|| সারাবেলা প্রতিবেদন ||
ঈদ কিংবা বড় কোন উৎসব পার্বণ এলেই দেশের মহাসড়কগুলোতে জায়গা হয় না যানবাহনের। কেন্দ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় দেশের সব কাজের সুযোগ কেন্দ্রিভূত হয়ে আছে রাজধানী ও বিভাগীয়শহরগুলোতে। তাইতো কাজের জন্য মানুষ ছুটে আসে রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোতে। ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য আসার এসব মানুষের সব চিন্তা, সব টানতো পড়ে থাকে সেই গ্রামে। যেখান থেকে তারা শহরে আসে শুধুই জীবনধারণের জণ্য সামান্য কিছু টাকা রোজগার করতে।
শহরগুলোতে অনেকটা অতিথির মত আসা এসব মানুষ তাইতো উৎসব-পার্বণে ছুটে যান তাদের সেই স্থায়ী আবাস গ্রামে। সঙ্গত কারণেই ছুটি শুরু হতে না হতেই বাড়তি চাপে পড়ে দেশের মহাসড়কগুলো। বাড়তি মানুষ আর বাড়তি যানবাহনের চাপে সৃষ্টি হয় মাইলের পর মাইল জুড়ে যানজট। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাষ্ট্রিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা আর আগাম পরিকল্পনা নেওয়া হলে মানুষের এমনিতর প্রায় স্থায়ী হয়ে যাওয়া এই দুর্ভোগ কমানো যেতো অনেকটাই।
করোনাকালে গেল কয়েকমাসে রাজধানী থেকে কাজ হারিয়ে কোটি মানুষ গ্রামে ফিরে গেছেন অনেক আগেই। সরকারও ঘোষণা করেছেন চাকরিজীবীরা রাজধানী ছাড়তে পারবেন না এই ঈদে। তারপরও এবারে ঈদযাত্রায় যানজট থেকে মুক্তি মেলেনি বাড়িফেরা মানুষের।
গেল মঙ্গলবার থেকেই বাড়ির দিকে ছুটতে শুরু করেছে রাজধানীতে থাকা লাখো মানুষ। যানবাহনের চাপ বেড়েছে হয়েছে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গমূখি সব মহাসড়কে।কয়েকদিন ধরেই যারপর নাই ধীর লয়ে চলছে রাস্তার এগিয়ে চলা।
তবে ঈদের আগের দিন শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল, শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌপথ, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যানবাহনের চাপ বেড়েছে অস্বাভাবিক সংখ্যায়।
আরিচা হয়ে নদী পারের অপেক্ষায় হাজারো যান
ঢাকা থেকে আরিচা হয়ে যমুনা-পদ্মা পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা যানবাহন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে মহাসড়কে। ফেরি স্বল্পতা আর তীব্রস্রোতে ধীরগতির কারণে নদী পারাপারে সময় লাগছে বেশ অনেকটাই। যে কারণেই যাত্রীবোঝাই বাসগুলোকে পড়ে থাকতে হচ্ছে মহাসড়কে।
আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ফেরি পারাপারের জন্য পাটুরিয়া ঘাটমূখি বাস, ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়িসহ অন্য যানবাহনের উপস্থিতিতে জট লেগেছে পাটুরিয়া-ঢাকা মহাসড়কের মহাদেবপুর পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার জুড়ে।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে বর্তমানে ১৬টি ফেরি ও ২২টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হলেও এগুলোর বেশির ভাগ ফেরি ও লঞ্চই পুরনো। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে দুই-একটি ফেরিকে মেরামতের জন্য ভাসমান কারখানা মধুমতিতে পড়ে থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়া নৌ-রুটে চলাচলরত ফেরিগুলো বার বার বিকল হয়ে পড়ায় কমে গেছে ফেরির সংখ্যাও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফেরি বিকল থাকার কারণে যানবাহন কম পারাপার হচ্ছে। ফেরিতে যানবাহন কম পারাপার হওয়ায় এবং ঈদে যানবাহনের বাড়তি চাপ থাকায় ঘাট এলাকায় প্রতিদিন দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ফেরি পারাপার যাত্রীদেরকে ঘাট এলাকায় এসে যানজটে পড়ে প্রায় ১২-১৩ ঘন্টা করে ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষায় থেকে চরম দুর্ভোগ পড়তে হচ্ছে।
নদীতে স্রোতধারা কম থাকলে স্বাভাবিক সময়ে ফেরি পারাপার হতে সময় লাগে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। আর এখন তীব্র স্রোতের কারণে এই নৌপথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে প্রায় ঘন্টারও বেশি।
এ ছাড়া গাবতলী থেকে শুরু করে মহাসড়কের সাভার, আমিন বাজার, নবীনগর ও ধামরাইসহ বিভিন্ন স্থানে যানজটের কারণে প্রায় পুরো রাস্তাতেই ধীর গতিতে যানবাহন চালিয়ে আসতে হচ্ছে বলে জানান বাস চালকরা। ফলে মহাসড়কেও সময় যাচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন গুণেরও বেশি। স্বাভাবিক সময়ে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাটে আসতে সময় লাগে মাত্র দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এখন রাস্তার বিভিন্ন স্থানে যানজটের কারণে সময় লাগছে প্রায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা যশোর গামী ট্রাক চালক ময়নাল হোসেন জানান, গত বুধবার রাতে পাটুরিয়া ঘটে আসেন। কিন্ত শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষায় থেকেও ফেরির টিকিট পাননি তিনি।
ঢাকার গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা দর্শনা গামী বাসের চালক হাবিবুর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল ৮টায় গাবতলী থেকে বাস ছেড়ে সড়কে যানজটের কারণে পাটুরিয়া ঘাটে আসেন ১২টার দিকে। কিন্ত শুক্রবার দুপুর ২টা পর্যন্ত অপেক্ষায় থেকেও ফেরিতে উঠতে পারেননি।
গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা পিরোজপুর গামী সেবা গ্রীণ লাইন বাসের চালক সিরাজ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বাস ছেড়ে সাড়ে ১১টায় পাটুরিয়া ঘাটে আসেন। কিন্ত বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ঘাটে যানজটের কারণে ফেরি পারাপার হতে পারেননি তিনি। এরকম শ’ শ’ ট্রাক ও বাস চালকরা ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় আছেন ঘাট এলাকায়।



তবে যথানিয়মে ফেরিপারাপারের সুযোগ মেলা দুরাশা জেনে এবারও কাটা লাইন বাসের যাত্রী বেশি দেখা গেছে। সেই সুযোগে এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ লঞ্চ মালিক শ্রমিকরা লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছেন। যাত্রীরাও দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ট্রলারেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন পদ্মা-যমুনা নদী। রাতে স্পিডবোড ও ট্রলার চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা মানছেন না মালিক শ্রমিকরা।
আরিচা অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম জানান, এ নৌ-রুটে চলাচলরত ফেরি গুলো দীর্ঘ দিনের পুরানো। এ কারণে বার বার বিকল হয়ে পড়ে । তবে বিকল হয়ে পড়া ফেরি গুলো দ্রুত মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে।
আরিচা অফিসের বিআইডব্লিউটিসির ডিজিএম জিল্লুর রহমান জানান, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে প্রায় আড়াই হাজার যানবাহন পারাপার হয়। কিন্ত ঈদের সময় ৫ হাজার থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার যানবাহন পারাপার করতে হয়। এ নৌ-রুটে বর্তমানে ১৪টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। ঈদযাত্রীদের কারণে বিভিন্ন যানবাহনের চাপ বাড়ায় ঘাট এলাকায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
শিবালয় থানার ওসি ফিরোজ কবির জানান, পাটুরিয়া ঘাট এলাকাসহ ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান আদালত, র্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন নিয়োজিত রয়েছে।
এদিকে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় এসে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থাকার কারণে অনেক যাত্রী দ্রুত গৌন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ঝুঁকি নিয়েই উঠছেন লঞ্চে। সেখানেও লঞ্চপারাপারের জন্য নির্ধারিত বাস ও রিকসার করে লঞ্চঘাটে আসতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। সুযোগ বুঝে ১০ টাকার রিকশা ভ্যানের ভাড়া জনপ্রতি দিতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর যারা অতিরিক্ত এই ভাড়া গুণতে পারছেন না তাদেরকে আধা কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ঘাট এলাকায় এসে লঞ্চ ও ফেরিতে উঠতে হচ্ছে। অনেক যাত্রী ঘাটে যানজটের কারণে বাস থেকে নেমে লঞ্চে পারাপার হয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথও বেসামাল
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, করোনা সংক্রমণের মধ্যেই শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে গাদাগাদি করে ফেরি ও লঞ্চে নদী পারাপার হচ্ছেন যাত্রীরা। গত দুইদিনের চেয়ে শুক্রবার ভোর থেকে এই রুটে ঈদযাত্রীদের ভিড় বেড়েছে।
এরইমধ্যে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাটের ৩ নম্বর ফেরিঘাট পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বেড়েছে যাত্রী ভোগান্তি। বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত শিমুলিয়ায় ৩ নম্বর রো-রো ফেরি ঘাটের পদ্মা নদীর পাড়ে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়েছে। এর আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ৩ নম্বর ঘাটের সামনের রাস্তা, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একটি আধা পাকা স্থাপনা ও একটি মসজিদ। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ভাঙন শুরু হয়।



এরপরই ২ নম্বর ঘাটটিতে রো রো ঘাটের পন্টুন স্থাপন করে বৃহস্পতিবার থেকে রো রো ফেরি চলাচল শুরু করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিটিসি)। তারপরও ঘরমুখো যাত্রীরা শিমুলিয়া ঘাটে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে ১৬টি ফেরির মধ্যে ১০টি ফেরি চলাচল করছে। তবে ডুবোচরে লৌহজং টার্নিং চ্যানেল বন্ধ থাকায় ৫ কিলোমিটার দূরের ভাটি ঘুরে বিকল্প চ্যানেলে চলাচল করায় ফেরিগুলোর গন্তব্যে পৌঁছাতে দুই গুণ বেশি সময় লাগছে।
বিআইডব্লিটিসির শিমুলিয়া ঘাটের কর্মকর্তা সাফায়েত আহমেদ জানান, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে বর্তমানে ৫টি কে-টাইপ, ৩টি রো-রো ফেরি ও ২টি মিডিয়ামসহ ১০টি ফেরি চলাচল করছে। ডাম্প ফেরিগুলো প্রচণ্ড স্রোতের বিপরীতে চলতে না পারায় ৬টি ফেরি নোঙর করে রাখা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গমূখি মহাসড়কেও ভোগান্তি
রাস্তায় যানবহনের চাপ বাড়ায় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে। মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো ঈদযাত্রী। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্ত পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটারে কোথাও ধীরে ধীরে গাড়ি চললেও অনেক জায়গাতে থেমে আছে অসংখ্য যানবাহন।শুক্রবার দুপুর দেড়টার সময়েও মহাসড়কে ছিল যানবাহনের বিপুল উপস্থিতি।এতে গাড়ির ভেতর ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুঃসহ গরমে বসে থেকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ঈদে ঘরমুখো হাজার হাজার মানুষ।
মহাসড়কে কোরবানীর পশুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত যানবহনের চাপে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজা কয়েক দফা বন্ধ থাকা এবং মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চার-লেন প্রকল্পের অসমাপ্ত ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাসগুলোর কারণে যান চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। ফলে এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানাচ্ছে মহাসড়কে কর্তব্যরত পুলিশ।



বঙ্গবন্ধু সেতু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী আইয়ুবুর রহমান বলেন, ‘অতিরিক্ত যানবহনের চাপে ও সেতুর ওপর গাড়ির চাপ কমানোর জন্য বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত মোট পাঁচবার সেতুর টোল আদায় বন্ধ রাখতে হয়। সেতুর পূর্ব প্রান্তে যানবহনের দীর্ঘ সারি হয়ে যায় জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও আমরা মহাসড়কে গাড়ি সচল রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধু সেতুর ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জানানো হয়, অতিরিক্ত গাড়ির চাপে সেতুর পশ্চিমপ্রান্তে সিরাজগঞ্জ অংশে গাড়ির দীর্ঘ সারি সেতুর ওপর চলে এলে টোল আদায় এমনিতেই বন্ধ রাখতে হয়।
গোরাই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান ডেইলি স্টারকে জানান, আজ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীর গতিতে হলেও মহাসড়কে গাড়িগুলো সচল রয়েছে। তবে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছে গোরাই, মির্জাপুর, পাকুল্লা, নাটিয়াপাড়া, বাঐখোলা, করটিয়া, তারটিয়া, রাবনা বাইপাস, এলেঙ্গা ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তে গাড়ির লম্বা লাইন রয়েছে। তারা জানান, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা রাবনা বাইপাস থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকায়।
উত্তরবঙ্গগামী বাসের যাত্রী মো. আল আমিন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। সকাল নয়টায়ও টাঙ্গাইলের সীমানা পার হতে পারেননি।’ তিন ঘণ্টায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রাবনা বাইপাস এলাকা থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার বঙ্গবন্ধু সেতুর কাছে সল্লা এলাকায় পৌঁছেছেন বলেও জানান তিনি।
তাজ পরিবহনের যাত্রী সুমাইয়া আক্তার জানান, তিনি বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। শুক্রবার সকাল নয়টাতেও পার হতে পারেননি বঙ্গবন্ধু সেতু।
ব্যতিক্রম শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, দেশের অন্য মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের অত্যধিক চাপ থাকলেও এবারে ঈদের আগেরদিন প্রায় ফাঁকা রয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক।
মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১০২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। কুমিল্লা জেলার উপর দিয়ে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে শুরু করে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত এই ১শ’ দুই কিলোমিটার এলাকায় প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে দাউদকান্দি, চান্দিনা, নিমসার, কুমিল্লা সেনানিবাস, আলেখার চর বিশ্বরোড, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এবং চৌদ্দগ্রামসহ বেশকিছু পয়েন্টে দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। বিশেষ করে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা হয়ে আলেখারচর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হতে দেখা যায়।



তবে, প্রতি বছরের তুলনায় এবারের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকা থেকে শুরু করে আলেখারচর হয়ে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড পর্যন্ত এই এলাকাটিতে যানবাহন একেবারেই স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করছে।
এদিকে, মহাসড়কে যাত্রীবাহী যানবাহনের সংখ্যা খুবই কম। মহাসড়কে যেসব যানবাহন চলাচল করছে এরমধ্যে অধিকাংশই পণ্যবাহী।
ময়নামতি হাইওয়ে থানার ওসি শাফায়েত হোসেন জানান, মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লার রিজিওনের ১২টি টিম কাজ করছে। তারা যানজট নিরসনে এবং মহাসড়কে নিরাপত্তা বিধানে তৎপর রয়েছে।