|| সারাবেলা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও ||
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় সারাদেশের মধ্যে ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রতি বছরই শীত আসে কদিন আগেই। গত কয়েকদিন ধরে দিনে গরম থাকলেও সন্ধ্যার প্রকৃতিতে শুরু হচ্ছে শীতের হিমেল পরশের গা শিরশিরে বাতাস। রাতভর পড়ছে বৃষ্টির মতো কুয়াশা। একদিকে যেমন বাড়ছে শীত অপরদিকে শীতে করোনা ভাইরাস নিয়ে চিন্তিত এই জেলার সাধারণ মানুষেরা।
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে দেশের উত্তরের এই জেলায় দিনের পর দিন বেড়েই চলছে শীত। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে কুয়াশা। কুয়াশার আড়ালে ঢাকা পড়ছে সূর্য। অনেকটা কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে আছে এই ঠাকুরগাঁও।
মঙ্গলবার সকালে জেলা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এমনি চিত্রই চোখে পড়ে।
প্রতি বছরের মতো এবারেও শীত ও কুয়াশার কারনে কাজ করতে অসুবিধা হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতে জড়ো-সড়ো হয়ে গেছে গবাদি পশুও। কেউ কেউ আবার খড়-কুটোতে আগুন জ্বালিয়ে করছেন শীত কমানোর চেষ্টা। রাস্তাঘাটে কুয়াশার ফলে সড়কে-মহাসড়কে বাস-ট্রাকগুলো চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। শীতের কাপড় পরে হাটাচলা করছেন প্রায় সকলেই।

সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের বাসিন্দা আহম্মদ আলী জানান, গত কয়েকদিন ধরেই শীত একটু বেড়েই চলছে। সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশা পড়ছে, রাতভর করছে ঠান্ডা। ভোরেও অনেক কুয়াশা থাকছে। রাতে শীতের কাপড় নিয়েই ঘুমাতে হয় আমাদের।
শহরের বাসষ্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা জাহিদ হাসান জানান, প্রতিনিয়ত সকালে বের হতে হয় হাটাহাটি করার জন্য। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে যে কুয়াশা ছিলো তার থেকে বেশি আজ মনে হচ্ছে। এতে বুঝা যাচ্ছে শীত পড়েছে। ঠান্ডাও করছে অনেক। সন্ধ্যার পর শীতের কাপড় ছাড়া বের হওয়া যাচ্ছেনা।
শহরের হাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম রোহান বলেন, প্রতিনিয়ত আমাদের এখানে শীত অনেক বেশি পড়ে। শীতের কারনে তো অনেক মানুষেই অসুস্থ হয়ে থাকে। তার উপর এখন করোনা ভাইরাস। এই নিয়ে অনেক চিন্তিত আছি, না জানি কি হবে। তবে প্রশাসনের পাশাপাশি যদি আমরা সকলেই সচেতন হই তাহলে হয়তো আমরা অনেকটাই নিরাপদ থাকবো বলে আমি মনে করি।



জেলা স্কুল বড় মাঠে হাটতে এসেছেন পথচারী ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, যখন করোনা ভাইরাস প্রথম আসলো তখন দেখেছি সকলেই মাস্ক পরে বের হতো। কিন্তু আস্তে আস্তে এটা কেন জানি পরিবর্তন হতে লাগলো। প্রশাসনের লোকেরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এলাকায় মাস্মাক না পরায় জরিমানা করছে। এরপরেও অনেকইে শুনছেনা। তাই প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে বলে আমি মনে করি। তবে শুধু প্রশাসন নয় আমাদেরকেও সচেতন হতে হবে। ভাবতে হবে পরিবারের কথা।
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা.মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, করোনা ভাইরসের ২য় ঢেউ মোকাবেলায় আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে। মাস্ক বাধ্যতামূলক হতে হবে। যেহেতু শীত পড়েছে সে ক্ষেত্রে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্য নিয়ে সকলকে সচেতন করা হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল সহ উপজেলার সকল হাসপাতালে শীতের জন্য অতিরিক্ত আরো ৫০টি বেডসহ স্টাফদের যথাযথ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান সিভিল সার্জন।



ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড.কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ২৫ হাজার কম্বল পেয়েছি। সেগুলো বিভিন্ন উপজেলায় পৌছে দেবার ব্যবস্থা করেছি। সেই সাথে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবারের মতো এবারো অসহায়দের শীত নিবারনের জন্য শীতবস্ত্র তৈরী করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জেলার দুর্যোগ ব্যবস্থা কমিটির সভায় শীত ও করোনা ভাইরাস দুইটি বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। শীতে যাতে করোনার বিস্তার না হয় সেজন্য আমরা বিভিন্ন প্রদক্ষেপ নিয়েছি। জেলার করোনা পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে এজন্য আমরা প্রতিটি সময় জনগণকে সচেতন করছি। সেই সাথে সকলে যাতে মাস্ক পরে সেই বিষয়টিতে আমরা বেশি জোর দিয়েছি। ইতিমধ্যে আমাদের ম্যাজিষ্ট্রেটরা বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে এবং যারা এই মাস্ক পরছেনা তাদের জরিমানাও করছেন।