|| সারাবেলা প্রতিনিধি, সিলেট ||
স্বাস্থ্যবিধি মানছে না সিলেটের বেশিরভাগ হোটেল-রেঁস্তোরা। করোনা স্বাস্থ্যবিধিতো বটেই বিক্রি করা খাবারেও দেওয়া হচ্ছে নানানোমাত্রার ভেজাল। কাপড়ের রঙ, পঁচাবাসি খাবার ও কেমিক্যাল মিশিয়ে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে এসব খাবার। চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘদিন এসব খাবার খেলে ক্যান্সার, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।
জাতীয় ভোক্তা ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, খাদ্যে ভেজাল মেশানোর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়তই অভিযান পরিচালনা হয়। তবে জনবল সংকটের কারণে সকল সময় এই অভিযান পরিচালনা করা যায় না। সিলেটের স্বনামধন্য খাবারের প্রতিষ্ঠান পাঁচ ভাই রেঁস্তোরা। সারাদেশেই এই প্রতিষ্ঠানের খাবারের বেশ সুনাম রয়েছে। তবে ভাবার বিষয় এই প্রতিষ্ঠানে খাবার তৈরির সময় মেশানো হচ্ছে কাপড়ের রঙ, ও কেমিক্যাল। ভোক্তাদের দেওয়া হচ্ছে পঁচাবাসি খাবার আর এসব তৈরি করা হচ্ছে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে। এসব বিষয় দেখতে পেয়ে ভ্রাম্যমান আদালত সোমবার ওই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা করা হয়েছে তিন লাখ টাকা।
ওই দিন একই অভিযোগে সিলেট নগরের জিন্দাবাজারস্থ পানসি রেস্টুরেন্টেকেও সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গত বুধবার জিন্দাবাজার এলাকার পালকি রেঁস্তোরা ও কাজী অ্যাসপারাগাস ফুড আইল্যান্ডকে জরিমানা করা হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। সর্বশেষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি ও পরিবেশনের কারণে ফিজা অ্যান্ড কোম্পানিকে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ। সবিমিলিয়ে এক সপ্তাহে ওই পাঁচ প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় করা হয়েছে ১৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় সিলেট সদর উপজেলার সালুটিকর শাখায় অভিযান চালিয়ে এই জরিমানা করেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব-৯) এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আখতারুজ্জামান। এই সময় উপস্থিত ছিলেন র্যাব-৯ এর সিনিয়র এএসপি নাহিদ হাসান ও অন্যান্য কর্মকর্তা।
স্বনামধন্য এসব প্রতিষ্ঠানে ভেজাল খাবার পরিবেশনের বিষয়টি খুবই নগন্য কাজ বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। তিনি সংবাদ সারাবেলা’কে বলেন, ‘সিলেটের মানুষ এসব রেস্টুরেন্টে দীর্ঘদিন ধরে খাবার খাচ্ছেন। কারণ তারা বিশ্বাস করেন এই সব রেঁস্তোরা জনপ্রিয় হওয়ায় ভালো মানের খাবার পরিবেশন করে কিন্তু জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে ব্যবসা করার বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে অভিযানে উঠে এসেছে। ’ তার মতে যেখানে ভোক্তাদের আস্থার বিষয়টি জড়িত সেখানে এমন কাজ তাঁরা কিভাবে করতে পারেন। তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব রেস্টুরেন্টে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার আহবান জানিয়েছেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক আমিরুল মাসুদ সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, ‘বাজার মনিটরিং নিয়ে আমরা অনেকটা অসহায়। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় দুটি টিম দিয়ে পুরো জেলা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। একটি জেলায় কমপক্ষে ১০টি টিমের প্রয়োজন।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সংবাদ সারাবেলা’কে বলেন, ‘ভেজাল খাবারে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা সবথেকে বেশি। এসব জিনিস মানুষের শরীরেরর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। বিশেষ করে মানুষের দেহের পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা বেড়ে যায়। আর খাবারে যে কাপড়ের রঙ দেওয়া হচ্ছে তা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।’ দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের জন্য বাইরের খাবার পরিহার করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক।