|| সারাবেলা প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ ||
সুনামগঞ্জে পৃথক দূঘটনায় ঈদের দিনসহ গত ৪দিনে ২নারী ও শিশুসহ মোট ৭জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
মৃত ব্যক্তিরা হলো, জেলার তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের রতনশ্রী গ্রামের বরুজ মিয়ার স্ত্রী জোসনা বেগম (৩৫) ও তার মেয়ে রুমি বেগম (৮), জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের লিটন মিয়ার ছেলে মারুফ আহমদ (৭), জামালগঞ্জ উপজেলার বেহলী ইউনিয়নের হরিনাকান্দি গ্রামের ইকবাল মিয়ার মেয়ে নাছুফা বেগম (২), ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের জুলহাস মিয়ার ছেলে আদনান মিয়া (৩) ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলা ইউনিয়নের কান্দাগাঁও গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে মামুন মিয়া (১৪)সহ শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের হবিবপুর গ্রামের এক অজ্ঞাত নারী (৩০)।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) দুপুর ২টায় জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের ইশানকোনা নদীর পাড়ের বাসিন্দা লিটন মিয়ার ছেলে মারুফ আহমদ পরিবারের লোকজনের অগোচরে খেলা করতে গিয়ে বাড়ির পাশ্ববর্তী ডোবার পানি পড়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুজির পর বিকেলে শিশু মারুফের লাশ উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষনা করেন।
গত মঙ্গলবার ( ২০ জুলাই) সকাল ১০টায় জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের হরিণাকান্দি গ্রামের ইকবাল মিয়ার শিশুকন্যা নাছুফা বেগম খেলার করতে করতে বসতবাড়ির সংলগ্ন হালির হাওরের পানিতে পড়ে ডুবে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে পাশ্ববর্তী তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষনা করেন।
অপরদিকে এদিন দুপুর ২টায় ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের জুলহার মিয়ার ছেলে আদনান মিয়া একাএকা খেলা করতে গিয়ে গ্রামের মসজিদ সংলগ্ন ডোবার পানিতে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুজির পরে ডোবার পানিতে ওই শিশুর লাশ ভেসে উঠলে উদ্ধার করা হয়।
গত সোমবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যা অনুমান ৭টায় জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট বাজার থেকে ঈদের কেনাকাটা শেষে স্প্রিড বোডের মাধ্যমে বাড়ি ফেরার সময় পাটলাই নদীর বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সামনে এসে পাথর পরিবহণকারী একটি স্টিলবডি ইঞ্জিনের নৌকার সাথে মুখমুখি সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় ওই স্প্রিড বোর্ডে থাকা ৮জন যাত্রীর মধ্যে জোসনা বেগম ও তার মেয়ে রুমি বেগম নদীতে ডুবে নিখোঁজ হয়ে যায়। এঘটনার প্রায় ২ঘন্টা পর রাত ৯টায় এলাকার লোকজন পাটলাই নদী থেকে মা ও মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
অপরদিকে এদিন দুপুর ২টায় শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের হবিবপুর গ্রামের পাশে অবস্থিত হাওরের পানি থেকে এক অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু শরীরের চামড়া পচেঁ মুখ বিকৃতি হয়ে যাওয়ার কারণে পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে ওই নারী বয়স অনুমান ৩০বছর হবে। তার গলায় ইট ও পাথর ভর্তি প্লাস্টিকের বস্তা বাঁধা ছিল। ধরনা করা হচ্ছে কেউ ওই নারীকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে পানিতে ফেলে দিয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এছাড়াও গত বুধবার (২১ জুলাই) ঈদের দিন বেলা ১১টায় দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংহপুর ইউনিয়নের বালিউড়া বাজারের একটি চায়ের দোকানের ভিতর থেকে কিশোর মামুন মিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এউপজেলার বোগলা বাজার ইউনিয়নের কান্দাগাঁও গ্রামের বাবুল মিয়া বালিউড়া বাজারের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে স্ত্রী ও সন্তানসহ বসবাস করে এবং কাঁচামালের ব্যবসা করছিলেন। এমতাবস্থায় গত মঙ্গলবার (২০ জুলাই) রাত থেকে বাবুল মিয়ার ছেলে মামুন মিয়া নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে এঘটনাটি থানায় জানানোর পর পুলিশ অনেক খোঁজাখুজির করে পাশ্ববর্তী একটি চায়ের দোকান থেকে কিশোর মামুন মিয়ার লাশ উদ্ধার করে। তবে ধারনা করা হচ্ছে কেউ কিশোর মামুনকে হত্যা করেছে। ময়না তদন্তের জন্য ওই কিশোরের লাশ উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি দেব দুলাল ধর ও শাল্লা থানার ওসি নুর আলম এঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।