|| সারাবেলা প্রতিনিধি, লক্ষীপুর ||
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ল্যান্ডফোন দুর্ভোগ ও হয়রানিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। যে কারণে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিনাপয়সায় সংযোগ ও মাসিক লাইন রেন্ট নেই এমন অফারেও মিলছে না যথাযথ সাড়া। উল্টো দিন দিন কমছে ব্যবহারকারীর সংখ্যা। গ্রাহকদের অভিযোগ সংযোগ নেওয়ার পর দূর্ভোগ ও হয়রানি বাড়ছে তাদের।
বিগত ৫ বছর আগেও লক্ষীপুরের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ও সাধারণ মানুষের বাসা বাড়ির সংযোগ পিএসটিএন বা ল্যান্ডফোন গ্রাহক ছিল প্রায় ২ হাজারে মতো। বর্তমানে তা কমে ৬৩২ টিতে এসে ঠেকেছে। এর মধ্যে অনেকগুলোই এখন সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। এ কারনে মাসের পর অনাদায়ি থাকছে মাসের বিল। ক্ষতিতে পড়ছে রাষ্ট্রিয় এই প্রতিষ্ঠানটি।
বিটিসিএল লক্ষীপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৭শে ডিসেম্বর পর্যন্ত সদরে টেলিফোন সংযোগ রয়েছে মাত্র ৬৩২ টি। এর মধ্যে মুজিবর্ষ উপলক্ষে সংযোগ বিনামূল্যে ঘোষণা করার পর জেলায় নতুন ২২ টি সংযোগ নেওয়া হলেও ৬০টি সংযোগ ফেরত দিয়েছেন গ্রাহকরা।
জানা যায়, বছরের পর বছর গ্রাহক ভোগান্তির কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতার কারণে মানুষ ল্যান্ডফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন । যে কারনে অনেকটাই অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি মাসিক সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা টেলিফোন কল বিল নির্ধারণ করা হলেও গ্রাহককে ফেরাতে পারছে না বিটিসিএল।
গ্রাহকদের হয়রানি-ভোগান্তি, অনিয়মে প্রতিষ্ঠানটিতে সঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া, লোক দেখানো প্রকল্প বাস্তবায়ন, প্রকল্পের অর্থ নিয়ে নয়-ছয়, কর্মকর্তাদের তদারকি না থাকা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবসহ নানান অভিযোগের কারনে বিটিসিএলের অবস্থা এখন বেশ নাজুক।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে ভালো সার্ভিস দিতে না পারায় গ্রাহককে টানতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অপরিকল্পিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, লোকবল সংকট, লাইনম্যানদের অনিয়ম ও দায়িত্বে অবহেলা, সেবার মান বাড়াতে কোন উদ্যোগ না থাকাকেই দায়ী করছেন তারা।
তাদের মতে লক্ষীপুর পৌরসভা, সড়ক জনপথসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে ল্যান্ডফোনের তার কেটে ফেলছে। ফলে বিভিন্ন এলাকার টেলিফোন বিকল হয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যার কারণে টেলিফোন গ্রাহকেরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ফলে অধিকাংশ গ্রাহক বছরের পর বছর বিল বকেয়া রাখছেন। বর্তমানে বিটিসিএল থেকে যে অর্থ আয় হচ্ছে তার সিংহভাগই হচ্ছে ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে।
বিটিসিএলের এক কর্মকর্তা জানান, মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়ছে। আর ল্যান্ডফোনের ব্যবহার কমছে। আমরা ল্যান্ডফোনের প্রতি আগ্রহ ধরে রাখার চেষ্টা করছি। দেশের অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশের কলরেটও আগের চেয়ে কম। টেলিফোনের পাশাপাশি ডাটা সার্ভিসও এখন দেয়া হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
বিটিসিএলের লক্ষীপুর কার্যালয়ের লাইনম্যান আবদুল কাদের বলেন, অফিসে কোনো গ্রাহক তাদের অভিযোগ দেয়ার সাথে সাথে আমরা যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আমাদের লোক সংখ্যা কম। এরিয়া অনেক বড় থাকায় লাইনের ত্রুটি দূর করতে হিমশিম খেতে হয়।
সঠিক সময়ে লাইন ঠিক হয় না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো কারণে মেইন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে মেইন লাইন ঠিক না হওয়া পর্যন্ত সাব-লাইনে কাজ করা যায় না। এই সময় যদি কোনো গ্রাহক অভিযোগ করে তাহলে তখন আমরা প্রতিকার করতে পারি না। আর এইভাবে ১৫দিন থেকে ১ মাস সময় পার হয়ে যায় গ্রাহকদের টেলিফোনের লাইন সংযোগ দিতে।
কার্যালয়ের অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো: আবু তাহের বলেন, এখন গ্রাহক চাইলে যে কোন অভিযোগ আমাদের জানালে আমরা তা প্রতিকারের জন্য চেষ্টা করে থাকি। কিন্তু অনেক সমস্যার কথা আসে যেগুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া কোন ধরনের সমাধান দেওয়া সম্ভব হয়না। বড় ধরনের সমস্যা বা অভিযোগ আমাদের কাছে আসলে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিই।
উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাফর আহমদ বলেন, গ্রাহক সেবার জন্য যতটুকু সম্ভব তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তবে কিছু সমস্যা যেগুলো তাদের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়।
তবে মোবাইল ফোন যারা ব্যবহার করেন তারা টেলিফোন ব্যবহার করতে চান না। যদি তারবিহীন কর্ডলেস সিষ্টেম চালু করা হয় তা হলে সংযোগ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি হতে পারে।
সহকারী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো: মনিরুজ্জামান বলেন, লোকবল সংকটের কারণে অনেক সময়েই আমরা যথাযথ সেবা দিতে পারি না। বিষয়টি লিখিত ভাবে কর্তৃপক্ষ জানানো হয়েছে, শিগগিরই হয়তো বা এর সমাধান হয়ে যাবে। পাশাপাশি নতুন করে কেবল না বসানোর কারনে নতুন সংযোগ অনেক ক্ষেত্রে দেওয়া সম্ভব হয়না।
বর্তমানে সংযোগ ফি মওকুফ করা হয়েছে যে সব স্থানে আমাদের লাইন রয়েছে সেই সব স্থানে গ্রাহক চাইলে আমরা সংযোগ দিতে পারি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।