হলো দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচন

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থিতা, অনিয়মে বিএনপির ভোটবর্জন, ভোটার ও এজেন্টদের বের করে দেওয়া, অনেক স্থানেই সহিংসতা আর জবরদস্তি এবং চারটি পৌরসভাতে মেয়রপদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগ জয়ী।

|| বার্তা সারাবেলা ||

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে সৃষ্ট বিদ্রোহি প্রার্থীতা, ভোটে অনিয়মের অভিযোগ, ভোট বর্জন, শীত আর করোনাঝুঁকি সবকিছু মেনেই শেষ হলো দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বাচন। গতকাল শনিবার দেশের ৬০টি পৌরসভায় সরব উপস্থিতি নিয়ে ভোট দেন ভোটাররা। ভোট চলে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।  আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট ৪টায় শেষ হলেও কয়েক জায়গায় ভোটারদের লাইন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট চলে। তবে ভোট নিয়ে বিভিন্নস্থানে ঘটেছে সহিংসতা, ভোটার ও এজেন্টদের বের করে দেওয়ার মতো অনিয়ম।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় ভোট স্থগিত করা হয়। আর ৬০টি পৌরসভার ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হয়। নারায়ণগঞ্জের তারাবো, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা ও পিরোজপুর মোট চারটি পৌরসভায় ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। তাই বাকি ৫২টিতে মেয়র পদে ভোট হয়।

অনিয়ম, জবরদোস্তি, শীত আর করোনাঝুঁকিতেও এমন ভোটার উপস্থিতি ছিল প্রায় সব স্থানেই। ছবি: পিবিএ’র সৌজন্যে।

গত ২রা ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ২৯টি পৌরসভায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে এবং বাকি ৩১টি পৌরসভায় কাগজের ব্যালটে ভোট হয়। এই ধাপের নির্বাচনে মেয়র পদে ২১১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ২৩২ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ছাড়া বাকি ৫৪টি পৌরসভায় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন বিএনপির প্রার্থীরা। তবে ভোট শুরুর পর বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কিছু পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে বাগেরহাটের মোংলায় মেয়রসহ ৯টি ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীসহ মোট ১৫ জন, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এছাড়া মাগুরা ও পাবনায় বিএনপির প্রার্থীরা ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেওয়া, মারধর ও ভোটে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন।

অনিয়ম, জবরদোস্তি, শীত আর করোনাঝুঁকিতেও এমন ভোটার উপস্থিতি ছিল প্রায় সব স্থানেই। ছবি: পিবিএ’র সৌজন্যে।

এছাড়া ফেনী ও কুমিল্লাতেও সহিংসতা হয়েছে। ফেনীর দাগনভূঞা পৌরসভা নির্বাচনে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণে তিনজন আহত হন বলে অভিযোগ ওঠে। এদের মধ্যে একজন পুলিশের, একজন আনসার সদস্য ও একজন স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থক। এছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এদিকে কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার নির্বাচনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে চার জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার ভোট শুরুর পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হারং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের পাশে এ সংঘর্ষ হয়।

এবার সবকটি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন। অনেকগুলো পৌরসভায় দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। নির্বাচনে বড় দুই দল ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি’র প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন।

অনিয়ম, জবরদোস্তি, শীত আর করোনাঝুঁকিতেও এমন ভোটার উপস্থিতি ছিল প্রায় সব স্থানেই। ছবি: পিবিএ’র সৌজন্যে।

টাঙ্গাইললের ধনবাড়ি, নাটোরের গোপালগঞ্জ, বাগেরহাটের মোংলা, খাগড়াছড়ি, পাবনার বেশ কয়েক জায়গায় আওয়ামী লীগের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ভোটারদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে বের করে দেওয়া, ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে নৌকায় সিল মারা, বিএনপির এজেন্টদের মারধর ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার মতো অভিযোগ উঠেছে। এদিকে শীতের মধ্যেও বেশির ভাগ এলাকায় ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ও ফুলবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। মুক্তাগাছা পৌরসভায় বিএফ আওয়ামীলীগ-বিএনপিসহ ৫ মেয়রপ্রার্থী এবং ৫৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। ১৭টি কেন্দ্রে ৩৯৫৯৯ জন ভোটার ছিলো।  ফুলবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনে ৫ জন মেয়র এবং ৫৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ১০টি কেন্দ্রে মোট ভোটার ২৩৭৫১ জন।

সংবাদ সারাদিন