সর্বনিম্ন দুই দশমিক সাতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ

দারিদ্র আর কম আয়ের এসব জেলার গেলো প্রায় সাতদিন ধরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কোটায় থাকার পর গতকাল হঠাৎ করেই তা নেমে আসে দু্ই দশমিক সাত। আবার কোথওবা সাড়ে পাঁচ ডিগ্রি সেলিসিয়াসে।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||

শীতের তীব্র বাতাস আর কমে যাওয়া তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা উত্তরবঙ্গ। বিশেষ করে সর্ব উত্তরের জেলাগুলোর মানুষ পড়েছেন চরম দূর্ভোগে। দারিদ্র আর কম আয়ের এসব জেলার গেলো প্রায় সাতদিন ধরে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কোটায় থাকার পর গতকাল হঠাৎ করেই তা সাড়ে পাঁচ ডিগ্রি থেকে সর্বনিম্ন দুই দশমিক সাতে নেমে আসে।

আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, নওগাঁতে গতকাল রোববার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নওগাঁর বদলগাছি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ফেরদৌস মাহমুদ বলেন, রোববার সকাল ৬টায় নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিন-চার দিন ধরে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় সোমবার থেকেই তাপমাত্রা নিম্নমুখী হতে শুরু করে। এর আগে বুধবার নওগাঁয় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ছবি: সংগৃহিত

ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিম বাতাসে নওগাঁয় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। কয়েক দিন ধরে কিছুক্ষণের জন্য রোদের দেখা মিললেও হিম বাতাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উত্তাপ ছড়াতে পারছে না সূর্য। এ কারণে দিনভর শীতে জবুথবু থাকতে হচ্ছে। নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় এলাকায় রোববার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় দিকে কথা হয় রিকশাচালক খবির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঠান্ডার কারণে হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। ঠান্ডার জন্য হাত দিয়ে রিকশার হ্যান্ডেল ঠিকমতো ধরতে পারছি না। রিকশা চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।

এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে বেড়েছে শিশু ও বয়স্ক রোগের প্রকোপ। নওগাঁ সদর হাসপাতালের সিনিয়র নার্স সেলিনা সুলতানা জানান, হঠাৎ রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

আরেক জেলা কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা চলছে সাড়ে পাঁচ ডিগ্রি। কুড়িগ্রামের রাজারহাটের আবহাওয়া ও কৃষি পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, হঠাৎ করেই কুড়িগ্রামে তীব্র শৈত্য প্রবাহ শুরু হয়েছে। শনিবার সকাল ৬টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা জেলায় এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

ছবি: সংগৃহিত

আমাদের প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, গেলো টানা ৬ দিন ধরে শীতের হিমবাতাস বইছে উত্তরবঙ্গের প্রায় সবকটি জেলাতে। অকস্মাৎ তাপমাত্রা ১০ থেকে সাড়ে পাঁচে নেমে আসায় শুক্রবার ও শনিবার দিনভর দেখা মেলেনি সুর্যের। উত্তরীয় হিমেল হাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে ঠান্ডার প্রকোপ। সারাদিন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে প্রকৃতি। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও গাড়িতে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহনকে চলাচল করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। সন্ধ্যার পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শহরের দোকান পাট। প্রচন্ড শীতের কারণে চরম দূর্ভোগে পড়েছে দিনমুজুর, ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষজন। বিশেষ করে কনকনে ঠান্ডা ও হিমেল হাওয়ায় গরম কাপড়ের অভাবে দুর্ভোগ পড়েছে ছিন্নমূল, হতদরিদ্র পারিবারের শিশু ও বৃদ্ধরা। কেউ কেউ খরকুটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারনের চেষ্টা করছেন। কুড়িগ্রাম শহরের রিকসা চালক আক্কাছ আলী জানান, গত কয়েকদিন ধরে রাতের বেলা ঠান্ডা বেশি থাকলেও দিনে তেমন ঠান্ডা ছিল না। কিন্তু এখন যে অবস্থা হইছে তাতে গরম জামা কাপড় গায়ে দিয়া রিকসা নিয়ে বেরাইছি তাও ঠান্ডা টেকা যাচ্ছে না। শিরশিরি বাতাস জামা-কাপড় ভেদ করে ভিতরে ঠান্ডা ঢুকছে।এদিকে, ঠান্ডার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন জেলার কৃষি শ্রমিকরা। বোরো চাষের ভরা মৌসুম চললেও কনকনে ঠান্ডায় শ্রমিকরা ঠিকমত মাঠে কাজ করতে না পারায় ব্যাহত হয়ে পড়েছে বোরো আবাদ।

ছবি: সংগৃহিত

কুড়িগ্রামের হলোখানা ইউনিয়নের কৃষি শ্রমিক রহিম মিয়া জানান, এই ঠান্ডায় এমনিতেই হাত-পা বাইরে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে। তার উপর পানিতে নেমে রোয়া লাগানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফলে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছি আমরা।

অন্যদিকে, টানা শীতে জেলার হাতপাতালগুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা শীতজনিত রোগে।

সংবাদ সারাদিন