শাল্লায় হিন্দুগ্রামে হামলার মুল আসামী যুবলীগ নেতা স্বাধীন গ্রেফতার

মাওলানা মামুনুল হকের অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত মঙ্গলবার রাত ১১টায় ঝুমন দাসকে ধরে থানায় সোপর্দ করে। তারপরও ক্ষান্ত হয়নি তারা।

বাইশ হেফাজত কর্মী কারাগারে  

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ ||

সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লায় হিন্দু গ্রামে হামলা, ভাংচুর আর লুটপাটের উস্কানিদাতা ও প্রধান আসামী স্বাধীন মেম্বারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ১৯শে মার্চ রাত ৩টায় মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা শহরের একটি স্কুলের পাশের একটি বাড়ি থেকে শফিকুল ইসলাম ওরফে স্বাধীন মেম্বারকে গ্রেফতার করে  পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা।

স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি স্বাধীন দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের নাচনী গ্রামের বাসিন্দা এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।

মামলার প্রধান আসামী ও হামলার উসকানিদাতা স্থানীয় যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম ওরফে স্বাধীন মেম্বার।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার খালেদ উজ-জামান জানান, প্রাযুক্তিক সহায়তায় স্বাধীন মেম্বারকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে শিগগিরই সুনামগঞ্জ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হকের ২২ অনুসারীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।  তাদেরকে গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত দিরাই ও শাল্লা উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক সেলিম নেওয়াজ সাংবাদিকদের জানান- গ্রেফতার ২২জনকে পুলিশের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইসরাত জাহানের আদালতে হাজির করা হয় তাদেরকে।হিন্দুঅধ্যুষিত নোয়াগাঁওয়ে হামলা, বাড়িঘর ও মন্দির ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাঘারে পাঠানো নির্দেশ দেন বিচারক।  

থানা সূত্রে জানা যায়- হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস (৩০)। এতে মাওলানা মামুনুল হকের অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত মঙ্গলবার রাত ১১টায় ঝুমন দাসকে ধরে থানায় সোপর্দ করে। তারপরও ক্ষান্ত হয়নি তারা। পরদিন বুধবার সকালে শাল্লা ও দিরাই উপজেলার কয়েক হাজার মামুনুল অনুসারী দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র ও লাটি-সোটা নিয়ে হিন্দুদের গ্রাম নোয়াগাঁও গিয়ে ৮৭টি বাড়িঘর ও ৬টি মন্দির ভাংচুর করে। লুট করে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণলংকারসহ বিভিন্ন মালামাল।

এঘটনার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল বাদী হয়ে ১টি মামলা ও শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। এই দুই মামলায় দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের চন্দ্রপুর, নাচনী ও শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের মাওলানা মামুনুল হকের ১৬শ’ অনুসারীকে আসামী করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার উস্কানিদাতা হিসেবে মামলার প্রধান আসামী করা হয়েছে দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নাচনী গ্রামের বাসিন্দা স্বাধীন মিয়াকে। মামলায় ৭০-৮০জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে আর বাকি আসামীদেরকে অজ্ঞাত হিসেবে রাখা হয়েছে।

এই ঘটনায় হিন্দুদের মধ্যেতো বটেই যাদের আসামী করা হয়েছে তাদের গ্রামগুলোতেও আতঙ্ক আর ভয় বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে শাল্লা থানার ওসি মো. নাজমুল হক সাংবাদিকদের বলেন- গ্রেফতার ২২জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।   

সংবাদ সারাদিন