লালমনিরহাটে ইউনুস কাজীর কুকীর্তি ফাঁস করলেন স্ত্রী দাবিদার

কিছুদিন পর পর কাজী ঐ নারীর সঙ্গে সবধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ওই গৃহবধূ গোপনে রাতে কাজীর বাড়ীতে গিয়ে কাজীর সাথে দেখা করতে চাওয়ায় কাজীর লেলিয়ে দেয়া লোকজন গৃহবধূকে বেদম মারপিট করে।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, লালমনিরহাট ||

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর আলিম মাদ্রাসার সুপারিটেন্ডেন্ট ও কাজী ইউনূছ আলীর বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন তারেই দ্বিতীয় স্ত্রী দাবিদার এক নারী। ঐ নারীর অভিযোগ, তিনি পাটগ্রাম ঈমাম সমিতির সভাপতি কাজী ইউনূছ আলী ধোকার শিকার। গেলো ১৫ দিন আগে ঐ নারী স্ত্রীর স্বীকৃতি চাইতে পাটগ্রাম পৌরসভার রহমানপুর এলাকায় কাজীর বাড়ীতে যান। এসময়ে ঐ নারীকে বেধড়ক মারধর ও নির্যাতন করেন কাজী ইউনুস আলী।

এমনসব অভিযোগ ছাড়াও ইউনুস আলী একইসঙ্গে সরকারের আইন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন চাকরি করছেন। তিনি কাজীর দায়িত্ব ছাড়াও পাটগ্রাম বুড়িমারী স্থলবন্দর আলিম মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট পদেও অধিষ্ঠিত রয়েছেন। সরকারি বিধিমতো যা তিনি করতে পারেন না।

বছরের পর বছর ধরে এভাবে দুটো চাকরি করার পেছনে কোন জোর কাজ করতে তাও খতিয়ে দেখার দাবি রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। তার খুঁটির জোড় কোথায় সেটা বের করতে প্রশাসনিক তদন্তও দাবি করেছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালে একাধিক বিয়ের কাবিননামা রেজিস্ট্রার ভলিয়ম কেটে জালিয়াতি করে দেনমোহর কম-বেশি করার অপরাধে ইউনুস আলীকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়। এছাড়াও তার অফিসে আসা নারীদের অসাহয়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের সঙ্গে শারিরীক সম্পর্কের চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে ইউনুস আলীর বিরুদ্ধে।

এমন একজন ভুক্তভোগি নারী জানান, ১৭ই জুন পাটগ্রামের বেংকান্দা গ্রামের শাহীন তাকে তালাক দেন। স্বামীর তালাক নামা হাতে পেয়ে ঐ নারী যোগাযোগ করেন কাজী অফিসে। কাজী তার অসহায়ত্বের সুযোগে বিভিন্ন কুপরামর্শ ও অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেন। সংসার জীবনে ৩ সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আবারও সংসার করতে চান সেই গৃহবধূ। তাছাড়াও বিয়ের সময় দেনমোহর ৭৫ হাজার টাকার স্থলে ৩৫ হাজার টাকা কেন লেখা হয়েছে তা কাজীর কাছে জানতে চান তালাকপ্রাপ্ত ওই গৃহবধূ। কাজী ওই সময় সদুত্তর দিতে না পারলেও গৃহবধূর মোবাইল নস্বর নিয়ে বিদায় দেন। সেই থেকে চলে তাদের কথাবার্তা। ৩ সন্তানের জননী সুন্দরী গৃহবধূর উপর নোলক দৃষ্টি পড়ে কাজীর। তালাকপ্রাপ্ত স্বামী ও স্ত্রীর সংসার একত্রিত করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন সমাজের গণ্যমাণ্য ব্যাক্তিরা। কিন্তু তার আগে কাজী ইউনূছ আলী প্রেম নিবেদন করেন ওই সুন্দরী গৃহবধূকে। বিভিন্ন ভাবে প্রলোভন দেখিয়ে কাজী ওই গৃহবধূকে তার প্রেমের ফাঁদে ফেলে। কাজীর স্ত্রী বাসায় না থাকার সুবাদে ওই গৃহবধূকে কাজী তার বাড়ীতে নিয়ে যায়। সেখানে কাজী ওযু করে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আরবী কায়দা’ বইয়ের একটা ছেড়া পাতা ছুঁয়ে গৃহবধূ’র সামনে শপথ করে শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়ে গেলো বলে সৃষ্টিকর্তার দোহাই দেন। তারপর রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ওই গৃহবধুকে নিয়ে যান। তাকে স্ত্রী’র মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলবেন এবং একসাথে সংসার করবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দেন। এ আশ্বাসবাণী দিয়ে কাজী দিনের পর দিন গৃহবধূর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন।

