহে ২-৩ দিন বাজারে বিক্রি করা যায়। প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ বেশী হলেও একটি বরজ করলে একটানা ১৫-২০ বছর পান বিক্রী করে মুনাফা অর্জন করা সম্ভব বলেও জানিয়েছেন পান চাষীরা। তবে অত্যন্ত স্পর্ষকাতর ও লাভজনক এ কৃষিপণ্যে ‘ভাল যতেœ ভাল ফলন মেলে’ বলেও জানিয়েছেন পান চাষীগন। আর এ কারনে দক্ষিণাঞ্চলের চাষীরা এখন পানকে ‘টাকার গাছ’ হিসাবে উপাধি দিয়েছেন । তবে অতি বর্ষন, ঘূর্ণিঝড় এবং টর্ণেডো ছাড়াও বড় ধরনের বন্যার হাত থেকে পান বরজ রক্ষা একটি কঠিন কাজ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন