সহিংসতা করেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আড়ানী পৌরমেয়র হলেন মুক্তার আলী

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা হলেও মুক্তার আলী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তিনি পাননি কারণ, সেটা টাকার বিনিময়ে অন্যত্র বিক্রি হয়েছিল।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী ||

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভায় নির্বাচনের আগে ব্যাপক সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল মেয়র প্রার্থী মুক্তার আলীর বিরুদ্ধে। মামলায় অভিযুক্ত হয়েও নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও জয়ও পেলেন।

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা হলেও মুক্তার আলী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, রাজশাহী-৬ (চারঘাট এবং বাঘা উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম আড়ানী পৌরসভার নির্বাচনে তাকে সমর্থন করেছেন। তিনি আরও বলেন, এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তিনি পাননি কারণ, সেটা টাকার বিনিময়ে অন্যত্র বিক্রি হয়েছিল।

একইসঙ্গে পরাজিত আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী শহীদুজ্জামানের দাবি, প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম এবং দলের অধিকাংশ স্থানীয় নেতাদের তিনি কার্যত পাশে পাননি। কাউকেই পরাজয়ের জন্য দায়ী না করে শহীদুজ্জামান বলেন, আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না যে তাদের (শাহরিয়ার আলম ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের) সহযোগিতা যদি আমি না-ই পাব, তবে আওয়ামী লীগ এবং এর সভানেত্রী কেন আমাকে মনোনয়ন দিলেন। নৌকা প্রতীক হেরে যাওয়া মানে আওয়ামী লীগ হেরে যাওয়া, (প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী) শেখ হাসিনার হেরে যাওয়া।

তিনি বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিজে যে কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন, সেখানে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট পরেছে মাত্র ৭৭টি। এই ফলাফল জানার পর আমি আর চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করিনি, আমি বাসায় ফিরে এসেছিলাম। কারণ নিশ্চিত হয়েছিলাম যে আমি হেরে যাচ্ছি। মন্ত্রীর শত শত কর্মীরা তার কথার বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন, এটাও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে? এত কম ভোট পাওয়ার মতো অযোগ্য প্রার্থী আমি ছিলাম না।

শাহীদুজ্জামান বলেন, আমি শিক্ষিত, আমি সন্ত্রাস চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত না, মাদকাসক্ত নই। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারপরও আমাকে এমন শাস্তি দেওয়া হলো কেন আমি বুঝতে পারছি না।

তবে শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচনি আচরণবিধিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কোনো কাজ করতে পারেননি। তিনি নির্বাচনের একদিন আগে আড়ানীতে যান। নির্বাচনের দিন ভোট দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এটা একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক যে নির্বাচনি বিধিনিষেধের কারণে মন্ত্রী হয়েও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা সম্ভব হয় না। সে সময় তিনি নৌকা প্রতীকের জয়ের আশাবাদ জানিয়েছিলেন।

শনিবার অনুষ্ঠিত রাজশাহীর তিনটি পৌরসভা নির্বাচনে দুটিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং একটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। সেই একটি পৌরসভা বাঘা উপজেলার আড়ানী। সেখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মুক্তার আলী পাঁচ হাজার ৯০৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শহীদুজ্জামান পেয়েছেন চার হাজার ৩০০ ভোট। আর বিএনপির প্রার্থী মো. তোজাম্মেল হক পেয়েছেন এক হাজার ৩১২ ভোট। মোট নয়টি ভোটকেন্দ্রের ছয়টিতেই জয় পেয়েছেন মুক্তার আলী।

এমনকি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম যে কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন সেই কেন্দ্রেও জয় পেয়েছেন মুক্তার আলী।  সেখানে তিনি পেয়েছেন এক হাজার ১৯৫ ভোট। জয়গুন নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের শহীদুজ্জামান মাত্র ৭৭টি ভোট পেয়েছেন। সবগুলো কেন্দ্রের মধ্যে এখানেই সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, মুক্তার আলী এসএসসি পাস এবং ২০১০ সালের একটি হত্যা মামলাসহ তিনটি মামলায় অভিযুক্ত। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলমের পছন্দেই ২০১৫ সালের নির্বাচনে মুক্তার আলী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের আড়ানী পৌর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন।

এবারের নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার জন্য দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর থেকেই মুক্তার আলী দলের মনোনীত প্রার্থী মো. শহীদুজ্জামানের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।

সংবাদ সারাদিন