|| সারাবেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ ||
আদিবাসী দরিদ্র পরিবারে জন্ম ওদের। তিন ভাইবোনের মধ্যে ভাই সুম চড়ে বড়। সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। মেজ বোন শিউলী চড়ে নিয়ামতপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট বোন শিল্পী চড়ে গাংগোর উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ছে।
শ্রম বিক্রি করে উপার্জিত টাকায় তিন ভাই-বোনের পড়াশুনা চালিয়ে নেয়ার অদম্য এ সংকল্পের কথা এখন এলাকায় সবার মুখে মুখে। দরিদ্র আদিবাসী পরিবারে জন্ম হওয়ায় শ্রম বিক্রি করেই চলছে ওদের শিক্ষিত হওয়ার অনিশ্চিত এ পথচলা। ওরা জানে না কতটা বন্ধুর ওদের এই পথ চলা কতদিনের?
অদম্য শিক্ষানুরাগী এ তিন ভাই-বোন নিয়ামতপুর উপজেলার পাঁড়ইল ইউনিয়নের পাঁড়ইল গ্রামের বাসিন্দা বর্ণ চড়ের ছেলে-মেয়ে। মা ধনপতি মার্ডি। খুব কষ্ট করেই সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন এ দম্পত্তি। দিন-রাত পরিশ্রম করে সন্তানদের আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্ন বুনছেন মনে মনে।
সরেজমিনে বর্ণ চড়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। ঘড়িতে তখন সময় দুপুর সাড়ে বারোটা। প্রতিবেশীরা জানায়, তারা সবাই গেছে অন্যের জমিতে কাজ করতে। খোঁজ নিয়ে হাজির হই, যেখানে তারা শ্রম বিক্রি করে সেই বোরোর মাঠে।
দেখা গেল, দু’বোন শিউলী চড়ে ও শিল্পী চড়ে মায়ের সাথে বোরোর মাঠে ধান রোপনের কাজে ব্যস্ত। সাংবাদিক পরিচয়ে তাদের শিক্ষিত হওয়ার এ সংগ্রামের কথা জানতে চাইলে মুখ খুললেন মা ধনপতি মার্ডি।
তিনি জানান, সন্তানদের আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্নের কথা। জানান, অর্থ সংকটের মধ্য দিয়েও তিন সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার কথা। তিনি বলেন, অন্যের জমিতে কাজ করে যা আয় রোজগার হয় তা দিয়েই সংসারের খরচসহ সন্তানদের পিছনে লেখাপড়ায় খরচ করেন তিনি। সন্তানদের যুগোপযোগী ডিজিটাল যুগের চাহিদা মেটানো তো দূরের কথা শিক্ষা সংক্রান্ত চাহিদা মেটাতেই খুব হিমশিম খেতে হয় তাদের।
তিনি ভেজা গলায় বলেন, ‘খুব কষ্ট হয় তখন, যখন সন্তানরা লেখা-পড়া ছেড়ে অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করে। মা হয়ে এ দৃশ্য দেখার কষ্ট কত যে বেদনা বিধুর তা তিনিই জানেন।’ এমন সময় লক্ষ্য করা গেল শিক্ষানুরাগী এ মা’র চোখের কোনে চিকচিক করছে জল।
শিউলী চড়ের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তাদের সম্প্রদায়ের মানুষ এখনও শিক্ষা-দীক্ষা থেকে অনেক পিছিয়ে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তিনি দেশের জন্য, এ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করতে চান। তাই কষ্ট করেই তার এ লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া। সমাজ ও রাষ্ট্রের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ওরা বললো, পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীর জন্য নিয়ামতপুরে একটি আদিবাসী কার্লচার সেন্টার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি।