সন্ত্রাসের হোতা ধরাছোঁয়ার বাইরে সন্ত্রাসের শিকার মৃত্যুপথে

উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই রঘুরায় ঝাকুয়াপাড়া গ্রামের মাহাবুবার রহমান প্রায় দুই ডজনের বেশী মামলায় অভিযুক্ত।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম ||

সীমান্ত চোরাচালান, কুড়িগ্রামের উলিপুরে বরেণ্য শিক্ষক আছাব্বর আলী ওরফে খোকা মাস্টারের কবর দখল করে বসতঘর নির্মাণ ও তার সন্তানদের ভিটেছাড়া করা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ সরকারকে (পরিবারসহ) লাঞ্ছিত ও অশালীন ভিডিও প্রকাশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজাদ হোসেন ও তার ভাই মন্জু মিয়ার বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট, সালাম মিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে জায়গা দখল, অসহায় নারীর গরু চুরি করে উল্টো গরুর মালিকের সম্মানহানিসহ উচ্ছেদের হুমকি ও একাধিকবার মারপিট করা। এসবই চলছে মাহাবুবার রহমানের আশ্রয়-প্রশ্রয় আর নির্দেশে।  

জানা গেছে, উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই রঘুরায় ঝাকুয়াপাড়া গ্রামের মাহাবুবার রহমান প্রায় দুই ডজনের বেশী মামলায় অভিযুক্ত। মাহাবুবার রহমানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তার বাহিনীরা একই গ্রামের প্রতিবেশী সাবেক সেনাসদস্য আলতাফ হোসেনের স্ত্রী হাসিনা বেগমের দুইটি গরু চুরি করে। হাসিনা বেগম বাদী হয়ে উলিপুর থানায় মামলাও করেছেন মাহাবুবারের বিরুদ্ধে। যার নম্বর-১৯০/২০।      

মামলা করায় মাহাবুবার রহমান গংরা হাসিনা বেগমের স্বামী আলতাফ হোসেনকে অপহরণ করে জখম করে ফেলে দেয় পুলিশের মোড় এলাকায়। এই অভিযোগেও মাহাবুবার রহমান গংদের বিরুদ্ধে মামলা করেন হাসিনা বেগম। যার নম্বর ২৩/উলিঃ, তারিখ ২৮/০৭/২০২০। এই মামলায় হাসিনা বেগম তাদেরকেই স্বাক্ষী মানেন। যারা তার স্বামীকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

মারাত্মক জখম আলতাফ হোসেন এখনো হাসপাতালে ভর্তি। তিনি এখন মৃত্যুপথে। হাসিনা বেগম জানান, তার স্বামীর শরীরের ভেতরের বিভিন্ন স্থানে ইনফেকশন হয়েছে। রোগির উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, আমাকে গ্রামের অন্য কেউ যেকোনো সাহায্য সহোযোগিতা করলেই সন্ত্রাসী চক্রটি তাদের ভয়ভীতি দেখান এমনকি কয়েকজনকে মারধর ও করেছেন। হাসিনা বেগম বলেন, আমার ৭/৮ বছরের একটা মেয়ে সন্তান, অসুস্থ স্বামী আমার অসহায়ত্ব দেখে একই গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা সাবেক সেনাসদস্য আজিজ সরকার প্রতিবাদ করায় সেই লোকটাকেও মিথ্যা অপবাদে ফাঁসিয়ে নগদ ৪ লক্ষ টাকা চাঁদা নিয়ে তাকে রেহাই দিয়েছে মাহাবুবার রহমান ও রফিকুল গংরা। সন্ত্রাসীরা এখনো বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকিধামকি দিচ্ছেন এবং বলে বেড়াচ্ছেন আমার স্বামী মারা যাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাকে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করে বাড়িঘরসহ ভিটেমাটি টুকুও দখল করে নেবে। এবং আমার স্বামীর লাশ নাকি গ্রামের কবর স্থানে মাটি দিতে দেবে না।

হাসিনা বেগম আরো বলেন, ভিটেমাটি টুকু ছাড়া জমাজমি টাকাপয়সা সবশেষ করে পথে বসেছি। স্বামীর চিকিৎসার খরচের বিষয়ে অসহায় পরিবারটি খেয়ে না খেয়ে জীবন চালাচ্ছেন, স্বামীকে বাচাঁতে হাসপাতালের রুমে রুমে ছুটছি। সবকিছু  হারিয়ে যদি স্বামীর জীবনের ক্ষতি হয়, উক্ত সন্ত্রাসী মাহাবুবার রহমান সহ তার সহোযোগিরা যাতে এই খুনের দায় এড়াতে না পারে এর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট উলিপুর থানার সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

মাহাবুবার রহমান গংদের এমন অত্যাচার সন্ত্রাস প্রসঙ্গে এলাকাবাসী জানান, প্রায় সময়েই গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে থাকেন মাহাবুবার রহমানগংদের বিভিন্ন অপকর্ম। বর্তমান সময়ে সীমান্ত চোরাচালান মামলার অন্যতম পলাতক আসামি এই মাহাবুবার রহমান, যার পোর্ট থানা বেনাপোল, যশোর এর বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা নং-২৫/১৪৮, তারিখ ২৫/০৩/২০২১। বিভিন্ন সময় তার প্রায় সকল কু-কর্মের প্রধান বা অন্যতম সহোদর/সহোযোগি মোঃ হারুন অর রশিদ, উলিপুর থানার পাঁচপীর দুর্গাপুর বাজারের দেশব্যাপী সেই আলোচিত মামলা তৎকালীন “কুড়িগ্রাম ডিসি মহোদয় “মাথায় রক্ত জখম মামলার” ২নং সাজাপ্রাপ্ত আসামি, বর্তমানে হাইকোর্টের জামিনে থেকে মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্তথেকে দলনেতা মাহাবুবারের প্রিয়ভাজন হয়ে আছেন। তার আপন দুই ছোটা ভাই এর মধ্যে মজিবুর রহমান নৌবাহিনীর ক্ষমতা দেখিয়ে এলাকার ত্রাস সৃষ্টি করেছেন, সদ্য এক উপজেলা  ছাত্রলীগের কর্মীকে লাঞ্ছিত ও মারপিটে ঘটনা ঘটিয়েছেন, যার মামলা নং-০৯/২০২১(উলিঃ), মজিবুর রহমানের উল্লেখযোগ্য মামলাগুলোর মধ্যে মামলা নং- ০৮/উলিঃ তারিখ ১০/১০/১৪ বীরমুক্তিযোদ্ধারসহ একাধিক বাড়ীঘর ভাংচুর লুটপাট এর ০১ নং আসামী হিসেবে দেশব্যাপী সমালোচিত ব্যক্তি। আরেক ছোট ভাই মিজানুর রহমান মিঠু একাধিক মাদক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, সদ্য একটি মাদক মামলায় জঅই এর হাতে আটক হয়েছে বলে এলাকা বাসী জানায়। তাড়াও এলাকাবাসীর সূত্রে আরো জানা যায় উক্ত মাহাবুবার রহমানের ও তার দলের ব্যাক্তিদের নামে চুরি, প্রতারণা, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, চোরাচালান, লুটতরাজ, মারপিট/রক্তজখম, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট, মাদক কারবারি, জমি-জায়গা দখল, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশদ্রোহী কর্মকান্ড, সাইবার ক্রাইম ও জামাত-বিএনপির পক্ষে সরকার বিরোধী অনলাইন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার জনগন এসব অপকর্মের সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন এবং উক্ত ঝাকুয়াপাড়া গ্রামে যাতে শান্তি ফিরে আসে ও সবাই একহয়ে চলতে পারেন সেই প্রতিশ্রুতি চাচ্ছেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে। 

সংবাদ সারাদিন