|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
করোনাপ্রকোপে মানুষ ঘরবন্দি থাকা আর মানুষসৃষ্ট দূষণ থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃতি চলছিল তার মত করে। কিন্তু বিশ্বমানুষ আবারো যখন তার অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োজনে প্রকৃতিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে প্রকৃতিতে। এই ভরা বর্ষাতেও দেখা নেই বৃষ্টির। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই এক প্রকার হাসফাঁস অবস্থা। ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ মানুষ।
আবহাওয়া অফিস বলছে, ঈদের দিন শনিবার ও রোববার দেশের বিভিন্নস্থানে বৃষ্টির দেখা মিললেও সোমবার থেকে সূর্যের সমস্ত উত্তাপ যেন ধরায় এসে পড়েছে। ঢাকা, খুলনাসহ অনেক জায়গায় মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে সাগরে লঘুচাপ থাকায় বেড়েছে বাতাসের আর্দ্রতা। যা সৃষ্টি করেছে ভ্যাপসা গরমের।
সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে, ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় ছিল ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভরা বর্ষাতেও এমন বৃষ্টিহীন দিন আর প্রচন্ড গরম প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, “সাগরে একটি লঘুচাপ রয়েছে। বৃষ্টিও তুলনামূলক কম রয়েছে। এমন আবহাওয়ায় গরমও বেশি অনুভূত হচ্ছে।”
তবে মঙ্গলবার দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর আগামী কয়েক দিন বৃষ্টির প্রবণতা থাকবে বলেও জানিয়েছেন বজলুর রশীদ।
এ আবহাওয়াবিদ বলেন, সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে দেশের বেশীর ভাগ জায়গায় বৃষ্টি হবে। সুস্পষ্ট লঘুচাপও হতে পারে এটি। সেজন্য কয়েক দিন বৃষ্টিও বাড়বে। তবে উজানে বৃষ্টির প্রবণতা কমে এসেছে।
সোমবার সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, ফেনী, চাঁদপুর, মাইজদীকোর্ট অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এবং তা আরো দু একদিন চলতে থাকবে।
মঙ্গলবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, রাজশাহী, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা বাড়ছে রোগশোক
এদিকে দেশের বন্যা কবলিত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করলেও নতুন করেও প্লাবিত হচ্ছে অনেক এলাকা। তবে যেসব এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে সেসব এলাকাতে বাড়ছে গরম। রোগশোকের শিকার হচ্ছে মানুষ। একইসঙ্গে পানি কমতে থাকায় আবারো ভাঙছে নদীর পাড়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেল্থ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানান, ৩০শে জুন থেকে ৩রা অগাস্ট পর্যন্ত উপদ্রুত এলাকায় ডায়রিয়া, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ ও শ্বাসনালীর প্রদাহসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজার ৬৩২ জন।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, দুর্গত এলাকায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ডায়রিয়া রোগী। পানি কমতে থাকার পাশাপাশি গরমে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে আগামীতে। এরইমধ্যে ৭ হাজার ৯৭৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এই সময়ে পানিতে ডুবে, ডায়রিয়ায়, সাপের কামড়ে ও বজ্রপাতে ১৩৫ জনের মৃত্যুর তথ্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নথিভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে পানিতে ডুবে মারা গেছে ১০৮ জন।