সারাবেলা প্রতিনিধি, ভোলা
স্থানীয় জেলেদের জন্য সরকারি বরাদ্দের চাল চুরির কথা প্রশাসনকে জানানোয় সাংবাদিকের ওপর হামলায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতার সেই ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর হলে তা ভাইরাল হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলে।
পুলিশ জানায়, পয়লা এপ্রিল বুধবার দুপুরে বোরহানউদ্দিন উপজেলা সড়কের ওই আওয়ামী লীগ নেতার বাসা থেকে তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করে ভোলা আদালতে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার নাবিল বোরহানউদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বড় মানিকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম হায়দারের ছেলে এবং তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ছাত্রলীগ করেন।
এ ঘটনায় আহত সাংবাদিক সাগর চৌধুরী স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল ডব্লিউ ৩৬০ ডিগ্রির সম্পাদক ও প্রকাশক।
বোরহানউদ্দিন থানার ওসি এনামুল হক জানান, বুধবার দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালমোহন সার্কেল) রাসেলুর রহমানের নেতৃত্বে বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে উপজেলা সড়কের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাকে ভোলা আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জেলেদের জন্য বরাদ্দ সরকারি চাল চুরির অভিযোগ করায় এ হামলা চালানোর কথা এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন আহত সাগর চৌধুরী। হামলার ফেইসবুক লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, সাংবাদিক সাগর চৌধুরীর শার্টের কলার ধরে ‘মোবাইল চুরির ও ছিনতাই’ করার অপবাদ দিয়ে নাজেহাল করছেন আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে নাবিল।
গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলা সদরের রাজমনি সিনেমা হলের সামনে নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে।
পরে অপর এক ভিডিও বার্তায় আহত সাগর চৌধুরী বলেন, “মঙ্গলবার সকাল ৬টায় নাবিল আমাকে ফোন করে বলে ‘আপনার সঙ্গে জরুরি কথা আছে একটু আসেন।’ তার ডাকে রাজমনি সিনেমা হলের দোতলায় যান এই সাংবাদিক।
সে সময়ের বিবরণ দিয়ে সাগর বলেন, “আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। তখন আমি দোতলা থেকে নিচে নেমে আসতে চাই। তখন সে পেছন থেকে আমার কলার চেপে ধরে এবং আঘাত করে।”
তার আহত হওয়ার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমার চোখে আঘাত করে চোখ নষ্ট করে দেওয়ার জন্য। মাথার অনেক জায়গায় আঘাত করে। মাথাটা ফুলে গেছে। আমাকে মেরে ফেলার জন্য দুইহাত দিয়ে গলা চেপে ধরে। এছাড়া শরীরের অনেক জায়গায় আঘাত করে সে।”
ওসি এনামুল জানান, সাগর চৌধুরী তাকে নির্যাতনের ঘটনায় বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাত দেড়টায় নাবিল হায়দারকে প্রধান আসামি করে এবং আরো অজ্ঞাত পাঁচজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন।
সরকারি চাল চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির গাজী বলেন, “বড় মানিকা ইউনিয়নের সরকারি সাহায্যের চাল জেলেদের কম দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের বক্তব্যসহ একটি ভিডিও গত সোমবার সাগর আমাকে দেখান।
“আমি তখনই ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবকে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চাই।” তবে সাগরের কাছ থেকে ভিডিওটি না পাওয়ায় এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেননি বলেও জানান ইউএনও।
প্রতি বছরের মত পয়লা মার্চ থেকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ সময় বেকার হয়ে পড়া প্রতি জেলে পরিবারকে সরকার মাসে ৪০ কেজি করে চাল সহায়তা দিয়ে থাকে। জেলেদের জন্য বরাদ্দ করা সরকারি এ চাল কম দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে এ হামলার সূত্রপাত বলে দাবি।
ভোলায় আড়াই লাখের বেশি জেলে রয়েছেন। অনেক পরিবারে একাধিক জেলা থাকায় এক লাখ ২০ হাজার জেলে পরিবার ভোলায় এই সরকারি চাল সহায়তা পেয়ে আসছেন।
![](https://i0.wp.com/sangbadsaradin.net/wp-content/uploads/2021/08/download-1-2.jpg?fit=300%2C156&ssl=1)