কিছুদিন পর পর কাজী ঐ নারীর সঙ্গে সবধরণের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ওই গৃহবধূ গোপনে রাতে কাজীর বাড়ীতে গিয়ে কাজীর সাথে দেখা করতে চাওয়ায় কাজীর লেলিয়ে দেয়া লোকজন গৃহবধূকে বেদম মারপিট করে। অমানসিক নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ’র শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়। এমনকি গৃহবধূর হাত-পা বেধে মুখে বিষ ঢেলে হত্যার চেস্টা করেন কাজীর লোকজন। এক পর্যায়ে ওই গৃহবধূ অচেতন হয়ে পড়েন। অচেতন অবস্থায় কাজীর লোকজন গৃহবধূকে রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়।

১১ই ফেব্রুয়ারি রাতে পাটগ্রাম থানা পুলিশের একটি টহল দল অচেতন গৃহবধূকে উদ্ধার করে পাটগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি করেন।

হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ কালী প্রসাদ রায় জানান, নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ পাটগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। অপমান সইতে না পেরে গৃহবধূ বিষপানও করেছিলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পুলিশের গাড়ীতে তাকে হাসপাতালে আনা হয়। অমানসিক নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে না পারায় অসুস্থতা বিবেচনা করে ক্যাথেটার লাগানো হয়। গৃহবধূকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মাওলানা ইউনূছ আলীর সাথে ফোনে কথা হলে বলেন, সুন্দরী ওই গৃহবধূ তো দূরের থাক, কোন নারীর সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই। ওই গৃহবধূ তার বিরুদ্ধে কারও প্ররোচনায় ষড়যন্ত্র করছেন। জীবনে অনেক পরিশ্রমের বিনিময় তিনি আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। নানান কারনে তারা  শক্রতা করছেন।

জেলা মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল হোসেন বলেন, আমি বাইরে ছিলাম, আমি এলাকায় আসার পর ইউনূছ আলীর ঘটনাটি শুনেছি, তবে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে।

উল্লেথ্য যে, পাটগ্রাম উপজেলার রসুলগঞ্জ গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে হাসনু আরা রিফার সাথে দহগ্রাম ইউনিয়নের নবীবর রহমানের ছেলে বাবুল হোসেনের গত বছরের ৩০শে আগস্ট বিয়ে হয়। বিয়েতে ধার্যকৃত দেনমোহর ৪ লাখ ৫ শত ২৫ টাকার স্থান কেটে জালিয়াতি করে কমিয়ে ১ লাখ ৫ শত ২৫ টাকা করা হয়। মেয়ের পরিবারের অভিযোগ ছেলে পক্ষের নিকট টাকা নিয়ে এ কাজ করেছে কাজী ইউনুস।

তৎকালীন পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক নূর কুতুবুল আলম বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা যায় ০৯ নম্বর মূল ভলিয়মের ৬৪ নম্বরের ওই বিয়ের কাবিন নামায় দেনমোহরের পরিমাণে ব্লেড দিয়ে ঘসা মাজা করে প্রকৃত সংখ্যা পরিবর্তন করে অন্য অঙ্কের সংখ্যা বসানো হয়েছে।

পাবলিক ডকুমেন্ট ঘষা মাজা বা কাটা ছেড়া করে তথ্য বিকৃত করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই এবং আইন পরিপন্থি। তিনি জ্ঞাতসারে এ কাজ করায় সরকারি আদেশ অমান্যের অপরাধে দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারায় ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।

সংবাদ সারাদিন