|| সারাবেলা প্রতিনিধি, মেহেরপুর ||
চিকিৎসক হিসেবে নেই কোন ডিগ্রি । নেই সরকারি কোন অনুমোদন। মাত্র ২ বছর প্যারামেডিক কোর্স করেই প্রায় ১০ বছর ধরে নিজ বাড়িতে গর্ভপাতের মতো অবৈধ কাজ করেন মিনি আরা। অপ্রত্যাশিত প্রেগনেন্সি হলেও গাংনীর মিনি আপা একটি আস্থার নাম।গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঠিক নাকের ডগায় চৌগাছা পাড়ায় এই ব্যবসা কীভাবে চালাতেন মিনি আরা ওরফে মিনি আপা। তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেকেই মিনি আরাকে রোগীর যোগান দিয়ে থাকেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছনে চৌগাছা পাড়াতে শিপলু-মিনি দম্পতি তাদের নিজ বাড়িতেই চালাচ্ছেন ভ্রুণ হত্যার এই কার্যক্রম। মাত্র ২ বছরের প্যারামেডিক কোর্স করেই কোন রকম নিয়ম নীতি না মেনে বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছেন এই ব্যবসা।
স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন, এলাকার ইসলামী এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় কাজ করেন মিনির স্বামী শিপলু। পাশাপাশি স্ত্রীর জন্য রোগীর যোগানও দেন তিনি।
বাইরে থেকে অবশ্য বোঝার উপায় নেই মিনি আরার বাড়িতেই চলে অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোর কাজ। টিনের গেট ও টিনের ছাদসমেত আধাপাকা এই বাড়িতে রয়েছে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, আমরা জানতামই না, মিনির ঘরের ভেতরে নার্সিংহোমের মত সবকিছু রয়েছে। মাঝে মধ্যে দেখতাম কেউ কেউ আসা যাওয়া করে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, কারো কাছে থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আবার কোন রোগীর অবস্থা বুঝে এর চাইতেও বেশি টাকায় তারা এই কাজ করছেন। তারা বলেন, এইভাবে ভ্রুন নষ্ট করা মানুষ হত্যার সমান। যদিও রোগীর সম্মতিতেই হয় বাচ্চা নষ্ট করার এই কাজ। তারপরও অবৈধভাবে অনিরাপদ উপায়ে করা কতটুকু আইনী তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
এ বিষয়ে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনীয়া আক্তার জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া গর্ভপাত করানো ঠিক না। এভাবে গর্ভপাত করালে অনেক সময় বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা হারাতে পারে রোগী। গর্ভপাতের সময় রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। এতে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
বিষয়টি স্বীকার করে মিনি আরা ও তার স্বামী শিপলু জানান, মাসে ৪ থেকে ৫টা রোগী আসেন। প্রায় ৩ বছর ধরে করছি এই কাজ। যারা সমাজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে করে তারাই আসে আমাদের কাছে।
কোন রকম প্রশিক্ষন বা সরকারি অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইরে শিপলু বলেন, আমার স্ত্রী প্যারামেডিকে ২ বছর কোর্স করেছে, তাছাড়া আর কোন প্রশিক্ষণ বা সরকারি অনুমোদন নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. রিয়াজুল আলম জানান, এটা আমাদের অগোচরে হচ্ছে। এটার কোন অনুমোদন নেই। আমরা শিগগিরই ব্যবস্থা নেবো।
গাংনীর থানার ওসি বজলুর রহমান জানান, এই ধরনের ঘটনা গাংনীতে ঘটছে এটা আমাদের জানা ছিল না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।