সেজান চেয়ারম্যান হাসেমসহ ৮ অভিযুক্তই রিমান্ডে

আগুনের পর কারখানাটিতে ত্রুটিপূর্ণ অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমন পথে তালা লাগানো, সরু সিড়ি, কারখানাতেই গুদাম ব্যবস্থাপনার ও সর্বোপরি বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন নির্মানের মতো বিষয়গুলো জানা যায়। এছাড়া কারখানায় শিশু শ্রমিক নিয়োজনের কথাও জানা গেছে।

|| সারাবেলা প্রতিবেদক ||

সেজান জুস কারখানায় আগুনে পুড়ে ৫২ জন নিহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যামামলায় গ্রেফতার সবাইকেই চারদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে কারখানার মালিক ও সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ও প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা রয়েছেন।

শনিবার তাদের আদালতে তুলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান ইসমাইল জানান, শুনানিশেষে জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ফাহমিদা খাতুন চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

এর আগে শনিবার দুপুরে মামলার পর ওই আটজনকে গ্রেফতার করা হয় জানিয়ে রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবির মোল্লা বলেছেন, তাদের ১০ দিনের জন্য রিমান্ডে চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডস তথা সেজান জুস তৈরির কারখানায় বৃহস্পতিবার আগুন লাগে। এতে ৫০ জনের বেশী শ্রমিক-কর্মচারী প্রাণ হারিয়েছে। যাদের বেশীর ভাগই শিশু শ্রমিক।

আগুনের পর কারখানাটিতে ত্রুটিপূর্ণ অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, জরুরি নির্গমন পথে তালা লাগানো, সরু সিড়ি, কারখানাতেই গুদাম ব্যবস্থাপনার ও সর্বোপরি বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন নির্মানের মতো বিষয়গুলো জানা যায়। এছাড়া কারখানায় শিশু শ্রমিক নিয়োজনের কথাও জানা গেছে। এরআগেও কারখানাটিতে বেশ কয়েকবার আগুন লাগে। যদিও সেগুলো এবারের মতো ভয়াবহ ছিলো না।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের পক্ষ থেকে শনিবার গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হাসেমসহ আটজনকে অভিযুক্ত করে হত্যামামলা করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানিয়েছেন, আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ এনে ৩০২সহ কয়েকটি ধারায় এই মামলা করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার আরও বলেছিলেন, আগুন লাগার কারণ খুঁজতে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। আগুন কীভাবে লাগলো, কেন আগুন এতোটা ভয়াবহ রুপ নিলো, কেন এত শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটেছে, কেনই বা আগুন লাগার পর শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হতে পারেননি। এটি দুর্ঘটনা, নাকি নাশকতা সবই তদন্ত করে উদঘাটন করা হবে।

প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস কারখানায় বৃহস্পতিবার ৮ই জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টায় আগুন লাগে। কারখানার ছয় তলা ভবনটিতে তখন প্রায় চারশ’র বেশি কর্মী কাজ করছিলেন। কারখানায় প্লাস্টিক, কাগজসহ মোড়কিকরণের প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সব ফ্লোরে।

প্রচুর পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় কয়েকটি ফ্লোরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ২০ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। শুক্রবার ৯ই জুলাই দুপুরে কারখানার ভেতর থেকে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে, আগুনে পুড়ে মারা যায় তিন জন। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় পঞ্চাশজন। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সংবাদ সারাদিন