|| সাজ্জাদুল তুহিন, নওগাঁ থেকে ||
তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবির মুখে ভোটের মাধ্যমে গঠিত হলো নওগাঁর মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে জায়গা দেওয়া হবে না হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারীদের। দীর্ঘ ১৪ বছর পর গেলো বছর ডিসেম্বর মাসে দলের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনর পর নতুন এই কমিটি গঠন করা হলো। বরাবরের মতো এবারও পকেট কমিটি না করে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০৫ সালে মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি পদে আলহাজ্ব মোল্লা এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক পদে মরহুম জসিম উদ্দিন সরদার ও সাংগঠনিক পদে বিকাশ চন্দ্র মন্ডল নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এরপর সেই কমিটি দিয়ে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পার করে মান্দা আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনটিসহ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের একটিতে জয়লাভ করে দলটি। এরপরও নতুন কমিটি গঠন নিয়ে মাঝে মধ্যেই দলীয় নেতাকর্মীরা সরব হতেন। শুরু হয় লবিং গ্রুপিং। কয়েকদিন পর আবার থেমেও যায়। এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার জসিম উদ্দিনের মৃত্যুতে পদটি শূন্য হয়ে পড়লে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম। এরপরই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয় ।
সম্মেলনে ভার্চুয়াল সংযোগে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, প্রধান বক্তা ছিলেন, খাদ্যমন্ত্রী ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি ও মান্দা আসনের এমপি সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ।
সম্মেলনে সভাপতি পদে আগ্রহ প্রকাশ করে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেন ১০ জন। এরা হলেন বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোল্লা এমদাদুল হক, সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ শেখ, নাজিম উদ্দিন মন্ডল ও খলিলুর রহমান বিশ্বাস, মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান, উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি সুজাউদ্দৌলা বিপ্লব, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ, প্রবোধ কুমার পোদ্দার (ভুলু), প্রাণনাথ সরকার ও আরফানা আহমেদ ফেন্সি।
এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক অনুপ কুমার মহন্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল চন্দ্র প্রামানিক, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্রহানী সুলতান মাহমুদ গামা, আতোয়ার রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক মির্জা মাহবুব সুলতান বেগ বাচ্চু, সহদফতর সম্পাদক আব্দুল জব্বার, সদস্য প্রবীণ কুমার দাস, আবুল কাসেম প্রামানিক, উপজেলা (যুবলীগের সাবেক সভাপতি) বর্তমান আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নাহিদ মোর্শেদ বাবু ও এস এম গোলাম সরওয়ার ঝুন্টু।
অনেক জল্পনা কল্পনা শেষে দীর্ঘ ১৫ বছর পর মান্দা উপজেলা ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ত্যাগী নেতাকর্মীদের কাছে অনেকটাই স্বপ্নের মতো। অবশেষে জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপে গত বছর ১৯শে ডিসেম্বর সম্মেলন অনুষ্ঠান করেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
দলীয় নিয়ম অনুযায়ী কাউন্সিলের দিন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক । তবে নির্বাচিত হয়ে ঘরে বসে নেই তারা, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছুটে চলেছেন অসুস্থ নেতা কর্মীদের দেখতে। পাশে দাঁড়াচ্ছেন তাদের। অংশ নিচ্ছেন রাজনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। আর সরেজমিনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের ছবিও চোখে পড়ছে।
দলীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা মনে করছেন যাচাই বাছাই করে পরিশ্রমী ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হবে পূর্ণঙ্গ উপজেলা কমিটিতে, সেইসাথে অনুপ্রবেশকারীদের ক্ষেত্রে সজাগ থাববে দল এই প্রত্যাশা তাদের। আর এটাকে ব্যস্তবায়ন করাটাই হবে বড় চ্যলেঞ্জ।
উপজেলার প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বলছেন, দায়িত্ব পেয়ে তারা নেতাকর্মীদের দ্বারে দ্বারে যেভাবে খোঁজ খবর রাখছেন এটাকে আমরা পজিটিভলিই দেখছি। হিংসাবিদ্বেষ ভুলে এ ধারা বজায় রাখতে হবে। আর এজন্য আমাদের সহযোগিতা ও দোয়া থাকবে। কর্মীদের সাথে নেতাদের সম্পর্ক হতে হবে কোন মাধ্যম ছাড়া।
ভারশোঁ ইউনিয়ণ আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা তারা জানান, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করতে উপজেলায় এসেছি।ভেবেছিলাম পারমিশন নিতে হবে তারপরও আজকে দেখা মিলবে কিনা অনেক প্রশ্ন ছিল মনে। তবে এখানে এসে ধারনা পুরোটাই পাল্টে গেছে। সহজেই দেখা ও কথা বলার সুযোগ হচ্ছে সবার। যে কেউ সরাসরি দেখা করে কথা বলতে পারছে নেতাদের সাথে। এতে আমরা অনেক খুশি।
কাশোঁপাড়া ইউনিয়নের কয়েক জন কর্মী বলেন, যেকোনো সমস্যা ও পরামর্শ নেওয়ার জন্য ফোনে সহজে যোগাযোগ করতে পারি নতুন নেতাদের সঙ্গে। দলীয় যেকোনো সিদ্ধান্ত মানতে প্রস্তুত আমরা, সভাপতি সম্পাদকের প্রতি আমাদের অনেক আস্থা।
মান্দা উপজলোর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ্যডভোকেট নাহিদ মোর্শেদ বাবু জানান, তৃণমূলের অসুস্থ নেতাকর্মীদের কাছে ছুটে চলে যাওয়া, তাদের পাশে দাঁড়ানো, কাছে ডেকে নেওয়া, নেতা কর্মীদের সাথে আমাদের যে একটা আস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এটাকে আমরা অনেক বড় করে দেখছি। সেইসাথে এই কাজগুলো ধারাবাহিক ভাবেই চালিয়ে যেতে চাই। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে থানার নেতাকর্মীদের কোন দূরত্ব রাখা হবেনা।
তিনি মান্দা উপজেলার আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটির ব্যাপারে আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি যাদের আস্থা আছে, দলের দুর্দিনে যারা পাশে ছিলেন তাদেরকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে, এটা প্রক্রিয়াধীন । তবে অনুপ্রবেশকারীদের থানা কমিটিতে আসার কোন সুযোগ থাকবেনা এব্যাপারে জিরো টলারেন্স।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন মন্ডল বলেন, আমরা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছি, আমাদের উদ্দেশ্য হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সুসংগঠিত ভাবে দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমরা ত্যাগী বঞ্চিত নেতাকর্মীদের খুঁজে বের করে কমিটি প্রস্তুত করছি। আর হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীদের দলে স্থান হবেনা। সকলের সহযোগিতায় নিয়ে কমিটি প্রস্তুতের কাজ চলছে । অল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে।